পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/১৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সীতারাম না জানিলে রমার প্রাণ বঁাচে না—যদি হঠাৎ এক দিন দুপুরবেলা খাওয়া-দাওয়ার সময় আসিয়া পড়ে ? কাজেই গঙ্গারাম আবার আসিল । এবার গঙ্গারাম সাহস দিল না—বরং একটু ভয় দেখাইয়া গেল। যাহাতে আবার ডাক পড়ে তার পথ করিয়া গেল। রমাকে আপনার প্রাণের কথা বলে, গঙ্গারামের সে সাহস হয় না—সরল রমা তার মনের সে কথা অণুমাত্ৰ বুঝিতে পারে না । তl, প্রেমসম্ভাষণের ভরসায় গঙ্গারামের যাতায়াতের চেষ্ট। নয় । গঙ্গারাম জানিত, সে পথ বন্ধ । তবু শুধু দেখিয়া, কেবল কথাবাৰ্ত্ত কহিয়াই এত আনন্দ ! একে ভালবাস বলে না --তাহ কষ্টলে গঙ্গারাম কখন রমাকে ভয় দেখাইয়া, যাতাতে তাহার যন্ত্রণ। বাড়ে, তাহা করিয়া যাইতে পারিত না । এ একটা সৰ্ব্বাপেক্ষ নিকষ্ট চিত্তবুন্তি সাহার হৃদয়ে প্রবেশ করে, তার সর্বনাশ করিয়া ছাড়ে । এই গ্রন্থে তাহার প্রমাণ আছে । ভয় দেখাইয়া গঙ্গারাম চলিলা গেল । রম তখন বাপের বাড়ী যাইতে চাহিল, কিন্তু গঙ্গারাম আজি কালি নহে বলিয়া চলিয়া গেল । কাজেই তাড়কাল বাদে রম ত্যাবার গঙ্গারামকে দ্রাকাইল । আবার গঙ্গারাম আসিল । এই রকম চলিল । একেবারে “পরি মাছ, ন৷ ছু ই পানি” চলে ন! । রমার সঙ্গে লোকালয়ে সদি গঙ্গারামের পঞ্চাশবার সাক্ষাৎ হইত, তাহ হইলে কিছুষ্ট দোষ তইত না, কেন না, রমার মন বড় পরিষ্কার, পবিত্র । কিন্তু এমন ভয়ে ভয়ে, অতি গোপনে. রাত্রি তৃতীয় প্রহরে সাক্ষাৎট ভাল নহে । আর কিছু হউক না হউক, একটু বেশী আদর, একটু বেশী খেল। কথা, কথ। বাৰ্ত্তায় একটু বেশী অসাবধানত, একটু বেশী মনের মিল হইয় পড়ে। তাহা হইল না যে, এমন নহে । রম তাহ আগে বুঝিতে পারে নাই । কিন্তু মুরলার একটা কথ। দৈববাণীর মত তাহার কানে লাগিল । এক দিন মুরলার সঙ্গে পাড়ে ঠাকুরের সে বিষয়ে কিছু কথা হইল। পাড়ে ঠাকুর বলিলেন, “তোমার ভাই হামেশা রাতকে। ভিতরমে যায়৷ আয় কর্তা হৈ কাহেকো ?” মু। তোর কি রে বিটুলে ? খ্যাংরার ভয় নেই ? পাড়ে । ভয় ত হৈ, লেকেন জানকীভী ডর হৈ । মু। তোর আবার আরও জান আছে না কি ? আমিই তো তোর জান্‌ ! లి পাড়ে । তোমৃ ছোড়নেসে মরেঙ্গে নেহি, লেকেল্‌ ৷ জান ছোড়নেসে সব অঁাধিয়ারা লাগেগী। তোমারা । ভাইকে হম্ ষ্টর ছোড়েঙ্গে নেহি । মু তা না ছোড়িস, আমি তোকে ছোণ্ডেঙ্গে । কেমন, কি বলিস্ ? পাড়ে । দেখে, বহু আদমি তোমারা ভাই নেহি, কোষ্ট বড়ে আদমী হোগা, বস্থা হিঁয়া কিয়া কাম, হামকে কুচ্চ মালুম নেহি । মালুম হোনেভি কুছ জরুরী নেহি কিল্লা জানে, বঙ্গ অনদরকা খবরদারিকে লিয়ে তাত মাতা তৈ । তীে ভী, যব, পুষিদ হোকে আতে, যাতে তব হম লোগ কে কুছ মিলুন চাহিয়ে । তোমকে কুছ মিল হোগা—আধা হামকে দে দেও, হম্ নেহি কুছ বোলেঙ্গে । মু। সে আমায় কিছু দেয় নাই। পাইলে দিব । পাড়ে । আপ করকে লে লেও । মূরল ভাবিল, এ সৎপরামর্শ। রাণীর কাছে গহনাখানা, কাপড়খানা, মূরলার পাওয়া হইয়াছে, কিন্তু গঙ্গারামের কাছে কিছু হয় নাই । অতএব পদি খাটাইয় পড়েজীকে বলিল, “আচ্ছ, এবার যে দিন আসিবে, তুমি ছাড়িও না, আমি বলিলেও ছাড়িও না । তা হলে কিছু আদায় হইবে।” তার পর যে রাত্ৰিতে গঙ্গারাম পুরপ্রবেশার্থ আসিল, পাড়েজী ছাড়িলেন না । মুরলা অনেক বকিল ঝকিল, শেষ অমৃনয়-বিনয় করিল, কিছুতেই ন! ! গঙ্গারাম পরামর্শ করিলেন, পাড়ের কাছে প্রকাশ হইবেন । নগররক্ষক জানিতে পারিলে, পাড়ে আর আপত্তি করিবে না । মুরল বলিল, “আপত্তি করিবে না ; কিন্তু লোকের কাছে গল্প করিবে । এ আমার ভাই সায় আসে, গল্প করিলে যা দোষ অামার ঘাড়ের উপর দিয়া ঘাইবে ।” কথ। যথার্থ বলিয়। গঙ্গারাম স্বীকার করিলেন । তার পর গঙ্গারাম মনে করিলেন, “এটাকে এইখানে মারিয়া ফেলিয়। দিয়া যাই ।” কিন্তু তাতে আরও গোল হয় ত একেবারে এ পথ বন্ধ হইয়া যাইবে ।” সুতরাং নিরস্ত হইলেন । পাড়ে কিছুতেই ছাড়িল না, সুতরাং সে রানিতে ঘরে ফিরিয়া যাইতে হইল । মুরল। এক ফিরির আসিলে রাণী জিজ্ঞাসা করিলেন, “তিনি কি আজি আসিবেন না ?” মূ। তিনি আসিয়াছিলেন-পাহারাওয়াল ছাড়িল না । রাণী । রোজ ছাড়ে, আজ ছাড়িল না কেন ? মু। তার মনে একটা সন্দেহ হইয়াছে। রাণী । কি সন্দেহ ?