পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (তৃতীয় ভাগ).djvu/১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

यांनर्णभ% s তিস্তিড়ী, খর্জুর প্রভৃতি খামল পল্লবরাজি অল্প অল্প প্রভাসিত হইতে লাগিল ; কোথাও পাতা আলোতে জলিতে লাগিল, কোথাও ঘাস উজ্জ্বল হইল ; কোথাও অন্ধকার আরও গাঢ় হইল । অগ্নি প্রস্তুত হইলে এক জন শবের পা ধরিয়া টানিয়া আগুনে ফেলিতে গেল । তখন আর এক জন বলিল, “রাখ, রও রও, যদি মহামাংস খাইয়াই আজ প্রাণ রাখিতে হইবে, তবে এই বুড়ার শুক্‌না মাংস কেন খাই ? আজ যাহ লুঠিয়া আনিয়াছি, তাহাই খাইব, এস, ঐ কচি মেয়েটাকে পোড়াইয়। খাই ।” আর এক জন বলিল, “যাহা হয় পোড়া বাপু, আর ক্ষুধ সয় না ।” তখন সকলে লোলুপ হইয়া, সেখানে কল্যাণী কন্যা লইয়। শুইয়াছিলেন, সেই দিকে চাহিল । দেখিল যে, সে স্থান শূন্ত, কন্যা ও নাই, মাতাও নাই । দস্থ্যদিগের বিবাদের সময় সুযোগ দেখিয়া, কল্যাণী কন্য কোলে করিয়া, কন্যার মুখে স্তনটি দিয়া, বনমধ্যে পলাইয়াছেন ৷ শীকার পলাইয়াছে দেখিয়া ‘মার মার’ শব্দ করিয়৷ সেই প্রেতমূৰ্ত্তি দম্বাদল চারিদিকে ছুটিল । তালস্থাবিশেষে মনুষ্য হিংস্ৰ জন্থমাল । - চতুর্থ পরিচ্ছেদ বন অত্যস্ত অন্ধকার, কল্যাণী তাহার ভিতর পথ পায় না । বৃক্ষলতাকণ্টকের ঘন বিদ্যাসে একে পথ নাই, তাহাতে আবার ঘনান্ধকার । কণ্টক ভেদ করিয়া কল্যাণী বনমধ্যে প্রবেশ করিতে লাগিলেন । মেয়েটির গায়ে কাট ফুটিতে লাগিল । মেয়েটি মধে। মধ্যে র্কাদিতে লাগিল, শুনিয়া দসু্যরা আরও চীৎকার করিতে লাগিল । কল্যাণী এইরূপে রুধিরাক্ত কলেবর হইয়া অনেক দূর বনমধ্যে প্রবেশ করিলেন । কিয়ংক্ষণ পরে চন্দ্রোদয় হইল, এতক্ষণ কল্যাণীর মনে কিছু ভরসা ছিল যে, অন্ধকারে তাহাকে দস্থ্যরা দেখিতে পাইবে না, কিয়ৎক্ষণ খুজিয়ী নিরস্ত হুইবে ; কিন্তু এক্ষণে চন্দ্রোদয় হওয়ায় সে ভরসা গেল । চাদ আকাশে উঠিয়া বনের মাথার উপর আলো ঢালিয়। দিল—ভিতরে বনের অন্ধকার আলোতে ভিজিয়া উঠিল । অন্ধকার উজ্জ্বল হইল । মাঝে মাঝে ছিদ্রের ভিতর দিয়া আলো বনের ভিতরে প্রবেশ করিয়া উকিঝুকি মারিতে লাগিল, চাদ যত উচুতে উঠিতে লাগিল, তত আরও আলো বনে ঢুকিতে লাগিল, অন্ধকারসকল আরও বনের ভিতর লুকাইতে লাগিল । কল্যাণী কণ্ঠ লইয়। আরও বনের ভিতর چ-سgت 俄 লুকাইতে লাগিলেন। তখন দস্থ্যর আরও চীৎকার করিয়া চারিদিক হইতে চুটিয়া আসিতে লাগিল— কন্যাটি ভয় পাইয়া আরও চীৎকার করিয়া কঁাদিতে লাগিল । কল্যাণী তখন নিরস্ত হইয়া আর পলায়নের চেষ্টা করিলেন না; এক বৃহৎ বৃক্ষতলে কণ্টকশূন্ত তৃণময় স্থানে বসিয়া কন্যাকে ক্রোড়ে করিয়া কেবল ডাকিতে লাগিলেন, “কোথায় তুমি ! যাহাঁকে আমি নিত্য পূজা করি, নিত্য নমস্কার করি, র্যাহার ভরসায় এই বনমধ্যেও প্রবেশ করিতে পারিয়াছিলাম, কোথায় তুমি হে মধুসূদন " এই সময়ে ভয়ে, ভক্তির প্রগ+ ঢ়তায়, ক্ষুধাতৃষ্ণার অবসাদে কল্যাণী ক্রমে বাহ্যজ্ঞান-- শুষ্ঠ, আভ্যন্তরিক চৈতন্যময় হইয়া শুনিতে লাগিলেন, অন্তরীক্ষে স্বগীয় স্বরে গীত হইতেছে— “হরে মুরারে মধুকৈটভারে : গোপাল গোবিন্দ মুকুন্দ শৌরে ! হরে মুরারে মধুকৈটভারে ". কল্যাণী বাল্যকালাবধি পুরাণে শুনিয়াছিলেন যে, দেবর্ষি গগনপথে বীণাযন্ত্রে হরিনাম করিতে করিতে ভুবন ভ্রমণ করিয়া থাকেন, তাহার মনে সেই কল্পন। জাগরিত হইতে লাগিল । মনে মনে দেখিতে লাগিলেন শুভ্ৰশরীর, শুভ্রকেশ, শুভ্রশ্মশ্র, শুভ্র বসন, মহাশরীর মহামুনি বীণাহস্তে চন্দ্রালোক-প্রদীপ্ত নীলাকাশপথে গায়িতেছেন – “হরে মুরারে মধুকৈটভারে !" - ক্রমে গাত নিকটবৰ্ত্তী হইতে লাগিল, আরও স্পষ্ট শুনিতে লাগিলেন,— “হরে মুরারে মধুকৈটভারে !” ক্রমে আরও নিকট-আরও স্পষ্ট “হরে মুরারে মধুকৈটভারে ।” শেষে কল্যাণীর মাথার উপর বনস্থলী প্রতিধ্বনিত করিয়া গীত বাজিল,— “হরে মুরারে মধুকৈটভারে !" কল্যাণী তখন নয়নোন্মীলন করিলেন । সেই অৰ্দ্ধস্ফুট বনান্ধকারবিমিশ্র চন্দ্ররশ্মিতে দেখিলেন, সম্মুখে সেই শুভ্ৰশরীর, শুভ্রকেশ, শুভ্রশ্মশ্র, শুভ্ৰবসন ঋষিমূৰ্ত্তি । অন্তমনে তথাভূতচেতনে কল্যাণী মনে করিলেন, প্রণাম করিব, কিন্তু প্রণাম করিতে পারিলেন না, মাথা নোয়াইতে একেবারে চেতনাশূন্ত হইয়া ভূতলশায়ী হইলেন ।