পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দুৰ্গেশনন্দিনী বিমলা ও অভিরাম স্বামীর আশমানী নায়ী এক জম দাসী বীরেন্দ্ৰসিংহের সঙ্গে আসিয়াছিল । ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ অভিরাম স্বামীর মন্ত্রণা তিলোত্তম ও বিমলা শৈলেশ্বরের মন্দির হইতে নিৰ্ব্বিঘ্নে দুর্গে প্রত্যাগমন করিলেন । প্রত্যাগমনের তিন চারি দিবস পরে বীরেন্দ্ৰসিংহ নিজ দেওয়ানখানায় মছনদে বসিয়া আছেন, এমন সময় অভিরাম স্বামী তথায় উপস্থিত হইলেন । বীরেন্দ্রসি"স্থ গাত্রোথান পুৰ্ব্বক দণ্ডবৎ হইলেন ; অভিরাম স্বামী বীরেন্দ্রের হস্তদত্ত কুশাসনোপরি উপবিষ্ট হইলেন ; অনুমতিক্রমে বীরেন্দ্র পুনরুপবেশন করিলেন । অভিরাম স্বামী কছিলেন,-“বীrরন্দ্র । অল্প তোমার সহিত কোন বিশেষ কথা আছে ।” বীরেন্দ্ৰসিংহ কহিলেন,—“অজ্ঞ করুন ।” অভিরাম স্বামী কহিলেন;–“এক্ষণে মোগলপাঠানে তুমুল সংগ্রাম উপস্থিত ।” বী । হঁ ; কোন বিশেষ গুরুতর ঘটনা উপস্থিত হওম্বাই সম্ভব । অ । সম্ভব—এক্ষণে কি কৰ্ত্তব্য স্থির করিয়াছ ? বীরেন্দ্র সদৰ্পে উত্তর করিলেন, “শত্রু উপস্থিত হইলে, বাহুবলে পরায়ুখ করিব।” পরমহংস অধিকতর মৃদুভাবে কহিলেন,— “ব’Lংক্স, এ তোমার তুল্য বীরের উপযুক্ত প্রত্যুত্তর ; কিন্তু কথা এই যে, কেবল বীরত্বে জয়লাভ নাই ; ঘথানীতি সন্ধিবিগ্ৰহ করিলেই জয়লাভ । তুমি নিজে বীরাগ্রগণ ; কিন্তু তোমার সেন৷ সহস্ৰাধিক নহে ; কোন যোদ্ধা সহস্ৰেক সেনা লইয়া শতগুণ সেনা বিমুখ করিতে পারে ? মোগল পাঠান উভয় পক্ষই সেনাবলে তোমার অপেক্ষা শতগুণে বলবান ; এক পক্ষের সাহায্য ব্যতীত অপর পক্ষের হস্ত হইতে উদ্ধার পাইতে পারিবে না । এ কথায় রুষ্ট হুইও না, স্থিরচিত্তে বিবেচনা কর । আরও কথা এই ষে, দুই পক্ষেরই সহিত শত্রুভাবে প্রয়োজন কি ? শত্র তো মন্দ ; দুই শত্রুর অপেক্ষা এক শত্রু ভাল না ? অতএব আমার বিবেচনায় পক্ষাবলম্বন করাই উচিত।" বীরেঞ্জ বহুক্ষণ নিস্তন্ধ থাকিয়া কহিলেল,—“কোন পক্ষ অবলম্বন করিতে অনুমতি করেন ?” $3 অভিরাম স্বামী উত্তর করিলেন,-"ষতো ধৰ্ম্মস্ততো জয়ঃ,—ষে পক্ষ অবলম্বন করিলে অধৰ্ম্ম মাই, সেই পক্ষে ষাও, রাজবিদ্রোহিতা মহাপাপ, রাজপক্ষ অবলম্বন কর ।” বীরেন্দ্র পুনরায় ক্ষণেক চিন্তা করিয়া কহিলেন, “রাজা কে ? মোগল পাঠান উভয়েরই রাজত্ব লইয়া বিবাদ ।” * অভিরাম স্বামী উত্তর করিলেন, “যিনি করগ্রাহী, তিনিই রাজা ।” বী। আকৃবর শাহ ? অ | অবশু । এই কথায় বীরেন্দ্ৰসিংহ অপ্রসন্ন মুখভঙ্গী করি।-- লেন, ক্রমে চক্ষু আরক্তবর্ণ হইল ; অভিরাম স্বামী আকারেঙ্গিত দেখিয়া কহিলেন;–“বীরেন্দ্র ! ক্রোধ সংবরণ কর ;-আমি তোমাকে দিল্লীশ্বরের অতুগত হইতে বলিয়াছি ; মানসিংহের আনুগত্য করিতে বলি নাই ।” বীরেন্দ্রসিংহ দক্ষিণ হস্ত প্রসারণ করিয়া পরমংসকে দেখাইলেন ; দক্ষিণ হস্তের উপর বাম হস্তের অঙ্গুলী নির্দেশ করিয়া কহিলেন, “ও পাদপদ্মের আশীৰ্ব্বাদে এই হস্ত মানসিংহের রক্তে প্লাবিত করিব।” অভিরাম স্বামী কহিলেন, “স্থির হও ; রাগান্ধ হইয়া আত্মকাৰ্য্য নষ্ট করিও না ; মানসিংহের পূর্বকৃত অপরাধের অবশু দণ্ড করিও, কিন্তু আকৃবর শাহের সহিত যুদ্ধে কাৰ্য্য কি ?” বীরেন্দ্র সক্রোধে কহিতে লাগিলেন,—“আকৃবর শাহের পক্ষ হইলে কোন সেনাপতির অধীন হইয়৷ যুদ্ধ করিতে হইবে ? কোন যোদ্ধার সাহায্য করিতে হইবে ? কtহার আমুগত্য করিতে হইবে ? মানসিংহের । গুরুদেব ! এ দেহ বৰ্ত্তমানে এ কার্য্য বীরেন্দ্ৰসিংহ হইতে হইবে না ।" অভিরাম স্বামী বিষঃ হইয়া নীরব রহিলেন । কিযুৎক্ষণ পরে জিজ্ঞাসা করিলেন, "তবে কি পাঠানের সহায়তা করা তোমার শ্রেয়ঃ হইল ?” বীরেন্দ্র উত্তর করিলেন, “পক্ষপক্ষ প্রভেদ করা কি শ্রেয়ঃ ?” অ ! ই, পক্ষাপক্ষ প্রভেদ কর শ্ৰেয় । বা । তবে আমার পাঠানসহকারী হওয়া ¢ॐ{प्लई ! - অভিরাম স্বামী দীর্ঘনিশ্বাস ত্যাগ করিয়া পুনরায় নীরব হইলেন ; চক্ষে তাহার বারিবিন্দু উপস্থিত হুইল। দেখিয়া বীরেন্দ্ৰসিংহ যৎপরোনাস্তি বিস্ময়াপন্ন