পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/১৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

مع انسان কেন ? কি মিস্মিসে কোকড়া কোকড়া চুলের গোছা ! কি ফলান রঙ ! কি ভুরু ! কি চোখ ! কি ঠোট !—যেমন রাঙ্গা, তেমনই পাতলা ! কি গড়ন । তা কোনটাই বা গঙ্গারাম ভাবিবে ? সবই যেন দেবীদুল্লভ ! গঙ্গারাম ভাবিল, "মামুষ যে এমন সুন্দর হয়, তা জানতেম না । একবার যে দেখিলাম, আমার যেন জন্ম সার্থক হইল। আমি তাই ভাবিয়া যে কয় বৎসর বাচিব, সুখে কাটাইতে পারিব।” তা কি পারা যায় রে মুর্থ! একবার দেখিয়া অমন হইলে, আর একবার দেখিতে ইচ্ছা করে ! দুপুরবেলা গঙ্গারাম ভাবিতেছিল, একবার যে দেখি য়াছি, আমি তাই ভাবিয়া যে কয় বৎসর বাচি, সেই কয় বৎসর সুখে কাটাইতে পারিব—কিন্তু সন্ধ্যাবেলা ভাবিল—“আর একবার কি দেখিতে পাইব না ?”— রাত্রি দুই চারি দণ্ডের সময় গঙ্গারাম ভাবিল, “আজ আবার মুরলা আসে না ?” রাত্রি প্রহরেকের সময়ে মুরলা তাহাকে নিভৃত স্থানে গিরেফতার করিল। গঙ্গারাম জিজ্ঞাসা করিল, “কি খবর ?" মুরলা ! তোমার খবর কি ? গঙ্গা । কিসের খবর চাও ? মুরলা । বাপের বাড়ী যাওয়ার ? গঙ্গা । আবশ্যক হক্টবে না বোধ হয় । রাজ্যরক্ষ। হুইবে । মুরলা । কিসে জানিলে ? গঙ্গা । তা কি তোমায় বল যায় ? মুরল । তবে আমি এই কথ। বলি গে ? গঙ্গা । বল গে । মুরল। যদি আমাকে আবার পাঠান ? গঙ্গা । কাল যেখানে আমাকে ধরিয়াছিলে, সেইখানে আমাকে পাইবে । মুরল চলিয়া গিয় রাষ্ট্ৰীসমীপে সংবাদ নিবেদন করিল। গঙ্গারাম কিছুই পুলিন বলে নাই, সুতরাং রমাও কিছু বুঝিতে পারিল না। না বুঝিতে পারির। আবার ব্যস্ত হইল। আবার মুরল গঙ্গারামকে ধরিয়া লইয়া তৃতীয় প্রহর রারে রমার ঘরে অনিয়া উপস্থিত করিল। সেই পাতারাওয়ালা সেইখানে ছিল, আবার গঙ্গারাম মুরলীর ভাই বলিয়া পার হইল । . গঙ্গারাম, রমার কাছে আসিয়া মাথমুণ্ড কি বলিল, তাহ গঙ্গারাম নিজেই কিছু বুঝিতে পারিল নুkরম ত নয়ই। আসল কথা, গঙ্গারামের মাথা মুণ্ড তখন কিছুই ছিল না, সেই ধনুৰ্দ্ধর ঠাকুর ফুলের বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী । বাণ মারিয়া তাহ উড়াইয়া লইয়া গিয়াছিলেন । কেবল তাহার চক্ষু দুইটি ছিল, প্রাণপাত করিয়া গঙ্গারাম দেখিয়া লইল, কান ভরিয়া কথা শুনিয়া লইল, কিন্তু তৃপ্তি হইল না । গঙ্গারামের এতটুকুমাত্র চৈতন্য ছিল যে, চন্দ্রচূড় ঠাকুরের কলকৌশল রমার সাক্ষাতে কিছুই সে প্রকাশ করিল না । বস্তুতঃ কোন কথা প্রকাশ করিতে সে আসে নাই, কেবল দেখিতে আসিয়াছিল । তাই দেখিয়া, দক্ষিণস্বরূপ আপনার চিত্ত রমাকে দিয়া চলিয়া গেল ! আবার মুরলা তাহাকে বাহির করিয়া দিয়া আসিল । গমনকালে মুরলা গঙ্গারামকে বলিল, “আবার আসিবে ?” গঙ্গা । কেন আসিব ? মুরল বলিল, “আসিবে বোধ হইতেছে।” গঙ্গারাম চোখ বুজিয়া পিছল পথে প। দিয়াছে –কিছু বলিল না । এ দিকে চন্দ্রচূড়ের কথায় তোরাব, গ। উত্তর পাঠাইলেন, “যদি অল্পস্বল্প টাকা দিলে মূলুক ছাড়ির দাও, তবে টাকা দিতে রাজি আছি । কিন্তু সীতারামকে ধরিয়া দিতে হুইবে ।” চন্দ্রচূড় উত্তর পাঠাইলেন, সীতারামকে ধরাষ্টয়া দিব, কিন্তু অল্প টাকায় হুইবে ন৷ ” ভোরাব, গ। বলিয়। পাঠাইলেন, “কত টাকা চাও ?” চন্দ্রচূড় একটা চড়া দর চাকিলেন ; তোরাব খ একটা নরম দর দিল্লী পাঠাইলেন । তার পর চন্দ্রচূড় কিছু নামিলেন, তোরাব, খ৷ তদুত্তরে কিছু উঠিলেন । চন্দ্রচূড় এষ্টরূপে মুসলমানকে ভুলাইয়। রাখিতে লাগিলেন । সপ্তম পরিচ্ছেদ কালামুখী মুরলা যা বলিল, তাই হইল । গঙ্গারাম আবার রমার কাছে গেল । তার কারণ, গঙ্গারাম না গিয়া আর থাকিতে পরিবে না। রমা আর ডাকে নাই, কেবল মধ্যে মধ্যে মুরলাকে গঙ্গারামের কাছে সংবাদ লষ্টতে পাঠাইত । কিন্তু গঙ্গারাম মুরলার কাছে কোন কথাই বলিত না, বলিত, “তোমাদের বিশ্বাস করিয়া এ সকল গোপন কথা কি বলা যায় ? আমি এক দিন নিজে গিয়া বলিয়া আসিব ।” কাজেই রমা আবার গঙ্গারামকে ডাকিয়া পাঠাইল—মুসলমান কবে আসিবে, সে বিষয়ে খবর