পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/১০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বসিলেন । আবার সেই বারুণীর শোভা দেখিতে লাগিলেন । দেখিলেন, রোহিণী ব| কোন স্ত্রীলোক বা পুরুষ কোথাও কেহ নাই। কেহ কোথাও নাই, কিন্তু সে জলোপরে একটি কলসী ভাসিতেছে । কার কলসী ? হঠাৎ সন্দেহ উপস্থিত হইল-- কেহ জল লইতে আসিয়৷ ডুবিয়া যায় নাই ত ? রোহিণী এইমাত্র জল লইতে আসিয়াছিল –তখন অকস্মাৎ পূৰ্বত্বের কথ। মনে পড়িল । মনে পড়িল যে, ভ্রমর রোহিণীকে বলিয়। পাঠাইয়াছিল যে, বারুণীপুকুরে—সন্ধ্যাবেলা—কলসী গলায় বেঁধে । মনে পড়িল ধে, রোহিণী প্রভুত্তরে বলিয়াছিল, “আচ্ছ। ” গোবিন্দলাল তৎক্ষণাং পুষ্করিণীর ঘাটে আসিলন, সৰ্ব্বশেষ সোপানে দাড়াইয়। পুষ্করিণীর সৰ্ব্বত্র দেখিতে লাগিলেন । জল কাচতুল। স্বচ্ছ। ঘাটের নীচে জলতলস্থ ভূমি পর্যাস্ত দেখা যাইতেছে । দেখিলেন, স্বচ্ছ স্ফটিকমণ্ডিত হৈমপ্রন্ডিমর ন্যায় রোহিণী লভলে গুইয়। আচে । অন্ধকার জলতল আলে। করিয়াছে । ষোড়শ পরিচ্ছেদ গোবিন্দলাল তৎক্ষণাৎ জলে নামিয়। ডুব দিয়৷ Lরাহিণীকে উঠাইয়। .সাপান-উপরি শায়িতা করিলেন । দেখিলেন, রোহিণী জীবিত আছে কি ন সন্দেহ ; .স সংজ্ঞাহীনা, নিশ্বাস-প্রশ্বাসরহিত । উদ্যান হইতে গোবিন্দলাল এক জন মালীকে ডাকিলেন । মলীর সাহাযে রাহিণীকে বহন করিয়৷ উষ্ঠানস্থ প্রমোদগুহুে শুশ্ৰুষার জন্য লইয়। গেলেন । জীবনে হউক, মরণে হউক, রোহিণী শেষ গোবিন্দলালের গৃহে প্রবেশ করিল ! ভ্রমর ভিন্ন আর কোন স্ত্রীলোক কখনও সে উদ্যানগৃহে প্রবেশ করে নাই । বাত্যাবর্ষাবিধৌত চম্পকের মত সেই মৃত নারীদেহ পালঙ্কে লম্বমান হইয়। প্রজলিত দীপালোকে শোভা পাইতে লাগিল । বিশাল দীর্ঘ-বিলম্বিত ঘোর-কৃষ্ণ কেশরাশি জলে ঋজু -তাহ দিয়৷ জল ঝরিতেছে, মেঘ যেন জলবৃষ্টি করিতেছে। নয়ন মুদ্রিত ; কিন্তু সেই মুদ্রিত পক্ষের উপরে ক্রযুগ জলে ভিজিয়া আরও অধিক কৃষ্ণ শোভায় শোভিত হইয়াছে । আর সেই ললাট—স্থির, বিস্তারিত, লজ্জাভয়বিহীন, কোন অব্যক্তভাববিশিষ্ট--গণ্ড এখনও উজ্জল—অধর এখনও মধুময়, বান্ধুলীপুষ্পের লজ্জাস্থল। গোবিন্দলালের চক্ষে জল পড়িল । বলিলেন, “মরি মরি! কৃষ্ণকান্তের উইল - : ریم" , "r श्नं - : مقة , *: কেন