পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (তৃতীয় ভাগ).djvu/২১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেবী চৌধুরাণী ব্রজ হাসিয়া বলিল, “মুখখানি. একে অমাবস্তার রাত্রি, তাতে মেঘ-ঝড় ছাড়া নেই-দেখিতে বড় সাধ নেই।” ব্ৰহ্ম । তা মরুকৃ গে, সে নয়ান বউ বুঝবে—তুই খাসনে কেন ? বঙ্গ । তুমি যে রাধ ! ব্ৰহ্ম । আমি ত চিরকাল এমনি রাধি । ব্রজ । আজকাল হাত পেকেছে : ব্ৰহ্ম ৷ দুধও বুঝি আমি রাধি ? সেটাও কি রান্নার দোষ ? ব্রজ । গরুগুলোর দুধ বিগড়ে গিয়েছে । ব্ৰহ্ম । তুই হঁ। ক’রে রাত-দিন ভাবিস কি ? ব্রজ । কবে তোমায় গঙ্গায় নিয়ে যাব ! বহ্ম । আর তোর বড়ায়ে কাজ নেই । মুখে অমন অনেকে বলে । শেলে এই নিমগাছের তলায় আমায় গঙ্গায় দিবি --তুলসীগাছটাও দেখতে পাব না ! তা তুই ভাব ন৷ ষা হয় –কিন্তু তুষ্ট আমার গঙ্গা ভেবে ভেবে অত রোগী হয়ে গেলি কেন ? রঙ্গ ; ওটা কি কম ভাবন ? ব্রহ্ম । কা’ল নাইতে গিয়ে রাণায় বসে কি ভাই ভাবছিলি ? চোখ দিয়ে জল পড়ছিল কেন ? ব্রজ । ভাবছিলাম যে, স্নান করেষ্ট ভোমার রান্না খেতে হবে । সেষ্ট দুঃখে চোখে জল এসেছিল । ব্ৰহ্ম ৷ সাগর এসে রেধে দিবে ? তা হ'লে খেতে পাবৃবি ত ? ব্রজ । কেন, সাগর ত রোজ রাপিত ? খেলাঘরে যাওনি কোন দিন ? ধূলা-চড়চড়ী, কাদার মুক্ত, ইটের ঘণ্ট—এক দিন আপনি খেয়ে দেখ না—তার পর আমায় খেতে ব'লো । ব্ৰহ্ম ৷ প্রফুল্ল এসে রেধে দিবে ? যেমন পথে কেহ প্রদীপ লইয়। যখন চলিয়া যায়, তখন পথিপাশ্বস্থ অন্ধকার ঘরের উপর সেই আলে৷ পড়িলে, ঘর একবার হাসিয়া আবার তখনই আঁধার হয়, প্রফুল্লের নামে ব্রজেশ্বরের মুখ তেমনই হইল । ব্রজ উত্তর করিল, “বাগদী যে !” ব্ৰহ্ম । বাগদী না। সবাই জানে, সে মিছে কথা । তোমার বাপের কেবল সমাজের ভয়, ছেলের চেয়ে কিন্তু সমাজ বড় নয়। কথাটা কি আবার পাড়ব ? ব্রজ । না, আমার জন্ত সমাজে আমার বাপের অপমান হবে—তাও কি হয় ? সে দিন আর বেশী কথা হইল না। ব্ৰহ্মঠাকু রাণীও সবটুকু বুঝিতে পারিল না। কথাটা বড় সোজা ○類一ー&ピ Rot নয়। প্রফুল্লের রূপ অতুলনীয়,-একে দ্য রূপেই সে ব্রজেশ্বরের হৃদয় অধিকার করিয়া ষসিয়াছিল, আবার সেই এক দিনেই বজেশ্বর দেখিয়াছিল, প্রফুল্পের বাহির অপেক্ষ ভিতর আরও স্বন্দর, আরও মধুর – যদি প্রফুল্ল বিবাহিত স্ত্রী—স্বাধিকার প্রাপ্ত হইয়া নয়নতারার মত কাছে থাকিত, তবে এই উন্মাদকর মোহ সুস্নিগ্ধ স্নেহুে পরিণত হইত, রূপের মোহ কাটিয়া যাইত, গুণের মোহ থাকিষ যাইত । কিন্তু তা হুইল না। প্রফুল্ল বিদ্যুৎ একবার চমকাইয়া চিরকালের জন্য অন্ধকারে মিশিল, সেই জন্য সেই মোহ সহস্ৰগুণে বল পাইল। কিন্তু এ ত গেল সোঙ্গ কথা । কঠিন এই যে, ইহার উপর দারুণ করুণ। সেই সোণার প্রতিমাকে তাহার অধিকারে বঞ্চিত করিম, অপমান করিয়া, মিথ্যা অপবাদ দিয়া, চিরকালের জন্য বহিষ্কৃত করিয়া দিতে হইয়াছে । সে এখন অন্নের কাঙ্গাল ! বুঝি, না খাইয়৷ মরিয়া যাইবে । তখন সেই প্রগাঢ় অনুরাগের উপর এই গভীর করুণ।--তখন মাত্র পূর্ণ। ব্রজেশ্বরের হৃদয় প্রফুল্লময়—আর কিছুরই স্তান নাই । বৃউী এত কথায়'ও বুঝিল না । কিছু দিন পরে ফুলমণি নাপিতানীর প্রচারিত প্রফুল্লের তিরোধান-বৃত্তস্ত হরবল্লভের গৃহে পৌছিল । গল্প মুখে মুখে বদল হইতে হইতে চলে। সংবাদটা এখানে এরূপ আকারে পৌছিল যে, প্রফুল্ল বাতাশ্লেষ্মবিকারে মরিয়াছো-মৃত্যুর পূৰ্ব্বে তার মরা মাকে দেখিতে পাইয়াছিল । ব্ৰজেশ্বরও শুনিল । হরবল্লভ শৌচ স্নান করিলেন, কিন্তু শ্ৰাদ্ধাদি নিষেধ করিলেন । বলিলেন, “বাগদীর শ্রাদ্ধ বামনে করিবে ?" নয়নতারাও স্নান করিল-মাথা মুছিয়া বলিল, “একটা পাপ গেল—অার একটার জন্য এই নাওয়াটা নাইতে পারিলেই শরীর জুড়ায়।” কিছু দিন গেল। ক্রমে ক্রমে শুকাইয়। শুকাইয়া ব্ৰজেশ্বর বিছান। লইল । রোগ এমন কিছু নয়, একটু একটু জর হয় মাত্র। কিন্তু ব্ৰজ নিজ্জীব, শয্যাগত । বৈদ্য দেখিল । ঔষধপত্রে কিছু হইল না,—রোগ বৃদ্ধি পাইল । শেষ ব্রজেশ্বর বঁাচে না বঁাচে । আসল কথা আর বড় লুকান রহিল না। প্রথমে বুড়ী বুঝিয়াছিল, তার পর গিল্পী বুঝিলেন । এ সকল কথ। মেয়েরাই আগে বুঝে। গিয়ী বুঝিলেন, কাজেই কৰ্ত্ত বুঝিলেন । তখন হরবল্লভের বুকে শেল বিঁধিল । হরবল্লভ কাদিতে কঁাদিতে বলিল, “ছি ! ছি ! কি করিয়াছি ! আপনার পায়ে আপনি কুড়ল মারিয়াছি।” গিল্পী প্রতিজ্ঞা করিলেন, "ছেলে না বাচিলে