পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 আমার চেহারাটার একটু বর্ণনা দেই। এতক্ষণই যখন ধৈর্য ধরিয়াছেন, তখন বাকীটুকু বোঝার উপর শাকের আঁটি বই তো নয়। পরিধানে আমার লুঙ্গি, শুনিরা হাস্য করিবেন না। কারণ লুঙ্গির পরিচয় দিলে ঈর্ষার উদ্রেক হইতে পারে। টেনবাবু সম্প্রতি প্রেসিডেন্সী জেল হইতে আগমন করিয়াছেন, সঙ্গে আনিয়াছেন অতি দামী একজোড়া সিল্কের লুঙ্গি। তার একখানা হস্তগত করিয়া ফেলিয়াছিলাম এবং তাহাই ছিল আমার পরিধানে। গায়ে? বলিতেছি। গায়ে ছিল একটি হাফসার্ট। কিসের? লুঙ্গির সঙ্গে আভিজাত্যে পাল্লা দিয়া সেটি ছিল বহরমপুরী মটকার। পরিচ্ছদের পরে আমার চেহারার অর্থাৎ রূপের বর্ণনা চাহিবেন? ওটী আমাকে মাপ করিতে হইবে। নিজের রূপ বর্ণনা করিতে গিয়া লজ্জার হয়তো আমি কমাইয়া বলিতে পারি। সে বিপদে আমি নিমজ্জিত হইতে রাজী নহি। তবে আপনাদের অনুমানের জন্য একটু সাহায্য করিতেছি। একমাথা চুল, ব্যাকব্রাশ করা। আর গাল-ভাঙ্গা বদন চন্দ্রিমা। সবশেষে, মোটা নাসিকার দুই পাশের চোখ দুইটি একেবারে জবা ফুলের মত লাল। অপরিচিত লোকের প্রথমেই আমার সম্বন্ধে ধারণা হইত যে, আমি মদ্যপ, নয় তো আমি বেশ প্রচুর পরিমাণে গঞ্জিকা সেবন করিয়া থাকি। আসলে আমার চোখের উহাই ছিল স্বাভাবিক বর্ণ, নেশায় বা ক্রোধে উহা রক্তরঞ্জিত হয় নাই। চোখের এই অস্বাভাবিক রক্তিমার জন্য ছোটকাল হইতেই নানাজনের নানা কথা শুনিয়া বেশ খানিকটা মনমরা হইয়া গিয়াছিলাম। কিন্তু যেদিন মহাভারতে পাঠ করিলাম যে, কৃষ্ণার্জুন উভয়েরই চোখের রং লাল ছিল, সেদিন জীবনে যে কী আনন্দ পাইয়াছিলাম, তাহা আর কহতব্য নহে।— এহেন রূপ লইয়াই উত্তম পুরুষ সভাপতির আসন দখল করিয়া প্রায় ঘণ্টা তিনেক সভার পতিত্ব পালন করিয়াছিল।

 সভার ফলাফল যাহা হইবার তাহাই হইল। হট্টগোলের মধ্যে সভাটি শেষ হইতে পাইত; কিন্তু সভাপতি মহাশয় সেদিন এমন কৃতিত্বের পরিচয়

৭৯