পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (তৃতীয় ভাগ).djvu/২৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

es তার পরও মনে জানিতাম, তুমিই আমার স্ত্রী—মনে । জার কাহারও স্থান ছিল না। বল্ব না মনে করিয়া ছিলাম, কিন্তু বলাতেও ক্ষতি নাই-তুমি মরিয়াছ শুনিয়, আমিও মস্কৃিত বসিয়ছিলাম। এখন মনে হয়, মরিলেই ভাল হইত ; তুমি মরিলে ভাল হইত ংe-না মরিয়াছিলে ত আমি মরিলেই ভাল হইত। এখন যাহা শুনিয়াছি, বুঝিয়াছি, তা শুনিতে হইত না, বুঝিতে হইত না। আজ দশ বৎসরের হারান ধন তোমায় পাইয়াছি, আমার স্বৰ্গস্থথের অপেক্ষা অধিক মুখ হইত। তা না হয়ে, প্রফুল, আজ তোমায় পাইয়া মৰ্ম্মাস্তিক যন্ত্রণ।" তার পর একবার থামিয়া, একটু ঢোক গিলিয়া, মাথা টিপিয়া ধরিষা, ব্রজেশ্বর বলিল, *মনের মন্দিরের ভিতর সোনার প্রতিমা গড়িয়া রাখিয়াছিলাম—আমার সেই প্রফুল্ল—মুখে আসে না —সেই প্রফুল্পের এই বৃত্তি !” প্রফুল্ল বলিল, “কি ? ডাকাইতি করি।” ব্রজ। কর না কি ? ইহার উত্তরে প্রফুল্ল একটা কথা বলিতে পারিত । যখন ব্রজেশ্বরের পিতা প্রফুল্লকে জন্মের মত ত্যাগ করিয়া গৃহবহিস্কৃত করিয়া দেয়, তখন প্রফুল্ল কাতর হইয়া শ্বশুরকে জিজ্ঞাসা করিয়াছিল, “আমি অন্নের কাঙ্গাল, তোমর। তাড়াইয়া দিলে—আমি কি করিয়া খাইব ?” তাহাতে শ্বশুর উত্তর দিয়াছিলেন, "চুরিডাকাইতি করিয়া খাইও " প্রফুল্ল মেধাবিনী, সে কথা ভুলে নাই । ভুলিবার কথাও নহে। আজ ব্ৰজেশ্বর প্রফুল্লকে ডাকাইত বলিয়া এই ভৎসনা করিল ; আজ প্রফুলের সেই উত্তর ছিল ; প্রফুল্লের এই উত্তর ছিল, ‘আমি ডাকাইত বটে—তা এখন এত ভৎসনা কেন ? তোমরাই ত চুরি-ডাকাইতি করিয়া থাইতে বলিয়াছিলে । আমি গুরুজনের আজ্ঞা পালন করিতেছি । এ উত্তর সংবরণ করাই যথার্থ পুণ্য। প্রফুল্ল সে পুণ্য সঞ্চয় করিল, সে কথা মুখেও আনিল না। প্রফুল্ল স্বামীর কাছে হাতযোড় করিয়া এই উত্তর দল। বলিল, “আমি ডাকাইত নই। আমি তোমার কাছে শপথ করিতেছি, আমি কখনও ডাকাইতি করি rাই । কখনও ডাকাইতির এক কড়া লই নাই । মি আমার দেবতা। আমি অন্ত দেবতার অর্চনা রিতে শিখিতেছিলাম—শিখিতে পারি নাই ; তুমি ব দেবতার স্থান অধিকার করিয়াছ—তুমিই একত্রি আমার দেবতা । আমি তোমার কাছে শপথ রিতেছি—আমি ডাকাইত নই। তবে জানি, লোকে tামাকে ডাকাইত বলে । কেন বলে, তাও জানি । ই কথা তোমাকে আমার কাছে গুনিতে হইবে ; সেই '.'. . . কথা শুনাইব বলিয়াই আজ এখানে আসিয়াছি। জাজ না শুনিলে আরশোনা হইবে না। শোন,আমি বলি।” তখন যে দিন প্রফুল্ল শ্বশুরালয় হইতে বহিষ্কৃত হইয়াছিল, সেই দিন হইতে আজি পর্য্যস্ত আপনার কাহিনী সকলই অকপটে বলিল। শুনিয়া, ব্ৰজেশ্বর বিস্মিত, লজ্জিত, অতিশয় অহলাদিত, আর মহামহিমময়ী স্ত্রীর সমীপে কিছু ভীত হইল। প্রফুল্ল কথা সমাপন করিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “আমার এ কথাগুলিতে বিশ্বাস করিলে কি ?” অবিশ্বাসের জায়গা ছিল না—প্রফুল্লের প্রতি কথা ব্ৰজেশ্বরের হাড়ে হাড়ে বসিয়াছিল ৷ ব্ৰজেশ্বর উত্তর করিতে পারিল না—কিন্তু তাহার আননাপূর্ণ কান্তি দেখিয়া প্রফুল্ল বুঝিল, বিশ্বাস হইয়াছে। তখন প্রফুল্ল বলিতে লাগিল, “এখন পায়ের ধূলা দিয়া এ জন্মের মত আমায় বিদায় দাও, আর এখানে বিলম্ব করিও না— সম্মুখে কোন বিঘ্ন আছে। তোমায় এই দশ বৎসরের পরে পাইয়া এখনই উপযাচিক হইয়া বিদায় দিতেছি, ইহাতে বুঝিবে যে, বিঘ্ন বড় সামান্ত নহে। আমার দুইটি সখী এই নৌকায় আছে। তারা বড় গুণবতী । আমিও তাহাদের বড় ভালবাসি । তোমার নৌকায় তাহাদের লইয়া যাও। বাড়ী পৌঁছিয়া তারা যেখানে যাইতে চায়, সেইখানে পাঠাইয়া দিও । আমায় যেমন মনে রাখিয়াছিলে, তেমনি মনে রাখিও । সাগর যেন আমায় না ভুলে ।” ব্ৰজেশ্বর ক্ষণেককাল নীরবে ভাবিল। পরে বলিল, “আমি কিছুই বুঝিতে পারিতেছি না, প্রফুল্প, অামায় বুঝাইয়া দাও, তোমার এত লোক—কেহ নাই ! বজরায় মাঝিরা পর্য্যস্ত নাই ! কেবল দুইটি স্ত্রীলোক আছে। তাদেরও বিদায় করিতে চাহিতেছ। সম্মুখে বিঘ্ন বলিতেছ,—আমাকে থাকিতে নিষেধ করিতেছ। আর এ জন্মে সাক্ষাৎ হইবে না, বলিতেছ। এ সব কি ? সম্মুখে কি বিঘ্ন, আমাকে না বলিলে আমি যাইব না। বিঘ্ন কি, শুনিলেও যাইব কি না, তাও বলিতে পারি না ।" প্রফুল । সে সব কথা তোমার শুনিবার নয় । ত্র। তবে অামি কি তোমার কেহ নই ? এমন সময় দুম করিয়া একটা বন্দুকের শব্দ হইল। . তৃতীয় পরিচ্ছেদ ছম করিয়া একটা বন্দুকের শব্দ হইল—ব্রজেশ্বরের মুখের কথা মুখে রহিল, দুই জনে চমকিয়া সম্মুখে চাহিয়া দেখিল-দেখিল, দুরে পাঁচখানি ছিপ