পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/১৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

මේ8 মহারাজাধিরাজ লইয়া সুখী হুইবে ? রাজরাণীগিরি চাকরী তোমার শিষ্যার যোগ্য নহে । - জয়ন্তী। আমার শিষ্যার আবার সুখদুঃখ কি ? ; (পরে সহাস্তে ) ধিক এমন শিস্যায়ু ! o, ঐ । আমার সুখদুঃখ নাই, কিন্তু তাহার আছে । যখন দেখিবেন, তাহার ঐ মরিয়া গিয়াছে, তাহার দেহ লইয়া এক জন সন্ন্যাসিনী প্রবঞ্চন। করিয়া বেড়াইতেছে, তখন কি তার দুঃখ হইবে না ? জয়ন্তী ৷ হইতে পারে, ন হইতে পারে । সে সকল কথার বিচারে কোন প্রয়োজন নাই । যে অনন্তসুন্দর কৃষ্ণপাদপদ্মে মন স্থির করিয়াছে, তাই ছাড়া আর কিছুষ্ট তাহার চিত্তে যেন স্থান না পায় তাহ হইলে সকল দিকেই ঠিক কাজ হইবে । এক্ষণে চল, তোমার স্বামীর হউক কি যাহারই হউক, যখন শুভসাধন করিতে হইবে, তখন এখনই যাত্রা করি । যতক্ষণ এই কথোপকথন হুইতেছিল, তভক্ষণ জয়ন্তীর হারু দুইটা ত্ৰিশূল ছিল। শ্ৰী জিজ্ঞাস করিল, “ত্রিশূল কেন ?" “মহাপুরুষ আমাদিগকে ভৈরবীবেশে যাইতে বলিয়া দিয়াছেন । এই দুইটি ত্ৰিশূল দিয়াছেন । বোধ হয়, ত্রিশূল মন্ত্রপূত " + তখন দুই জনে ভৈরবীবেশ গ্ৰহণ করিল এবং উভয়ে পৰ্ব্বত অবরোহণ করিয়া বিরূপাতীরবর্তী পথে গঙ্গাভিমুখে চলিল। পথিপাশ্ববৰ্ত্ত বন হইতে বন্যপুষ্প চয়ন করিয়া উভয়ে তাহার দল, কেশর, রেণু প্রভূতি তন্ন তন্ন করিয়া পরীক্ষা করিতে করিতে এবং পুষ্পনিৰ্ম্মাতার অনন্ত কৌশলের অনন্ত মহিমা কীৰ্ত্তন করিতে করিতে চলিল সীতারামের নাম আর কেহ একবারও মুখে আনিল না । এ পোড়ারমুখীদিগকে জগদীশ্বর কেন রূপযেীবন দিয়াছিলেন, তাহ। তিনিই জানেন, আর যে গণ্ডমূর্খ সীতারাম শ্ৰী ! শ্ৰী ! করিয়া পাতি পাতি করিল, সেই বলিতে পারে । পাঠক বোধ হয়, দুইটাকেই ডাকিনী-শ্রেণীমধ্যে গণ্য করিবেন । তাহাতে গ্রন্থকারের সম্পূর্ণ মত আছে । নবম পরিচ্ছেদ বন্দে আলি নামে ভূষণার এক জন ছোট মুসলমান, এক জন বড় মুসলমানের কবিলাকে বাহির করিয়া তাহাকে নেকা করিয়াছিল । খসম গিয়া বলপূৰ্ব্বক অপহৃত সীতার উদ্ধারের উদ্যোগী হইল। • আধুনিক ভাষায় “magnetized.” বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী দোস্ত বিবি লইয়া মহম্মদপুরে পলায়ন করিয়া তথায় বাস করিতে লাগিল। গঙ্গারামের নিকট সে পূৰ্ব্ব হইতে পরিচিত ছিল । র্তাহার অনুগ্রহে সে সীতারামের নাগরিক সৈন্যমধ্যে সিপাহী হইল । গঙ্গারাম তাহাকে বড় বিশ্বাস করিতেন । তিনি এক্ষণে গোপনে তাহাকে তোরাব, খার নিকট পাঠাইলেন । বলিয়া পাঠাইলেন, “চন্দ্রচূড় ঠাকুর বঞ্চক । চন্দ্রচূড় যে বলিতেছেন যে, টাকা দিলে হামি মহম্মদপুর ফোঁজদারের হস্তে দিব, সে কেবল প্রবঞ্চনাবাক্য ! প্রবঞ্চনার দ্বারা কালহরণ করাই তাহার উদ্দেশ্য । যাহাতে সীতারাম আসিয়া পেীছ, তিনি তাহাই করিতেছেন । নগরও তাহার হাতে নয় । তিনি মনে করিলেও নগর ফৌজদারকে দিতে পারেন না । নগর আমার হাতে । আমি ন দিলে নগর কেহ পাইবে না, সীতারামও না । আমি ফৌজদারকে নগর ছাড়িয়া দিতে পারি। কিন্তু তাহার কথাবাৰ্ত্ত আমি ফৌজদার সাহেবের সহিত স্বয়ং কহিতে ইচ্ছা করি—নহিলে হুইবে না । কিন্তু আমি ত ফেরারী আসামী— প্রাণ ভয়ে যাইতে সাহস করি না । ফৌজদার সাহেব তাভয় দিলে যাইতে পারি !" গঙ্গারামের সৌভাগ্যক্রমে বন্দে আলির ভগিনী এক্ষণে তোরাব, গার এক জন মতাহিয়া বেগম । সুতরাং ফৌজদারের সঙ্গে সাক্ষাৎলাভ বনে-আলির পক্ষে কঠিন হইল না । কথাবাৰ্ত্ত ঠিক হইল । গঙ্গারাম অভয় পাইলেন । তোরাব, স্বহস্তে গঙ্গারামকে এই পত্র লিখিলেন,— “তোমার সকল কসুর মাফ করা গেল । রাত্রিকালে হুজুরে হাজির হইবে ।" বন্দে আলি ভূষণ হইতে ফিরিল । যে নৌকায় সে পার হইল, সেই নৌকায় চাদ শাহ ফকীর— সেও পার হইতেছিল । ফকির বনে-আলির সঙ্গে কথোপকথনে প্রবৃত্ত হইল - “কোথায় গিয়াছিলে ?” জিজ্ঞাসা করায় বন্দে আলি বলিল, “ভূষণায় গিয়াছিলাম । ফকার ভূষণার খবর জিজ্ঞাসা করিল। বন্দে-আলি ফৌজদারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করিয়া আসিয়াছে, সুতরাং একটু উচু মেজাজে ছিল। ভূষণার খবর বলিতে একেবারে কোতোয়াল, বখশী, মুনসী, কারকুন, পেস্কার, লাগায়েৎ খোদ ফৌজদারের খবর বলিয়! ফেলিল। ফকীর বিস্মিত হইল । ফকীর সীতারামের হিতাকাঙ্ক্ষী । সে মনে মনে স্থির করিল, “আমাকে একটু সন্ধানে থাকিতে হইবে।” ক’ল