পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S8 বড় অধিকক্ষণ পাঠ করিতে সাহস হইল না, কেহ আসিয়া দেখিতে পাইবে । অতি ব্যস্তে জল আনিয়া লিপি ধৌত করিলেন ; ধোঁত করিয়া মনঃপূত হইল না ; বস্ত্ৰ দিয়া উত্তম করিয়া মূছিলেন ; আবার পড়িয়া দেখিলেন, কালীর চিহ্নমাত্র নাই ; তথাপি বোধ হইল, যেন এখনও পড়া যায়, আবার জল আনিয়া ধুইলেন, আবার বক্স দিয়া মুছিলেন, তথাপি বোধ হইতে লাগিল যেন লেখা রহিয়াছে— “কুমার জগৎ সিংহ” অষ্টম পরিচ্ছেদ বিমলার মন্ত্রণা বিমলা অভিরাম স্বামীর কুটীর মধ্যে দণ্ডায়মান আছেন। অভিরাম স্বামী ভূমির উপর যোগাসনে বসিয়াছেন । জগৎসিংহের সহিত যে প্রকারে বিমলা ও তিলোত্তমার সাক্ষাৎ হইয়াছিল, বিমলা তাহা আস্তেীপান্ত অভিরাম স্বামীর নিকট বর্ণন করিতেছিলেন ; বর্ণনা সমাপ্ত করিয়া কহিলেন, “আজ চতুর্দশ দিবস, কাল পক্ষ পূর্ণ হইবে।” অভিরাম স্বামী কহিলেন;–“এক্ষণে কি স্থির করিয়াছ ?” বিমলা উত্তর করিলেন, “উচিত পরামর্শ-জন্তই আপনার কাছে আসিয়াছি।” স্বামী কহিলেন, "উত্তম, আমার পরামর্শ এই যে, এ বিষয় অার মনে স্থান দিও না ।” বিমলা অতি বিষঃ-মনে নীরব হইয়া রছিলেন । অভিরাম স্বামী জিজ্ঞাসা করিলেন, “বিষণ্ণ হইলে কেন ?” বিমল কহিলেন, “তিলোত্তমার কি উপায় হইবে ?” অভিরাম স্বামী সবিস্মন্ধে জিজ্ঞাসা করিলেন, *কেন ? তিলোত্তমার মনে কি অনুরাগ-সঞ্চার इहेब्रटिश् ?" বিমল কিয়ুৎকাল মীরবে থাকিয় কহিলেন, *আপনাকে কত কহিব । আমি আজ চোঁদ দিন জছোয়াত্র তিলোত্তমার ভাবগতিক বিলক্ষণ করিয়া দেখিতেছি ; আমার মনে এমন বোধ হইয়াছে যে, তিলোত্তমার মনোমধ্যে অতি প্রগাঢ় অন্তরাগের जूर्थीद्र हईब्रोप्छ् " পরমহংস ঈষৎ হাস্ত করিয়া কহিলেন, “তোমরা স্ত্রীলোক ; মনোমধ্যে অমুরাগের লক্ষণ দেখিলেই গাঢ় আরোগ বিবেচনা কর । বিমল, ভিলোত্তমার মমের বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী মুখের জন্ত চিন্তিত হইও না ; বালিকীস্বভাব-বশতঃই প্রথম দর্শনে মনশ্চাঞ্চল্য হুইয়াছে ; এ বিষয়ে কোন কথাবার্তা উত্থাপন না হইলেই শীঘ্র জগৎসিংহকে বিস্মৃত হইবে ।” বিমলা কহিল, "ন। মা, প্রভু, সে লক্ষণ নয়। পক্ষমধ্যে তিলোত্তমার স্বভাব-পরিবর্তন হইয়াছে, তিলোত্তম। আমার সঙ্গে কি বয়স্তাদিগের সঙ্গে সেরূপ দিবারাত্র হাসিয়া কথা কহে না ; তিলোত্তম। আর প্রায় কথা কয় না । তিলোত্তমার পুস্তক সকল পালঙ্কের নীচে পড়িয়া পচিতেছে ; তিলোত্তমার ফুলগাছ সকল জলাভাবে শুষ্ক হইল ; তিলোত্তমার পার্থীগুলিতে আর সে ষত্ব নাই ; তিলোত্তম নিজে আহার করে না, রাত্রে নিদ্র। ষায় না ; তিলোত্তম বেশভূষা করে না ; তিলোত্তম কখনও চিস্ত করে না, এক্ষণে দিবানিশি অন্তমনে থাকে। তিলোত্তমার মুখে কালিমা পড়িয়াছে ।” অভিরাম স্বামী শুনিয়া নিস্তব্ধ রহিলেন । ক্ষণেক পরে কহিলেন,—“আমার বোধ ছিল যে, দর্শনমাত্র গাঢ় অমুরাগ জন্মিতে পারে না ; তবে স্ত্রীচরিত্র, বিশেষতঃ বালিকাচরিত্র, ঈশ্বর জানেন । কিন্তু কি করিবে ? বীরেন্দ্র এ সম্বন্ধে সম্মত হইবে না। " বিমলা কহিল, “আমি সেই আশঙ্কায় এ পর্য্যস্ত ইহার কোন উল্লেখ করি নাই ; মন্দিরমধ্যেও জগৎসিংহকে পরিচয় দিই নাই ; কিন্তু এক্ষণে বদি সিংহ মহাশয়,”—এই কথা বলিতে বিমলার মুখের কিঞ্চিৎ ভাবাস্তর হুইল,—"এক্ষণে যদি সিংহ মহাশয় মানসিংহের সহিত মিত্ৰত করিলেন, তবে জগৎসংহকে জামা ও করিতে হানি কি ?” অ ! মানসিংহই বা সম্মত হুইবে কেন ? বি । না হয়, যুবরাজ স্বাধীন । অ ! জগৎসিংহই বা বীরেন্দ্রসিংহের কস্তাকে বিবাহ করিবে কেন ? বি । জাতিকুলের দোষ কোমূ পক্ষেই নাই ? জয়ধরসিংহের পুৰ্ব্বপুরুষেরাও যত্নবংশীয় । অ ! যদুবংশীয় কষ্ঠ মুসলমানের খালকপুত্রের বধু হইবে ? বিমলা উদাসীনের প্রতি স্থির দৃষ্টি করিয়া কহিল, “ন হইবেই বা কেন, যত্নবংশের কোমু কুল ঘৃণ্য ?” এই কথা বলিবামাত্র ক্রোধে পরমহংসের চক্ষু | হইতে অগ্নি স্ফূরিত হইতে লাগিল ; কঠোর স্বরে কহিলেন, “পাপীয়সি ! নিজ হতভাগ্য বিস্কৃত হও নাই ? দুর হও ”