পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/১৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

2 o' সিপাহী আসিল ; দেখ্রিয়। আরও ঢালসড়কীওয়াল হিন্দু আসিয়। পি করিল । তখন দুই দলে ভর দক্ষ উপস্থি ইষ্টল । দেখিয়। সক্রোধে কাজীসাহেব সীতারামকে জিজ্ঞাসা করিলেন, "এ কি ব্যাপার ?" সীতা । আমি ত কিছু বুঝিতে পারিতেছি না । কাজী : বুঝিতে পারিতেছ না? আমি বুঝিতে পারিতেছি, এ তোমারই খেল । সীতা । তাহ হইলে আপনার কাছে নিরস্ত্র হইয়। মৃত্যু ভিক্ষা চাহিতে আসিতাম না । "... . কাজী । আমি এখন তোমার সে প্রার্থনা মঞ্জর করিব। এ কবরে তোমাকেই পুতিব । *.. এই বলিয়া কার্জী সাহেব কামারকে ভূকম দিলেন, ইহারই তাতে পায়ে ঐ হাতকড়ি বেড়ি লাগাও।” দ্বিতীয় ব্যক্তিকে তিনি ফৌজদারের নিকট পাঠাইলেন —ফৌজদার সাহেব সাহাতে আরও সিপাহী লইয়। স্বয়ং আইসেন, এমন প্রার্থন জানাষ্টর ফৌজদারের নিকট লোক গেল । কামার আসিয়া সীতারামকে ধরিল । সেই বৃক্ষারূঢ় বনদেবী শ্রী তাতা দেখিল । এ দিকে গঙ্গারাম কষ্টে অথচ নিৰ্ব্বিঘ্নে অশ্ব লষ্টয়। , লোকারণ্য হইতে নিষ্ক্রান্ত হইলেন। কষ্ট্রে, কেন না, আসিতে আসিতে দেখিলেন যে, সেই জনতামপো একটা ভারী গণ্ডগোল উপস্থিত হইল । কোলাহল , ভয়ানক হইল, লোকসকল সম্মুখে ছুটিতে লাগিল। তাঙ্গর অশ্ব এই সকলে অতিশয় ভাত শুষ্টয় দুৰ্দ্দমনীয় শুইয়। উঠিল । অশ্বারোহণের কৌশল গঙ্গারাম তেমন জানি তেন না ; ঘোড়া সম্লাষ্টতেই গঙ্গাকে এত ব্যতিব্যস্ত হইতে কষ্টল যে, তিনি আর কোন দিকে চাঙিয়। দেখিতে পারিলেন না সে কোথায় কি হইতেছে । কেবল “মার ! মাৰ্ব" একটা শব্দ কানে গেল ! লোকারুণ্য হইতে কোনমতে নিক্রোন্ত শুইয়। গঙ্গী রাম অশ্বকে ছাড়িরা দিয়৷ এক বটবৃক্ষে আরোহণ করিলেন ; দেখিবেন কি হইতেছে । দেখিলেন, ভারী গোলযোগ । সেই মঙ্গর্তা জনতা, দুষ্ট ভাগে বিভক্ত হইয়াছে। এক দিকে সব মুসলমান—আর এক দিকে সব হিন্দু। মুসলমানদিগের অগ্রভাগে কতকগুলি সিপাৰ্চী : হিন্দুদিগের অগ্রভাগে কতকগুলি ঢালসড়কীওয়ালী । হিন্দুব বাছ বাছ। ষোয়ান আর সংখ্যাতে বেশী । মুসলমানের তাহ+ দের কাছে হঠিতেছে। অনেকে পলাইতেছে। হিন্দুর “মার মাধু” শব্দে পশ্চাদ্ধাবিত হইতেছে । এই “মর মাৰ্ব’ শব্দে আকাশ, প্রান্তর, কানন প্রতিধ্বনিত ইষ্টতেছিল। ধে লড়াই