পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (তৃতীয় ভাগ).djvu/২৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 R আবৃতা—কিন্তু ইহার তা কিছুই নাই। দেৰী ব্রজেশ্বরের সঙ্গে সাক্ষাতের ভরসায় বহুমূল্য বস্ত্রীলঙ্কারে ভূষিত হইয়াছিলেন, ইহা আমরা পূর্বেই দেখিয়াছি। কিন্তু সাক্ষাতের সময় উপস্থিত হইলে, সকলই ত্যাগ করিয়া সামান্য বস্ত্র পরিয়া হাতে । একখানিমাত্র সামান্ত অলঙ্কার রাখিয়া ব্ৰজেশ্বরের প্রতীক্ষা করিতেছিল ; প্রথমে নিশির বুদ্ধিতে দেবী ভ্ৰমে পড়িয়াছিল। শেষে বুঝিতে পারিয়া আপন আপনি তিরস্কার করিয়াছিল, “ছি ! ছি:! ছি ! কি করিয়াছি ! ঐশ্বৰ্য্যের ফঁাদ পাতিয়াছি।” তাই এ বেশপরিবর্তন । ব্ৰজেশ্বরকে পৌছাইয়া দিয়া নিশি চলিয়া গেল । ব্ৰজেশ্বর প্রবেশ করিলে দেবী গাত্ৰোখান করিয়৷ ব্ৰজেশ্বরকে প্রণাম করিল । দেখিয়া ব্ৰঞ্জেশ্বর আরও বিস্মিত হইল-কই, আর কেহ ত প্রণাম করে নাই । দেবী তখন ব্রজেশ্বরের সম্মুখে দাড়াইল—ব্রজেশ্বর দেখিল, যথার্থ দেবীমূৰ্ত্তি ! এমন আর কখন দেখিয়াছে কি ? হুঁ, ব্রজ আর একবার এমনই দেখিয়াছিল। সে আরও মধুর,-কেন না, দেবীমূৰ্ত্তি তখন বালিকার মূৰ্ত্তি—ব্রজেশ্বরের তখন প্রথম যৌবন। হায়! এ যদি সেই হইত ! এ মুখ দেখিয়া ব্রজেশ্বরের সে মুখ মনে পড়িল, কিন্তু দেখিলেন, এ মুখ সে মুখ নহে । তার কি কিছুই এতে নাই ? অাছে বই কি—কিছু আছে। ব্রজেশ্বর তাই অবাক হইয়া দেখিতে লাগিল । সে ত অনেক দিন মরিয়া গিয়াছে —তবে মানুষে মামুষে কখন কখন এমন সাদৃশ্ব থাকে • যে, এক জনকে দেখিলে আর এক জনকে মনে পড়ে । এ তাই না ব্ৰজ ? ব্ৰজ তাই মনে করিল। কিন্তু সেই সাদৃষ্ঠে হৃদয় ভরিয়া গেল—ব্রজের চক্ষে জল আসিল, পড়িল না । • তাই দেবী সে জল দেখিতে পাইল না । দেখিতে পাইলে আজ একটা কাগুকারখানা হইয়া যাইত । দুইখানা মেঘেই বৈদ্যুতি ভরা । প্রণাম করিয়া, নিম্ননয়নে দেবী বলিতে লাগিল, “আমি আপনাকে আজ জোর করিয়া ধরিয়া আনিয়া বড় কষ্ট দিয়াছি। কেন এমন কুকৰ্ম্ম করিয়াছি, শুনিয়াছেন । আমার অপরাধ লইবেন না ।” ব্ৰজেশ্বর বলিল, “আমার উপকারই করিয়াছেন।” বেশী কথা বলিবার ব্রজেশ্বরের শক্তি নাই । দেবী আরও বলিল, “আপনি আমার এখানে দয়া করিয়া জলগ্ৰহণ করিয়াছেন, তাহাতে আমার বড় মৰ্য্যাদা বাড়িয়াছে। আপনি কুলীন—আপনারও মৰ্য্যাদা রাখা আমার কর্তব্য। আপনি আমার কুটুম্ব। বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী যাহা মৰ্য্যাদাস্বরূপ আমি আপনাকে দিতেছি, তাহ গ্ৰহণ করুন।" ত্র। স্ত্রীর মত কোন ধন ? আপনি তাই আমাকে দিয়াছেন, ইহার বেশী আর কি দিবেন ? ও ব্রজেশ্বর ! কি বলিলে ? স্ত্রীর মত ধন আর নাই ? তবে বাপবেটায় মিলিয়া প্রফুল্লকে তাড়াইয়া দিয়াছিলে কেন ? পালঙ্কের পাশে একটি রূপার কলসী ছিল, তাহা টানিয়া বাহির করিয়া,দেবী ব্রজেশ্বরের নিকটে রাখিল, বলিল, “ইহাই গ্রহণ করিতে হুইবে ।” ব্র । আপনার বজরায় এত সোনা-রূপার ছড়া ছড়ি যে, এই কলসীটা নিতে আপত্তি করিলে সাগর আমায় বকিবে । কিন্তু একটা কথা আছে— কথাটা কি, দেবী বুঝিল, বলিল,--“আমি শপথ করিয়া বলিতেছি, এ চুরি-ডাকাইতির নহে। আমার নিজের কিছু সঙ্গতি আছে—শুনিয়া থাকিবেন । অতএব গ্রহণপক্ষে কোন সংশয় করিবেন না 7 ব্ৰজেশ্বর সন্মত হইল—কুলীনের ছেলের আর অধ্যাপক ভট্টাচার্য্যের ‘বিদায়’ বা "মৰ্য্যাদা’ গ্রহণে লজ্জ৷ ছিল না—এখনও বোধ হয়, নাই । কলসীটা বড় ভারী ঠেকিল, ব্রজেশ্বর সহজে তুলিতে পারিল না। বলিল, “এ কি এ ? কলসীটা নিরেট না কি ?” দেবী । টানিবার সময়ে উহার ভিতর শব্দ হইয়াছিল—নিরেট সম্ভবে না । ব্র । তাই ত ? এতে কি আছে ? কলসীতে ব্ৰজেশ্বর হাত পূরিয়া তুলিল—মোহর । কলসী মোহরে পরিপূর্ণ। ব্র । এগুলি কিসে ঢালিয়া রাখিব ? দেবী । চালিয়। রাখিবেন কেন ? এগুলি সমস্তই আপনাকে দিয়াছি। ত্র । কি ? দেবী । কেন ? ব্র । কত মোহর আছে ? দেবী তেত্রিশ শ । ব্র । তেত্রিশ শ মোহরে পঞ্চাশ হাজার টাকার উপর । সাগর আপনাকে টাকার কথা বলিয়াছে ? দেবী। সাগরের মুখে শুনিয়াছি, আপনার । পঞ্চাশ হাজার টাকার বিশেষ প্রয়োজন । 够 ব্র । তাই দিতেছেন ? দেবী। টাকা আমার নহে, আমার দান করিবার অধিকার নাই। টাকা দেবতার, দেবত্র আমার জিন্ম । আমি আমার দেবত্র সম্পত্তি হইতে আপনাকে এই টাক কৰ্জ দিতেছি ।