তোমায় বিধাত এত রূপ দিয়া পাঠাইয়াছিলেন, . দিয়াছিলেন ত মুখী করিলেন না কেন ? এমন করিয়া । তুমি চলিলে কেন ?" এই সুন্দরীর আত্মঘাতের তিনি নিজেই যে মূল -এ কথা মনে করিয়া তাহার বুক : ফাটিতে লাগিল । যদি রোহিণীর জীবন থাকে, রোহিণীকে বাচাইতে" হইবে । জলমগ্নকে কি প্রকারে বঁাচাইতে হয়, গোবিন্দলাল তাহ জানিতেন । উদরস্থ জল সহজেই বাহির করান যায় । তই চারিবার রোহিণীকে উঠাষ্টয়া বসাইয়া, পাশ ফিরাইয়া ঘুরাইয়। জল: উদগিরণ করাইলেন । কিন্তু তাহাতে নিশ্বাসপ্রশ্বাস । বহিলন। সেইটি কঠিন কাজ । গোবিন্দলাল জানিতেন, মুমূর্যুর বাহুদ্বয় ধরিঞ্চ উৰ্দ্ধোন্তোলন করিলে অন্তরস্থ বায়ুকোষ স্ফীত হয়, " সেই সময়ে রোগীর মুখে ফুৎকার দিতে হয় ; পরে উত্তোলিত বাহুদ্বয় ধীরে ধীরে নামাইতে হয়, নামাইলে । বায়ুকোষ সমুচিত হয়। তখন সেই ফুৎকারপ্রেরিত বায়ু আপনি নির্গত হইয়। আইসে । ইহাতে কৃত্রিম নিশ্বাস-প্রশ্বাস বাহিত হয় । এইরূপ পুনঃ পুনঃ ” করিতে করিতে বায়ুকোষের কার্য স্বতঃ পুনরাগত হইতে থাকে। কৃত্রিম নিশ্বাস প্রশ্বাস বাহিত করাইতে করাষ্টতে সহজ নিশ্বাস-প্রশ্বাস আপনি উপস্থিত হয়। রোহিণীকে তাই করিতে হইবে । দুই হাতে দুইটি বাহু তুলিয়া ধরিয়া তাহার মুখে ফুৎকার দিতে হইবে, তাহার সেই পকবিশ্ববিনিন্দিত, এখনও সুধাপরিপূর্ণ মদনমদোন্মাদ হলাহল কলসীতুল্য রাঙ্গীরাঙ্গ মধুর অধরে অধর দিয়। ফুৎকার দিতে হইবে। কি সৰ্ব্বনাশ ! কে দিবে ? গোবিন্দলালের এক সহায় উড়িয়া মালী । বাগানের অন্য চাকরের ইতিপূৰ্ব্বে গৃহে গিয়াছিল। তিনি মালীকে বলিলেন, “আমি ইহার হাত দুইটা তুলে ধরি. তুই ইহার মুখে ফু দে দেখি ” - মুখে ফু ! সৰ্ব্বনাশ ! ঐ রাঙ্গা-রাঙ্গা সুধামাখা অধরে মালীর মুখের ফু ! সেহৈ পারিবি না মুনিম । মালীকে মনিব যদি শালগ্রামশিলা চৰ্ব্বণ করিতে বলিত, মালী মনিবের খাতিরে তাঁহাই করিলে করিতে পারিত, কিন্তু সেই চাদমুখের রাঙ্গা অধরে—সেই কটুকি মুখের ফু ! মালী ঘামিতে আরম্ভ করিল। স্পষ্ট বলিল, “মু সে পারিবি না অবধড় ” . মালী ঠিক বলিয়াছিল। মালী সেই দেবহুলভ ওষ্ঠাধরে যদি একবার মুখ দিয়া ফু দিত, তার পর । যদি রোহিণী বাচিয়া উঠিয়| আবার সেই ঠোটফুলাইয়া কলসীকক্ষে জল লইয়া, মালীর পানে চাহিয়া