পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (তৃতীয় ভাগ).djvu/১৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫৬ : কাজে কাজেই তাহার হস্তগত হইবেন । সুতরাং অনুচরবর্গকে বেগম-সম্বন্ধে কোন বিশেব উপদেশ প্রদান করা অবিখ্যক বিবেচনা করেন নাই ; পরে যখন মহম্মদ তকি দেখিলেন, নিহত ইংরেজদিগের নৌকায় বেগম নাই, তখন তিনি বুঝিলেন যে, বিষম বিপদ উপস্থিত। র্তাহার শৈথিল্যে বা অমনোযোগে নবাব রুষ্ট হইয়া কি উৎপাত উপস্থিত করিবেন, তাহা বলা যায় না। এই আশঙ্কায় ভীত হইয়া, মহম্মদ তকি সাহসে ভর করিয়া নবাবকে বঞ্চনা করিবার কল্পনা করিলেন । লোকপরম্পরায় তখন শুনা যাইতেছিল যে, যুদ্ধ আরম্ভ হইলেই ইংরেজের মীরজাফরকে কারামুক্ত করিয়া পুনৰ্ব্বার মসনদে বসাইবেন । যদি ইংরেজের যুদ্ধজয়ী হয়েন, তবে মীর কাসেম এ প্রবঞ্চন। শেষে জানিতে পারিলেও কোন ক্ষতি হুইবে না। আপাততঃ বাচিতে পারিলেই অনেক লাভ । পরে যদি মীর কাসেম জয়ী হয়েন, তবে তিনি বাহাতে প্রকৃত ঘটন। কখনও না জানিতে পারেন, এমন উপায় করা যাইতে পারে। আপাততঃ কোন কঠিন আজ্ঞান আসে । এইরূপ দুরভিসন্ধি করিয়া তকি এই রাত্রে নবাবের সমীপে মিথ্যাকথাপরিপূর্ণ এক আরজি পাঠাইতেছিলেন । মহম্মদ তকি নবাবকে লিখিলেন যে, বেগমকে আমিয়টের নৌকায় পাওয়া গিয়াছে। তকি তাহাকে আনিয়। যথাসম্মানপূর্বক কেল্লার মধ্যে রাখিয়াছেন । কিন্তু বিশেষ আদেশ ব্যতীত তাহাকে হুজুরে পাঠাইতে পারিতেছেন না। ইংরেজদিগের সঙ্গী, খানসাম, নাবিক, সিপাহী প্রভৃতি যাহার। জীবিত আছে, তাহাদের সকলের প্রমুখীং শুনিয়াছেন যে, বেগম আমিয়টের উপপত্নীস্বরূপ নৌকায় বাস করিতেন । উভয়ে এক শয্যায় শয়ন করিতেন । বেগম স্বয়ং এ সকল কথ। স্বীকার করিতেছেন । তিনি এক্ষণে খৃষ্টধৰ্ম্মাবলম্বন করিয়াছেন । তিনি মুঙ্গেরে যাইতে অসম্মত । বলেন, “আমাকে ছাড়িয়া দাও । আমি কলিকাতায় গিয়। আমিধুট সাহেবের সুহৃদ গণের নিকট বাস করিব। যদি মুঙ্গেরে পাঠাও, তবে আত্মহত্যা করিব ’ এমন অবস্থায় তাহাকে মুঙ্গেরে পাঠাইবেন, কি এখানে রাখিবেন, কি ছাড়িয় দিবেন, তদ্বিষয়ে আজ্ঞার প্রত্যাশায় রহিলেন । আজ্ঞাপ্রাপ্ত হইলে তদনুসারে কার্য্য করিবেন তকি এই মৰ্ম্মে পত্র লিখিলেন । অশ্বারোহী দুত সেই রাত্রেই এই পত্র লইয়া মুঙ্গেরে যাত্রা করিল। বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী কেহ কেহ বলে, দূরবর্তী অজ্ঞাত অমঙ্গল ঘটনাও আমাদিগের মন জানিতে পারে। এ কথা ষে সত্য, এমন নহে ; কিন্তু যে মুহূৰ্ত্তে মুরশিদাবাদ হইতে অশ্বারোহী দূত দলনীবিষয়ক পত্র লইয়া মুঙ্গেরে যাত্রা করিল,সেই মুহূর্তে দলনীর শরীর রোমাঞ্চিত হইল,সেই মুহুর্তে তাহার পাশ্বস্থ বলিষ্ঠ পুরুষ প্রথম কথা কহিল। তাহার কণ্ঠস্বরে হউক, অমঙ্গলস্থচনায় হউক, যাহাতে হউক, সেই মুহূৰ্ত্তে দলনীর শরীর কণ্টকিত হইল । পাশ্ববৰ্ত্তী পুরুষ বলিল, “তোমায় চিনি, তুমি দলনী বেগম।” দলনী শিহরিল। পাশ্বস্থ পুরুষ পুনরপি কহিল, “জানি, তুমি এই বিজন স্থানে জরাত্মা কর্তৃক পরিত্যক্ত হইয়াছ।” দলনীর চক্ষের প্রবাহ আবার ছুটিল । অগিস্তুক কহিল, “এক্ষণে তুমি কোথায় যাইবে ?” সহসা দলনীর ভর দূর হইয়ছিল । ভয়-বিনাশের দলনী বিশেষ কারণ পাইয়াছিল । দলনী কঁদিল । প্রশ্ন কৰ্ত্ত প্রশ্ন পুনরুক্ত করিলেন । দলনী বলিল, “ধাইব কোথায় ? আমার যাইবার স্থান নাই । এক যাইবার স্থান আছে কিন্তু সে অনেক দূর, কেআমাকে সেখানে লইয়। যাইবে ?" আগন্তুক বলিলেন, “তুমি যাইবার বাসন পরিত্যাগ কর ?" দলনী উৎকণ্ঠিত, বিঘ্নিত হইয়। বলিলেন,"কেন ?" “অমঙ্গল ঘটিবে ।” দলনী শিহরিল, “ঘটুক । সেই বৈ আর আমার নবাবের নিকটে স্থান মাই ! অন্যত্র মঙ্গলাপেক্ষ স্বামীর কাছে অমঙ্গলও ভাল ” “তবে উঠ। আমি তোমাকে মুরশিদাবাদে মহম্মদ তকির নিকট রাখিয়| আসি । মহম্মদ তকি তোমাকে মুঙ্গেরে পাঠাইয় দিবেন । কিন্তু আমার কথা শুন । এক্ষণে যুদ্ধ আরম্ভ হইয়াছে । নবাব স্বীয় পৌরজনকে রুহিদাসের গড়ে পাঠাইবার উদ্যোগ করিতেছেন । তুমি সেখানে যাইও না ।” “আমার কপালে যাই থাকুক, আমি যাইব ।” “তোমার কপালে মুঙ্গের-দর্শন নাই।” দলনী চিন্তিত হইল । বলিল, “ভবিতব্য কে জানে ? চলুন, আপনার সঙ্গে মুরশিদাবাদ যাইব । যতক্ষণ প্রাণ অাছে, নবাবকে দেখিবার আশ ছাড়িব না।” আগন্তুক বলিলেন, “তাহ জানি। আইস ।” দুই জনে অন্ধকার রাত্রে মুরশিদাবাদে চলিল । দলনীপতঙ্গ বহ্নিমুখবিবিক্ষু হুইল। "


جامعہ حمص سسیمہ سے بے