পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/১৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

, ” ༧ ༣༣༥ মু। আপনার শুনিয়া কাজ কি ? সে সকল আপনার সাক্ষাতে আমরা মুখে আনিতে পারি না । তাহাকে কিছু দিয়া বশীভূত করিতে পারিতে ভাল হয় । যে অপবিত্র, সে পবিত্রকে আপনার মত "বিবেচনা করিয়া কাজ করে, বুঝিতে পারে না যে, পবিত্র মানুষ আছে, সুতরাং তাহার কার্য্য ধ্বংস হয় । মুরলার কথা শুনিয়া রমার গা দিয়া ঘাম বাহির হইতে লাগিল । রম ঘামিয়া, কাপিয়া, বসিয়৷ * পড়িল বসিয়া শুইয়। পড়িল, শুইয়। চক্ষু বুজিয়৷ অজ্ঞান হইল । এমন কথ। রমার মনে এক দিনও হয় নাই । আর কেহ হইলে মনে আসিত, কিন্তু রমা এমনই ভয়বিহ্বল হইয়। গিয়ছিল যে, সে দিকৃট একেবারে নজর করিয়া দেখে নাই । এখন বজ্রাঘাতের মত কথাটা বুকের উপর পড়িল । দেখিল, ভিতরে যাই থাক, বাহিরে কথাট। ঠিক । মনে ভাবিয়া দেখিল, বড় অপরাধ হইয়াছে রমার স্থূলবুদ্ধি, তবু স্ত্রীলোকের, বিশেষতঃ হিন্দুর মেরের একটা বুদ্ধি আছে, যাহ। একবার উদয় হইলে এ সকল কথা বড় পরিষ্কার হচয় থাকে । ঘন্ত কথা ৰাৰ্ত্ত হইয়াছিল, রম মনে করিয়া দেখিল,—বুঝিল, বড় অপরাধ হইয়াছে । তখন রম। মনে ভাবিল, বিষ খাইব কি গলায় ছুরি দিব ? ভাবিয়। চিন্তিয়৷ স্থির করিল, গলায় ছুরি দেওয়াই উচিত, তাহ হইলে সব পাপ চুকিয়া যায়, মুসলমানের ভয়ও ঘুচিয়া যায়, কিন্তু ছেলের কি হইবে ? রম। শেষে স্থির করিল, রাজা আসিলে গলায় ছুরি দেওয়৷ যাইবে, তিনি আসিয়া ছেলের বন্দোবস্ত যা হয় করিবেন-তত দিন "মুসলমানের হাতে যদি লাচি। মুসলমানের হাতে ত বাচিব না নিশ্চিত, তবু গঙ্গারামকে স্থার ডাকিব না, কি লোক পাঠাইব ন! I ত রম আর গঙ্গারামের কাছে লোক পাঠাইল নাকি মুরলাকে বাইতে দিল না । মুরলা আর আসে না, রম। আর ডাকে না, গঙ্গারাম অস্থির হইল । আহার-নিদ্র। বন্ধ হইল । গঙ্গা রাম মুরলার সন্ধানে ফিরিতে লাগিল । কিন্তু মুরলা রাজবাটীর পরিচারিক। --রাস্ত ঘাটে সচরাচর বাহির হয় না, কেবল মহিষীর হুকুমে গঙ্গারামের সন্ধানে বাহির হইয়াছিল । গঙ্গারাম মুরলার কোন সন্ধান পাইলেন না । শেষে নিজে এক দৃর্তী খাড়া করিয়৷ মুরলার কাছে পাঠাইলেন—তাকে ডাকিতে । রমার কাছে পাঠাইতে সাহস হয় না । মুরলা আসিল—জিজ্ঞাসা করিল, “ডাকিয়াছ কেন ?” গঙ্গারাম। আর খবর নাও না কেন ? இல் বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী মুরল। ! জিজ্ঞাসা করিলে খবর দাও কই ? আমাদের ত তোমার বিশ্বাস হয় না ? গঙ্গা । তা ভাল, আমি গিয়াও ন হয় বলিয়া আসিতে পারি । মুরলা । তাতে, ষে ফল নৈবেদ্যতে দেয়, তার আটিট ! গঙ্গা । সে আবার কি ? মুরলা । ছোট রাণী আরাম হইয়াছেন । গঙ্গা । কি হইয়াছিল যে, আরাম হইয়াছেন ? মুরলা । তুমি আর জান না, কি হইয়াছিল ? গঙ্গা । লা । মুরল । দেখ নাই, বাতিকের ব্যামো ? গঙ্গা । সে কি ? মুরল । নইলে তুমি অন্দরমহলে ঢুকিতে পাও ? গঙ্গা । কেন, আমি কি ? মুরল । তুমি কি সেখানকার যোগ্য ? গঙ্গা । আমি তবে কোথাকার সোগা ? মুরল । এই ছেড়া ঠাচলের—বাপের বাড়ী লষ্টয়া সাইতে হয় ত আমাকে লইয়। চল, অনেক দিন বাপ-ম! দেখি নাই । - এই বলিয়া মুরল হাসিতে হাসিন্তে ঢলিয়া গেল । গঙ্গারাম বুঝিলেন, এ দিকে কোন ভরসা নাই । ভরসা নাই, এ কথ। কি কখন মন বুঝে ? যতক্ষণ পাপ করিবার শক্তি থাকে, ততক্ষণ যার মন পাপে রত হুষ্টয়াছে, তার ভরসা থাকে । “পুথিবীতে যত পাপ থাকে, সব আমি করিব, তবু আমি রমাকে ছাড়িব ন৷ ”—এই সঙ্কল্প করিয়৷ ক্ৰতঘ্ন গঙ্গারাম ভীষণমূৰ্ত্তি হইয় আপনার গৃহে প্রত্যাগমন করিল । সেই রাত্রে ভাবিয়। ভবিয়া গঙ্গারাম রম ও সাতারামের সৰ্ব্বনাশের উপায় চিন্তা করিল ! অষ্টম পরিচ্ছেদ অনেক দিন পরে ঐ ও জয়ন্তী বিরূপাতীরে, ললিতগিরির উপত্যকায় আসিয়াছে। মহাপুরুষ আসিতে বলিয়াছিলেন, পাঠকের স্মরণ থাকিতে পারে। তাই তই জনে আসিয়া উপস্থিত । মহাপুরুষ কেবল জয়ন্তীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করিলেন —ত্রীর সঙ্গে নহুে ৷ জয়ন্তী এক হস্তিগুম্ফামধ্যে প্রবেশ করিল—শ্ৰী ততক্ষণ বিরূপাতীরে বেড়াইতে লাগিল । পরে শিখরদেশে আরোহণ করিয়া, চন্দনবৃক্ষতলে উপবেশন করিয়া নিয়ে ভূতলস্থ নদীতীরের