করিতেছে, সেও বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী “মাবৃ মাৰ্ব" শব্দ করিতেছে ; যে লড়াই ন করিতেছে, সেও “মার মাধু" শব্দ করিতেছে। “মার মাবূ" শব্দে হিন্দুর চারিদিক্ হইতে চারিদিকে ছুটিতেছে। আবার গঙ্গারাম সবিস্ময়ে শুনিলেন, যাহারা এই “মার মার” শব্দ করিতেছে, তাহারা মধ্যে মধ্যে বলিতেছে, “জয় চণ্ডিকে ! মা চণ্ডী এয়েছেন : চণ্ডীর হুকুম, মার ! মারু ! মার! জয় চণ্ডিকে!” গঙ্গারাম ভাবিলেন, “এ কি এ ?” তখন দেখিতে দেখিতে গঙ্গারাম দেখিলেন, মহামহীরুহের শু্যামল-পল্লব-রাশি-মণ্ডিত চণ্ডীমূৰ্ত্তি দুই শাখায় দুই চরণ স্থাপন করিয়া বামহস্তে এক কোমল শাখ পরিয় , দক্ষিণ-হস্তে অঞ্চল ঘুরাইতে ঘরাইতে ডাকিতেছে—“মার ! মার ! শক্র মার!” অঞ্চল ঘূরিতেছে, অনাবৃত তালুলায়িত কেশদাম য়ুভরে উড়িতেছে—দৃপ্ত পদভরে যুগল শাখা দুলিতেছে, উঠিতেছে, নামিতেছে,--সঙ্গে সঙ্গে সেই মাধুরীময় দহ উঠিভেছে, নামিতেছে--যেন সিংহ বাহিনী সিংহপুষ্ঠে দাড়াইয়া রণরঙ্গে নাচিতেছে, থেন ম| অসুরবধে মত্ত হইয়৷ ডাকিতেছেন, “মার ! মাৰু ! শত্র মার!” শ্রীর আর লজ্জা নাই, জ্ঞান নাই, ভয় নাই, বিরাম নাই –কেবল ডাকিতেছে-“মার । শত্র মার! দেবতার শত্ৰু. মাহুষের শত্র, হিন্দুর ক্র--আমার শত্রু –মার ! শত্র মার !" উত্থিত বাহু, কি সুন্দর বাহু ! দুরিত অবর, বিস্ফারিত নাস, বিদ্যুন্ময় কটাক্ষ, স্বেদাক্ত ললাটে স্বেদজড়িত চূর্ণকুন্তলের শোভ । সকল হিন্দু সেই দিকে চাহিতেছে, আর “জয় ম চণ্ডিকে !" বলির রণে ছুটিতেছে । গঙ্গারাম প্রথমে মনে করিতেছেন যে, যথাগষ্ট চণ্ডী অবতীর্ণ— তার পর সবিস্ময়ে, সভয়ে চিনিলেন, ঐ ! এষ্ট চণ্ডার উৎসাহে হিন্দুর রণজয় হুইল । চণ্ডীর বলে বলবন হিন্দুর বেগ মুসলমানরা সহ্য করিতে পারিল না ; চাংকার করিতে করিতে পলাইতে লাগিল । অল্পকালমধ্যে রণক্ষেত্র মুসলমানশূন্ত হইল। গঙ্গারাম তখন দেখিলন এক জন ভারী লম্বা ষোয়ান সীতারামকে র্কাপে করিয়া লইয়া, আর সকলে তাহাকে ঘেরিয়া, সেই চণ্ডীর দিকে লইয়া চলিল । আরও দেখিলেন, পশ্চাং অীর এক জন সড়কীওয়ালা শাৎসাহেবের কাটামুণ্ড সড়কীতে বিধিয়। উচু করিয়া সঙ্গে সঙ্গে লইয়। যাইতেছে । এই সময়ে শ্ৰী সহসা বৃক্ষচ্যুত হইয়। ভূতলে পড়িয়৷ মুচ্ছত প্রায় হইল। গঙ্গারামও তখন বৃক্ষ হইতে নামিলেন ।