পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 বাদ বাকী জন পঁয়তাল্লিশের ভার লইয়া এক নম্বর রান্নাঘর, ইহাই হইল অনুশীলন-কিচেন, ক্ষিতীশ ব্যানার্জী হইলেন ইহার প্রথম ম্যানেজার। হাঁড়ি ভাগ সুসম্পন্ন হইল।

 দেশবিভাগ অর্থাৎ হাঁড়িভাগের পরবর্তী প্রতিক্রিয়াটিও সুসম্পন্ন হইতে বিলম্ব হইল না, অর্থাৎ লোক বিনিময়। প্রত্যেক কিচেনের বা দলের জন্য নির্দিষ্ট ব্যারাক বণ্টন হইল। লোহার খাটিয়া, বিছানাপত্তর, টেবিল-চেয়ার লইয়া যে যাহার নির্দিষ্ট ব্যারাকে আসিয়া স্থান লইলেন। অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই ক্যাম্পে আভ্যন্তরিক বিলিব্যবস্থা এত পাকাপোক্ত ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হইল যে, কে বলিবে যে হাঁড়ি ভাগ হইয়াছে। গানবাজনা, খেলাধূলা, আলাপ-আলোচনা, থিয়েটার যাত্রা ইত্যাদিতে ক্যাম্পটি জমজমাট হইয়া উঠিল। বিভিন্ন দলের লোকদের মধ্যে এমন বন্ধুত্বও বহু ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হইল, দেখিয়া বুঝিবার উপায় ছিল না যে ইহারা বিভিন্ন পার্টির মেম্বর। সে-বন্ধুত্ব কয়েকটি ক্ষেত্রে চিরস্থায়ী বন্ধুত্বেই পরিণত হইয়াছে। হাঁড়ি ভাগ করিয়া খারাপ হয় নাই, ইহা প্রমাণিত হইয়া গেল এবং হাঁড়িভাগে উত্তম পুরুষের যে অংশটুকু ছিল, তার জন্য আর আমার লজ্জিত হইবার কোন কারণই রহিল না।

 ঠাকুর রামকৃষ্ণ বলিয়াছিলেন, সাধু আগে কোঠি পাকড়াও, তারপর সহরের আড়ং দেখিতে বাহির হও। অর্থাৎ বাসা ঠিক করিয়া তারপর অন্য কাজে হাত দিতে তিনি বলিয়াছিলেন। সেই উপদেশটাই এ-ক্ষেত্রে আমরা অনুসরণ করিয়াছিলাম। যার যেথা স্থান সেটুকু আগে ঠিক করিতে ও দিতে হয়। তারপর স্বস্থানে বা স্বাভাবিক স্থানে প্রতিষ্ঠিত হইলে লোকের মনও হাত-পা মেলিবার অবকাশ পায়। নতুবা কেবল সংঘর্ষ, কেবল কলহ ইত্যাদিতে জীবনের সমস্ত শান্তি নষ্ট হইয়া যায়। হাঁড়িভাগ করিয়া বক্সার বন্দিরা স্বাভাবিক স্থানে প্রতিষ্ঠিত হইল এবং ক্যাম্পের বন্দিদের নিজেদের মধ্যেকার প্রাত্যহিক জীবনে শান্তি ও আনন্দও অব্যাহত হইল।

৮৪