অষ্টম পরিচ্ছেদ রাধারাণীর আজ্ঞা পাইয়া, দেওয়ানজী আসিয়৷ :রাজ দেবেন্দ্রনারাণকে বহিৰ্ব্বাটতে লইয়া গিয়া যথেষ্ট স্ট্রয়াদর করিলেন । যথাবিহিত সময়ে রাজ দেবেন্দ্রট্রায়ণ ভোজন করিলেন । রাধারাণী স্বয়ং উপস্থিত #থাকিয় তাহাকে ভোজন করাইলেন । ভোজনাস্তে :খাধারাণী বলিলেন, “আপনার নগদ দুইটি টাকা ও কাপড় এখনও ধারি । কাপড় পরিয়া ছিড়িয়া ; ফেলিয়াছি ; টাকা খরচ করিয়াছি । আর ফেরত দিবার যে নাই । তাহার বদলে যাহা আপনার জন্য *রাখিয়াছি, তাহ গ্ৰহণ করুন " এই বলিয়া রাধারাণী বহুমূল্য হীরকতার বাহির করিয়া দেবেন্দ্রের গলায় পরাইয়। দিতে গেলেন । দেবেন্দ্রনারায়ণ নিষেধ করিয়া বলিলেন, “যদি ঐরূপে দেনা পরিশোধ করিবে, তবে তোমার গলায় যে ছড়া আছে, তাহাই লক্ট’ব ।” * রাধারাণী হাসিতে হাসিতে আপনার গলার তার খুলিয়া দেবেন্দ্রনারায়ণের গলায় পরাইল । তখন দেবেন্দ্রনারায়ণ বলিলেন, “সব শোধ কষ্টল—কিন্তু আমি একটু ঋণী রহিলাম।" * , রাধা । কিসে ? দে। সে দুই পয়সার ফুলের মালার মূল্য ত ফেরত পাইলাম । তবে এখন মাল ফেরত দিতে আমি বাধ্য। রাধারাণী হাসিল । দেবেন্দ্রনারায়ণ ইচ্ছাপূর্বক মুক্তাতার পরিয়৷ আসিয়াছিলেন, তাহ রাধারাণীর কণ্ঠে পরাইয়। দিয়া বলিলেন, “এই ফেরত দিলাম ।” এমন সময়ে পো করিয়| শাক বাজিল । রাধারাণী আসিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “শাক বাজাইল কে ?” র্তাহার এক জন দাসী চিত্র উত্তর করিল, “আজ্ঞা, আমি।” রাধারাণী জিজ্ঞাসা করিল, “কেন বাজাইলি ?” চিত্রা বলিল, “কিছু পাইব বলিয়। " বলা বাহুল্য যে, চিত্র পুরস্কৃত হইল। কিন্তু তাহার কথাটা মিথ্যা । রাধারাণী তাহাকে শিখাইয়া পড়াইয়া দ্বারের নিকট বসাইয়া আসিয়াছিল । তার পর দুই জনে বিরলে বসিয়া মনের কথা হইল । রাধারাণী দেবেন্দ্রনারায়ণের বিস্ময় দূর করি বার জন্য সেই রথের দিনের সাক্ষাতের পর ষাহা যাক। ঘটয়াছিল, তাহার পিতামহের বিষয়সম্পত্তির কথা, তজ্জষ্ঠ রাধারাণীর মা'র দৈন্তের কথা, মা’র মৃত্যুর কথা, প্রিবিকেন্সিলের ডিক্রীর কথা, কামাখ্যাবাবুর মৃত্যুর কথা, সব বলিল । বসস্তের কথা বলিল আপনার বিজ্ঞাপনের কথা বলিল । কঁাদিতে কঁাদিতে হাসিতে হাসিতে, বৃষ্টি-বিদ্যুতে, চাতকী চিরসঞ্চিত প্রণয়-সম্ভাষণপিপাসা পরিতৃপ্ত করিল। নিদাঘ-সস্তপ্ত পৰ্ব্বত যেমন বর্ষার বারিধারা পাইয়। শীতল হয়, দেবেন্দ্রনারায়ণও তেমনি শীতল হইলেন । তিনি রাধারণীকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “তোমার ত কেহ নাই । কিন্তু এ বাড়ী বড় জনাকীর্ণ । দেখিতেছি ।" রাধারাণী বলিল, “দুঃখের দিনে আমার কেহ ছিল ন। এখন আমার অনেক আত্মীয়কুটুম্ব জুটিয়াছে। আমি এ অল্পবয়সে এক থাকিতে পারি না, এ জন্ত যত্ন করিয়া তাহাদিগকে স্থান দিয়া রাখিয়াছি।” দে । তাহাদের মধ্যে এমন সম্বন্ধবিশিষ্ট কেহ আছে যে, তোমাকে এই দীন-দরিদ্রকে দান করিতে পারে ? রা । তাও আছে । দে । তবে তিনি কেন সেই শুভলগ্ন স্থতহি বৃকযোগটা খুঁজুন না ? র ! বোধ করি, এতক্ষণ সে কাজটা হইয়৷ গেল । তোমার সঙ্গে রাপারাণীর এরূপ সাক্ষাত অত্য কোন কারণে হইতে পারে না, এ পুরীতে সকলেষ্ট জানে। সংবাদ লইব কি ? দে । বিলম্বে কাজ কি ? রাধারাণী ডাকিল, “চিত্রে !" চিত্র আসিল । রাপারাণী জিজ্ঞাসা করিল, “দিন-টিন কিছু হুইল কি ?” চিত্র বলিল, “হা, দেওয়ানজী মহাশয় পুরোহিত । মহাশয়কে ডাকিয়াছিলেন । পুরোহিত পরদিন বিবাহের উত্তম দিন বলিয়া গিয়াছেন । দেওয়ানজী মহাশয় সমস্ত উদ্যোগ করিতেছেন ।” তখন বসন্ত আসিল, কামাখ্য'বাবুর পুত্রেরা এবং পরিবারবর্গ সকলেঙ্গ আসিল, আর যত বসন্তের কোকিল, সময়ের বন্ধু ষে যেখানে ছিল, সকলেই আসিল । দেবেন্দ্রনারায়ণের বন্ধু ও অনুচরবর্গ সকলে আসিল । বসন্ত আসিলে রাধারাণী বলিল, “কি আক্কেল ভাঙ্গ বসন্ত ?” বসন্ত । কেন ? রা। যাকে তাকে তুমি পত্ৰ দিয়া পাঠাইয়। দাও কেন ?
পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/১৫৮
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।