Ա : করিতাম, তাহা হইলে এই রাজ্যে এক জনও এত দিন টিকিত না । চন্দ্র । আমি বলিতেছি ন৷ ষে, আপনি কাহারও মৃত্যুকামনা করেন । কিন্তু আপনি মৃত্যুকামনা না করিলেও, যে আপনার রক্ষণীয়, তাহাকে আপনি যত্ন ও বৃক্ষ না করিলে, কাজেই তাহার মৃত্যু উপস্থিত হইবে । কেবল ছোট রাণী কেন, আপনার তত্ত্ববধানের অভাবে বুঝি সমস্ত রাজ্য যায় । কথাটা আপনাকে বলিবার জন্য কয় দিন হইতে আমি চেষ্ট। করিতেছি, কিন্তু আপনার অবসর অভাবে তাহ বলিতে পারি নাই । שף রাজা মনে মনে বলিলেন, “সকল বেটাই বলে— তত্ত্বাবধানের অভাব—বেটার করে কি ?’ প্রকাশ্বে বলিলেন, “তত্ত্বাবধানের অভাব –আপনার করেন কি ?” চন্দ্র । ষা করিতে পারি, সব করি । তবে আমরা রাজা নহি । বেট রাজার হুকুম নহিলে সিদ্ধ হয় না, সেইটুকু পারি না । আমার ভিক্ষ, কাল প্রাতে একবার দরবারে বসেন, তামি আপনাকে সবিশেষ অবগত করি, কাগজপত্র দেখাই ! আপনি রাজ-আজ্ঞা প্রচার করিবেন । রাজা মনে মনে বলিলেন, “তোমার গুরুগিরির কিছু বাড়াবাড়ি হইয়াছে—আমারও ইচ্ছা, তোমায় কিছু শিখাই " প্রকাশ্বে বলিলেন, “বিবেচনা করা যাইবে ।” চন্দ্রচূড়ের তিরস্কারে রাজার সব্বাঙ্গ জলিতেছিল, কেবল গুরু বলিয়া সীতারাম ঠাহীকে বেশী কিছু বলিতে পারেন নাই । কিন্তু রাগে সে রাত্রি নিদ্র। গেলেন না । চন্দ্রচুড়কে কিসে শিক্ষা দিবেন, সেই চিন্তা করিতে লাগিলেন । প্রভাতে উঠিয়াই প্রাতঃকৃত্যু সমস্ত সমাপন করিয়া দরবারে বসিলেন । চন্দ্রচূড় খাতাপত্রের রাশি আনিয়া উপস্থিত করিলেন । চতুর্দশ পরিচ্ছেদ যে কথাটা চন্দ্রচুড় রাজাকে জানাইতে ইচ্ছা করিয়াছিলেন, তাহা এই । যত বড় রাজ্য হউক না কেন, আর যত বড় রাজা হউক না কেন, টাক। নইলে কোন রাজ্যই চলে না । আমরা এ কলে দেখিতে পাই, যেমন তোমার আমার সংসার টাকা নহিলে চলে না—তেমনই - ইংরেজের এত বড় রাজ্যও টাকা নহিলে চলে না । টাকার অভাবে রোমক لأطة সাম্রাজ্য লোপ পাইল--প্রাচীন সভ্যতা অন্ধকারে মিশাইল । সীতারামের সহসা টাকার অভাব হইল । সীতারামের টাকার অভাব হওয়| অসুচিত । কেন না, সীতারামের আয় অনেক গুণ বাড়িয়াছিল । , ভূষণার ফৌজদারীর এলাক। তাহার করতলস্থ হইয়াছিল—“বারোভইয়। র্তাহার *বশে আসিয়াছিল । তচ্ছাসিত প্রদেশ সম্বন্ধে দিল্লীর বাদশাহের প্রাপ্য ষে কর, সীতারামের উপর তাহার আদায়ের ভার হইয়াছিল । সীতারাম এ পর্ম্যস্ত তাহার এক কড়াও মুর্শিদাবাদে পাঠান নাই—যাহ। আদায় করিয়াছিলেন, তাহা নিজে ভোগ করিতেছিলেন । তবে টাকার অকুলীন কেন ? লোকের আয়ু বাড়িলেই অকুলীন হইয় উঠে । কেন ন খরচ বাড়ে । ভূষণ বশে আনিতে কিছু খরচ হইয়াছিল--বারোভূইয়াকে বশে আনিতে কিছু খরচ হইয়াছিল । এখন অনেক ফৌজ রাখিতে ইষ্টত –কেন না, কখন ..ক বিদ্রোহী হয়, কখন কে আক্রমণ করে সে জন্যও ব্যয় হইতেছিল । অতএব যেমন আয়, তেমনই ব্যয় বটে । কিন্তু যেমন আয়, তেমনই বায় হইলে আকুলান হয় না । অকুলানের আসল কারণ চুরি । রাজা এখন আর কিছু দেখেন না, চিত্তবিশ্রামেই দিনপাত করেন, কাজেই রাজপুরুষের রাজভাণ্ডারের টাক লইয়। যাহার যাহা ইচ্ছা, সে তাহাই করে,-কে নিষেধ করে ? চন্দ্রচূড় ঠাকুর নিষেধ করেন, কিন্তু তাহার নিষেধ কেহই মানে না । চন্দ্রচূড় জন কত বড় বড় রাজকৰ্ম্মচারীর চুরি ধরিলেন, মনে করিলেন, এবার মে দিন রাজা দরবারে বসিবেন, সেই দিন খাতাপত্র সকল তাহার সম্মুখে ধরিয়া দিবেন । কিন্তু রাজা কিছুতেই ধরা দেন না, “কাজ ষ থাকে, মহাশয় করুন" বলিয়া কোনমতে পাশ কাটাইয়। চিত্তবিশ্রামে পলায়ন করেন । চন্দ্রচূড় হতাশ হইয়া শেষে নিজেই কয়জনের বরতরফের হুকুম জারি করিলেন । তাহারা তাহাকে হাসিয়া উড়াইয়। দিল,—বলিল, “ঠাকুর । যখন স্মৃতির ব্যবস্থ। প্রয়োজন হইবে, তখন আপনার কথা শুনিব । রাজার সহি মোহরের পরওয়ানা দেখান, নহিলে ঘরে গিয়া সন্ধ্যাহিক করুন ।” রাজার সহি মোহর পাওয়া কিছু শক্ত কথা নহে । এখন রাজার কাছে যা হয়, একখান! কাগজ ধরিয়া দিলেই তিনি সহি দেন–পড়িবার অবকাশ হয় না—চিত্তবিশ্রামে যাইতে হইবে । চন্দ্রচূড় সেই
পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/২২১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।