পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দুর্গেশনন্দিনী বি । ও সব তোমায় কিনে দিব । ব্রাহ্মণ কিছু ক্ষুণ্ণ হইলেন ; কি করেন, স্ত্রীলোকের মনে করিবে, আমাদের ভালবাসে না, অভাবপক্ষে বলিলেন, “খুঙ্গীপুতি ?” বিমলা বলিলেন, “শীঘ্ৰ লও ” বিদ্যাদিগগজের সবে দুখানি পুতি,--ব্যাকরণ আর একখানি স্মৃতি । ব্যাকরণখানি হস্তে লইয়। বললেন, “এখানিতে কাজই বা কি, এ ত আমার কণ্ঠে আছে ” এই বলিয়া কেবল স্মৃতিখানি খুর্থীর মধ্যে লইলেন । “দুর্গ শ্রীহরি' বলিয়। বিমল ও আশমানীর সহিত যাত্র করিলেন । আশমানী কহিল,-"তোমরা অা গু হও, আমি পশ্চাৎ যাইতেছি ।” এষ্ট বলিয়। আশধনী গুঙ্গে গেল ; বিমলা ও গজপতি একত্রে চলিলেন : অন্ধকারে উভয়ে অলক্ষ্য থাকিয় দুর্গদ্বারের বাহির হটলেন । কিযুদ্র গমন করিয়া দিগ গঞ্জ কঠিলেন,--“কৈ, আশমানী আসিল না ?” বিমল কহিলেন, “সে বুঝি আসিতে পারিল না । আবার তাকে কেন ?" রসিকরাজ নীরব হক্টর রহিলেন । ক্ষণেক পরে নিশ্বাস ত্যাগ করিয়া কহিলেল,-“তৈজসপত্র !” পঞ্চদশ পরিচ্ছেদ দিগগজের সাহস বিমলা দ্রুতপাদবিক্ষেপে শীঘ্র মালদারণ পশ্চাৎ করিলেন ; নিশা অত্যন্ত অন্ধকার, নক্ষত্রালোকে সাবধানে চলিতে লাগিলেন । প্রান্তরপথে প্রবেশ করিয়া বিমলা কিঞ্চিৎ শঙ্কান্বিত হইলেন ; সমভিব্যাহারী নিঃশব্দে পশ্চাৎ পশ্চাৎ আসিতেছেন, বাক্যব্যয়ও নাই । এমন সময়ে মনুষ্যের কণ্ঠস্বর শুনিলে কিছু সাহস হয়, শুনিতে ইচ্ছাও করে । এই জন্য বিমলা গজপতিকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “রসিকরতন ! কি ভাবিতেছ?” রসিকরভন বলিলেন,—“বলি, তৈজসপত্রগুল ?” বিমলা উত্তর না দিয়া মুখে কাপড় দিয়া হাসিতে লাগিলেন । ক্ষণেককাল পরে, বিমলা আবার কথা কহিলেন, “দিগগজ, তুমি ভূতের ভয় কর ?” “রাম । রাম । রাম । রাম নাম বল” বলিয়া দিগগজ বিমলার পশ্চাতে দুই হাত সরিয়া আসিলেন । ২৩ একে পায় অারে চায় । বিমলা কহিলেন, “এ পথে বড় ভূতের দৌরাত্ম্য ।” দিগগজ আসিয়া বিমলার অঞ্চল ধরিলেন । বিমলা বলিতে লাগিলেন, —“আমরা সে দিন শৈলেশ্বরের পূজা দিয়া আসিতেছিলাম ; পথের মধ্যে বটতলায় দেখি ষে, এক বিকটাকার মূৰ্ত্তি ” অঞ্চলের তাড়নায় বিমল জানিতে পারিলেন যে, ব্রাহ্মণ থরহরি কঁাপিতেছে ; বুঝিলেন ষে, আর . অধিক বাড়াবাড়ি করিলে ব্রাহ্মণের গতিশক্তি রহিত হুইবে । অতএব ক্ষাস্ত হুইয়া কহিলেন, “রসিকরাজ ! তুমি গাইতে জান ?” রসিক পুরুষ কে কোথায় সঙ্গীতে অপটু ? দিগগজ বলিলেন, “জানি বৈ কি ” বিমল বলিলেন, “একটি গীত গাও দেখি ।” দিগগজ আরম্ভ করিলেন, - “এ হুৰ্ম্ম-উ, হুম্ --সই কি ক্ষণে দেখিলাম হ্যামে কদম্বেরি ডালে ” পথের ধারে একটা গাভী শয়ন করিয়া রোমন্থন করিতেছিল, অলৌকিক শব্দ শুনিয়া বেগে পলায়ন করল । রসিকের গীত চলিতে লাগিল -- “সেই দিন পুড়িল কপাল মোর-- কালি দিলাম কুলে । মাথায় চুড়া, হাতে বঁাশী, কথা কয় হাসি হাসি ; বলে ও গোয়াল মাসী--কলসী দিব ফেলে ?” দিগ সজের আর গান হইল না, হঠাৎ তাহার শ্রবণেন্দ্রিয় একেবারে মুগ্ধ হইয়া গেল, অমৃতময়, মানসোন্মাদকর, অন্সরোহস্তস্থিত বীণাশব্দবৎ মধুর সঙ্গীতধ্বনি তাহার কর্ণকুহরে প্রবেশ করিল। বিমলা নিজে পূর্ণস্বরে সঙ্গীত আরম্ভ করিয়াছিলেন । নিস্তব্ধ প্রান্তরমধ্যে নৈশ গগন ব্যাপিয়া সেই সপ্তস্বর পরিপূর্ণ ধ্বনি উঠিতে লাগিল , শীতল নৈদীঘ পবনে ধ্বনি আরোহণ করিয়া চলিল । দিগগজ নিশ্বাস রহিত করিয়া শুনিতে লাগিলেন । যখন বিমল সমাপ্ত করিলেন, তখন গজপতি কহিলেন, “আবার ” বি । আবার কি ? দি । আবার একটি গাও । বি । কি গায়িৰ ? দি । একটি বাঙ্গালা গাও । “গায়িতেছি” বলিয়া বিমল পুনৰ্ব্বার সঙ্গীত আরম্ভ করিলেন ।