করিয়া লইয়া ভূপতিদা এক সময়ে প্রস্থান করিলেন। কিছুক্ষণ পরে দেখা দিলেন মধুদা। তিনি আসিয়া জড়াইয়া ধরিলেন এবং কয়েকটি সংক্ষিপ্ত বাক্যে নিজের অভিমত প্রকাশ করিয়া গেলেন। সর্বশেষে আসিলেন স্বয়ং রবিবাবু। তিনি ঘোরপ্যাঁচের ধার ধারেন না, যাহা বলেন তাহা স্পষ্ট, শ্রোতা বা বক্তা কারো ভুল বুঝিবার বা বুঝাইবার অবকাশ থাকে না। বলিলেন——“আমাকে বসিয়ে দিয়েছ, কিন্তু তবু তোমার সভাপতিত্বের প্রশংসা না করে পারলাম না।” বলিয়া প্রশংসাটি পিঠে চাপড় দিয়া হাতে হাতে তখনই বুঝাইয়া দিলেন, বিরাট পুরুষের বিরাট থাবায় আমার ক্ষীণকায় দেহের মেরুদণ্ডটি মড়মড় করিয়া উঠিল। দমবন্ধ করিয়া ফাঁড়াটা কোন মতে সে-যাত্রা কাটাইয়া দিলাম।
মোট কথা, আমার কাছে এতটা বা ইহা প্রত্যাশা করে নাই বলিয়াই সেদিন নেতৃবর্গ আমাকে একটু প্রশংসা করিয়াছিলেন। কিন্তু আমি আমার স্বভাব ও শক্তি সম্বন্ধে বেশ একটু সজাগ ছিলাম, আমার সীমা আমি জানিতাম, তাই ঝাঁকের কই ঝাঁকে মিশিয়া যাইতে আমার একটুও সময় লাগিল না। নেতা বা চালক আমি নই, ইহা আমি জানিতাম, তাই প্রশংসা বা লোভে আমাকে অব্যাপারে কোনদিন আকৃষ্ট হইতে হয় নাই সেবারকার দীর্ঘ আট বৎসর জেল জীবনের মধ্যে।
পরের দিন সূর্য যথানিয়মে উদিত হইল। ফিণী সাহেব অফিসে আসিতেই ভূপতিদা জন ষাটের একটি তালিকা লইয়া তাঁহার সঙ্গে সাক্ষাৎ করিলেন এবং এই ষাট জনের প্রতিনিধি হিসাবে একটা আলাদা চৌকা বা রান্নাঘর আদার করিলেন। ইহাই হইল দুই নম্বর চৌকা বা যুগান্তর-কিচেন। নৃপতিদা হইলেন তাহার প্রথম ম্যানেজার।
অতঃপর পঞ্চাননবাবু ঐ একই পদ্ধতিতে ফিণী সাহেবের নিকট জন পঞ্চাশেকের জন্য একটি রান্নাঘর আদায় করিলেন, ইহাই হইল তিন নম্বর চৌকা বা থার্ডপার্টি-কিচেন।
৮৩