পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (তৃতীয় ভাগ).djvu/২৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8Ե জানিতে লাগিল। তাহারা সম্মুখে আসিয়া ভক্তিভাবে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করিল। যে বয়োজ্যেষ্ঠ ও ব্রাহ্মণ, সেও প্রণাম করিল,—কেন না, অনেকের বিশ্বাস ছিল যে, দেবী ভগবতীর অংশ, লোকের উদ্ধারের জন্য অবতীর্ণ । সেই জন্য কেহ কখন তার সন্ধান ইংরেজের নিকট বলিত না, অথবা তাহার গ্রেপ্তারির সহায়তা করিত না। দেবী সকলকে মধুর ভাষায় সম্বোধন করিয়া, তাহাদের নিজ নিজ অবস্থার পরিচয় লইল । পরিচয় লইয়া যাহার যেমন অবস্থা, তাহাকে সেইরূপ দান করিতে লাগিলেন। নিকটে টাকাপোরা ঘড়া সব সাজান ছিল । এইরূপ প্রাতঃকাল হইতে সন্ধ্যা পর্য্যন্ত দেবী দরিদ্রদিগকে দান করিলেন। সন্ধ্যা অতীত হইয়৷ এক প্রহর রাত্রি হইল। তখন দান শেষ হইল। তখন পর্য্যন্ত দেবী জলগ্ৰহণ করেন নাই। দেবীর ডাকাইতি এইরূপ—অন্য ডাকাইতি नाइँ । কিছুদিনমধ্যে রঙ্গপুরে গুডল্যাড সাহেবের কাছে সংবাদ পৌছিল যে, বৈকুণ্ঠপুরের জঙ্গলমধ্যে দেবী চৌধুরাণীর ডাকাইতির দল জমায়েতবস্ত হইয়াছে—ডাকাইতের সংখ্যা নাই। ইহাও রটিল যে, অনেক ডাকাইত রাশি রাশি অর্থ লইয়া ঘরে ফিরিয়া আসিতেছে—অতএব তাহারা অনেক ডাকাইতি করিয়াছে, সন্দেহ নাই । যাহারা দেবীর নিকট দান পাইয়া ঘরে অর্থ লইয়৷ আসিয়াছিল, তাহারা সব মুনকির—বলে, টাকা কোথা ? ইহার কারণ, ভয় আছে, টাকার কথা শুনিলেই ইজারাদারের পাইক সব কাড়িয়া লইয়া যাইবে । অথচ তাহারা খরচপত্র করিতে লাগিল— সুতরাং সকল লোকেরই বিশ্বাস হইল যে, দেবী চৌধুরাণী এবার ভারি রকম লুঠিতেছে। দ্বাদশ পরিচ্ছেদ যথাকালে পিতৃসমীপে উপস্থিত হইয়া ব্রজেশ্বর র্তাহার পদবন্দনা করিলেন । হরবল্লভ অন্তান্ত কথার পর জিজ্ঞাসা করিলেন, “আসল সংবাদ কি ? টাকার কি হইয়াছে ?” ব্ৰজেশ্বর বলিল যে, তাহার শ্বশুর টাকা দিতে পারেন নাই। হরবল্লভের মাথায় বজ্রাঘাত হইল— হরবল্লভ চীৎকার করিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “তবে টাক পাও নাই ?” . বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী “ञांभांद्र श्रृंख्द्र छैांक निहङ श्रां८व्रन नाझे वहाँ, কিন্তু আর এক স্থানে টাকা পাইয়াছি—” হরবল্লভ | পেয়েছ ? তা আমায় এতক্ষণ বল নাই ? দুর্গা, বঁাচলেম । ত্র । টাকাট ষে স্থানে পাইয়াছি, তাহাতে সে গ্রহণ করা উচিত কি না, বলা যায় না । হর । কে দিল ? - ব্ৰজেশ্বর অধোবদনে মাথা চুলুকাইতে চুলকাইতে বলিল, “তার নামটা মনে আসছে নী—সেই ষে মেয়েডাকাইত এক জন আছে ?” হর। কে ?—দেবী চৌধুরাণী ? ব্র । সেই । হর । তার কাছে টাকা পাইলে কি প্রকারে ? ব্ৰজেশ্বরের প্রাচীন নীতিশাস্ত্রে লেখে যে, এখানে বাপের কাছে ভাড়াভাড়িতে দোষ নাই । ব্রজ বলিল, “ও টাকাটা একটু সুযোগে পাওয়া গিয়াছে।" হর । বদলোকের টাকা । লেখাপড়া কি রকম হইয়াছে ? ত্র। একটু মুষোগে পাওয়া গিয়াছে বলিয়৷ লেখাপড়া করিতে হয় নাই । বাপ আর এ বিষয়ে বেশী খোঁচাখুঁচি করিয়া জিজ্ঞাসা না করে, এ অভিপ্রায়ে ব্রজেশ্বর তখনই কথাটা চাপা দিয়া বলিল, “পাপের ধন ষে গ্ৰহণ করে, সেও পাপের ভাগী হয় । তাই ও টাকাটা লওয়া আমার তেমন মত নয় ।” হরবল্লভ ক্রুদ্ধ হইয়া বলিল, “টাকা নেব না ত ফাটকে ষাব না কি ? টাকা ধার নেব, তার আবার পাপের টাকা পুণ্যের টাকা কি ? অার জপতপের টাকাই বা কার কাছে পাব ? সে আপত্তি করে কাজ নাই। কিন্তু আসল আপত্তি এই যে, ডাকাইতের টাকা, তাতে আবার লেখাপড় করে নাই—ভয় ३श* পাছে দেরী হলে বাড়ীঘর লুঠপাট করিয়া লইয়া যায়।” ব্ৰজেশ্বর চুপ করিয়া রহিল। হর। তা টাকার মেয়াদ কত দিন ? ব্র । আগামী বৈশাখমাসের শুক্লা সপ্তমীর চন্দ্রাস্ত পর্য্যস্ত । 叠 হয়। তা সে হলো ডাকাইত। দেখা দেয় না । কোথা তার দেখা পাওয়া যাবে যে, টাকা দিব ? ত্র। ঐ দিন সন্ধ্যার পর সে সন্ধানপুরে কালসাজির ঘাটে বজরায় থাকিবে । সেইখানে টাকা পৌছাইলেই হইবে।