পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/১৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

* রাধারাণী । 器 রুক্মিণীকুমার হইতাম, তাহ হইলে কামাখ্যাবাবু এ বিজ্ঞাপন দিতেন না । কেন না, তাহার সঙ্গে আমার পরিচয় ছিল । কিন্তু যখন এই বিজ্ঞাপন বাহির হয়, তখনই আমি ইহ দেখিয়! তুলিয়। রাখিয়াছিলাম ” রাধারাণী বলিল, “যদি আপনার সঙ্গে এই বিজ্ঞাপনের কোন সম্বন্ধ নাই, তবে আপনি ইহা তুলিয়৷ রাখিয়াছিলেন কেন ?” উত্তরকারী বলিলেন, “একটি কৌতুহলের জন্য । আজি আট দশ বৎসর হইল, আমি সেখানে সেখানে বেড়াইতাম -কিন্তু লোকলজ্জাভয়ে আপনার নামটা গোপন করির কাল্পনিক নাম ব্যবহার করিতাম । কাল্পনিক নাম রুক্মিণীকুমার । আপনি তাত বিমন। হইতেছেন কেন ?" রাধারণ একটু স্থির হইলেন–আগস্তুক বলিতে লাগিলেন--“নথার্থ রুক্মিণীকুমার নাম ধরে, এমন কহিকে ও চিনি না । মদি কেহ আমারই তল্লাস করিয়া খাকে তাহ সম্ভব নহে–তথাপি কি জানি, সাত পাচ ভাবিয়। বিজ্ঞাপনটি তুলিয়। রাখিলাম । কিন্তু কামাখ্যাবাবুর কাছে আসিতে সাহস হইল না ।" “পরে ?” “পরে কামাখ্যাব|বর শ্রাদ্ধে তাহার পুত্ৰগণ আমাকে নিমন্ত্ৰণ করিল, কিন্তু আমি কার্য্যগতিকে আসিতে পারি নাই । সম্প্রতি সুস ক্রটির ক্ষম। প্রার্থনার জঙ্গ তাহার পুত্রদিগের নিকট আসিলাম । কৌতুহলবশতঃ বিজ্ঞাপন সঙ্গে আনিয়াছিলাম । প্রসঙ্গক্রমে উহার কথা উত্থাপন করিয়া কামাখ্যাবাবুর জ্যেষ্ঠপুলকে জিজ্ঞাস করিলাম যে, এ বিজ্ঞাপন কেন দেওয়া হইয়াছিল ? কামাখ্যাবাবুর পুত্ৰ বলিলেন যে, রাধীরাণীর অনুরোধে । আমিও এক রাধারাণীকে চিনিতাম ;–এক বালিকা —আমি এক দিন দেখিয় তাহাকে আর ভুলিতে পারিলাম না । সে মাতার পথ্যের জন্য আপনি অনাহারে থাকিয়া বনফুলের মালা গথিয়া—সেই অন্ধকার বৃষ্টিতে—” বক্ত আর কথা কহিতে পারিলেন না। তাহার চক্ষু জলে পুরিয়া গেল। রাধারাণীরও চক্ষু জলে ভাসিতে লাগিল । চক্ষু মুছিয়া রাধারাণী বলিল, “ইতর লোকের কথায় এখন প্রয়োজন কি ? আপনার কথা বলুন ।” আগন্তুক উত্তর করিলেন, “রাধারাণী ইতর লোক নহে । যদি সংসারে কেহ দেবকন্ত থাকে, তবে সেই রাধারাণী। যদি কাহ্লাকে পবিত্র, সরলচিত্ত এ সংসারে আমি দেখিয়া থাকি, তবে সেই রাধারাণী । যদি কাহারও কথায় অমৃত থাকে, তবে সেই রাধারাণী— যথার্থ অমৃত । বর্ণে বর্ণে অপ্তারার বীণা বাজে, যে কথা কহিতে বাধ বাপ করে, অথচ সকল প্লং পরিষ্কার, সুমধুর, অতি সরল। আঞ্জি কখন শুনি নাই—এমন কথা কখনওঁৰ্ম্ম नाँठे !" .. 鷲 রুক্মিণীকুমার—এক্ষণে ইহাকে রুক্মিণীকুমার বল যাউক —ঐ সঙ্গে মনে মনে বলিলেন, “আবীর ক্ষা বুঝি তেমনই কথা শুনিতেছি ।” نيفية রুক্মিণীকুমার মনে মনে ভাবিতেছিলেন,ঞ্জ এত দিন হইল, সেই বালিকার কণ্ঠস্বর গুমিঃ ছিলাম, ঠিক আজও সে কণ্ঠ আমার মনের ভিত্নঃ জাগিতেছে । যেন কাল শুনিয়াছি। ধf আজ এই সুন্দরীর কণ্ঠস্বর গুনিয়া আমারঃ সেই রাধারাণীকেই ব। মনে পড়ে কেন ? এই ঞ্জি সেই ? আমি মূৰ্খ! কোথায় সেই দীন-দুঃখিনী; কুটারবাসিনী ভিখারিণী-আর কোথায় এই উল্লু প্রাসাদবিহারিণী ইন্দ্রাণী ; আমি সে রাধারণী*ে অন্ধকারে ভাল করিয়া দেখিতে পাই নাই, সুতরাং জানি ন যে, সে সুন্দরী কি কুৎসিতা; কিন্তু এই শচীনন্দিত। রূপসীর শতাংশের একাংশের রূপও যদি তাহার থাকে, তাহ হইলে সেও লোকমনোমোহিনী বটে !” * এ দিকে রাধারাণী অতৃপ্তশ্রবণে রুক্মিণীকুমারের: মধুর বচনগুলি শুনিতেছিলেন-মনে মনে ভাবিতে'; ছিলেন, তুমি যাহা পাপিষ্ঠ। রাধারাণীকে বলিতেছ;" কেবল তোমাকেই সেই কথাগুলি বলা যায়। তুমি, আজ আট বৎসরের পর রাধারাণীকে ছলিবার জন্ত কোন নন্দনকানন ছাড়িয়া পৃথিবীতে নামিলে ? এত দিনে কি আমার হৃদয়ের পূজায় প্রীত হইয়াছ ? তুমি, কি অন্তৰ্য্যাম ? নহিলে আমি লুকাইয়া লুকাইয়া--- হৃদয়ের ভিতরে লুকাইয়। তোমাকে যে পূজা করি তাহা তুমি কি প্রকারে জানিলে ? এই প্রথম দুই জনে স্পষ্ট দিবালোকে পর প্রতি দৃষ্টিপাত করিলেন । দুই জনে দুই জনে মুখপানে চাহিয়া ভাবিতে লাগিলেন, আর এমন আছে কি ? এই সসাগর, নদনদী চিত্রিত, জীবসন্ধুলা পৃথিবীতলে এমন তেজোময়, এমন মধুর, এমন সুখময়, এমন চঞ্চল অথচ স্থির, এমন সহান্ত অথচ গম্ভীর; এমন প্রফুল্ল অথচ ত্রীড়াময়, এমন আছে কি?: চিরপরিচিত অথচ অত্যন্ত অভিনব, মুহূর্তে মুহূর্বেঃ অভিনব মাধুরিমাময়, আত্মীয় অথচ অত্যন্ত পর; চিরস্থত অথচ অদৃষ্টপূৰ্ব্ব-কখনও দেখি নাই, আঠু it. এমন দেখিব না, এমন আর আছে কি ? 3. تمية