পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

একটু ভাবিয়া দেখিলেই বুঝিতে পারিবেন। আমিও প্রথম দেখাতেই বুঝিয়া লইলাম যে, এই ভদ্রলোক শুধু লোক নহেন, তিনি বিশেষ লোক। সবল স্বাস্থ্য ও দৃঢ়গঠন দেখিয়া দ্বিতীয় আর একটি অনুমানে উপনীত হইলাম যে, প্রচুর প্রাণশক্তি লোকটির ভিতরে মজুত রহিয়াছে।

 অনুমান ছাড়িয়া ভদ্রলোকের জাগতিক পরিচয় একটু দেওয়া যাইতেছে। ডেপুটি-ম্যাজিস্ট্রেটের ছেলে, এম-এস-সি পরীক্ষা না দিয়া গান্ধীজীর অসহযোগ আন্দোলনে যোগদান করেন, বরিশালের তরুণ-সম্প্রদায়ের একজন নেতা বলিয়া গৃহীত হন, ডাকনাম রুণুবাবু, পোনাকী নাম শৈলেন দাশগুপ্ত। ১৯২৪ সালে সরকার তাঁহাকে বরিশাল হইতে বহিষ্কার করিয়া দেন এবং বিদায়কালে জানাইয়া দেন যে, তাঁহার মত অবাঞ্ছিত ও সন্দেহজনক চরিত্রের লোক যেন বরিশালের ত্রিসীমানার মধ্যে পা না দেন, দিলে ভালো হইবে না। এক কথায়—Take care. ভদ্রলোক সেই হইতে কৃষ্ণনগরের স্থায়ী বাসিন্দা হইয়াছেন।

 বিকালের দিকে পঞ্চাননবাবু বলিলেন, “চল, এক ভদ্রলোকের সঙ্গে আলাপ করবি। এক সঙ্গে কৃষ্ণনগর জেলে ছিলাম।”

 পঞ্চাননবাবুর সঙ্গে পাঁচনম্বর ‘বি’ ব্যারাকে গিয়া ঢুকিলাম। কোণার দিকে সীটে আগাইতে আগাইতে পঞ্চাননবাবু ডাকিয়া বলিলেন, “প্রভু, এই আমার বন্ধু অমলেন্দু।”

 “আস্তে আজ্ঞা হোক,” বলিয়া রুণুবাবু হাতের তক্‌লী রাখিয়া উঠিয়া দাঁড়াইলেন। বিপ্লবী নেতা মাথা না কাটিয়া সূতা কাটেন দেখিয়া বুঝিলাম যে, গন্ধীজীর নিকট মাথাটি ইনি আপাততঃ গচ্ছিত রাখিয়াছেন।

 সব চেয়ে আশ্চর্য হইলাম এ-বেলার পোষাক দেখিয়া। রুনুবাবু তাঁর রাজপরিচ্ছদে ছিলেন। একটা দামী এণ্ডির চারদকে কাপড় বলিয়াই পরিধান করিয়াছেন, গায়ে হাত কাটা গেঞ্জি। নমস্কার বিনিময় করিয়া আসন লইলাম।

 জিজ্ঞাসা করিলেন, “তামাক খান?”

 সিগারেটেই অভ্যস্ত ছিলাম, তবু বলিলাম,—“খাই।”

৯০