ইন্দির। হারাণী । আচ্ছা, কোন দোষ নাই ত ? আমি। কিছু না । উনি আর জন্মে আমার স্বামী ছিলেন । হারাণী। আর জন্মে, কি এ জন্মে, ঠিক বুঝিতে পারিতেছি না । অামি হাসিয়া বলিলাম, "চুপ ” হারাণী হাসিয়া বলিল, “যদি এ জন্মের হন, তবে আমি পাঁচ শত টাকা বখশিশ নিব ; নহিলে আমার বাটার ঘা ভাল হইবে না ।” তামি সুভাষিণীর কাছে গিয়া এ সকল সংবাদ দিলাম ; সুভাষিণী শাশুড়ীকে বলিয়া আসিল, অজ কুমুদিনীর অসুখ হইয়াছে ; সে রাধিতে পরিবে না, সোনার মাই রাধুক।” সোনার মা রাধিতে গেল । সুভাষিণী আমাকে লইয়া গিয়া সরে কপাট দিল । আমি জিজ্ঞাস করিলাম, “এ কি, কয়েদ কেন?” সুভাষিণী বলিল, “লেমায় সাজাইব ।” তখন আমার মুখ পরিষ্কার করিয়া মুছাইয়। দিল । চুল সুগন্ধ লৈ মাখাইয়া, যত্নে গোপ বাপিয়; দিল ; বলিল, “এ খোপার হাজার টাক। মূল্য, সময় হইলে আমার এ হাজার টাকা পাঠাষ্টয়া দিস " তার পর তা}পনার একখান পরিষ্কার রমণীমনোন্তর বঙ্গ লক্টয়া ভেশর করিয়া পরাইতে লাগিল । সে যেরূপ টানাটানি করিল, বিবস্ত্র হইবার ভয়ে আমি পরিতে বাধ্য হুই লাম । তার পর আপনার অলঙ্কাররাশি তানিয়া পরাইতে ত্যাসিল । আমি বলিলাম, “এ আমি কিছুতেই পরিব ম৷ ” তার জঙ্গ অনেক বিবাদ বাস হুইল-আমি কেনমতেই পরিলাম ন! দেখিয়া, সে বলিল, “তবে, আর এক সুট আনিয়। রাখিয়াছি, তাই পর ” এই বলিয়। স্বভাষিণী একটা ফুলের জডিনিমুর বাহির করিয়! মল্লিকা-কুলের প্রফুল্ল কোরকের বাল। পরাইল, তাতার তাবিজ, তাহারই বাজু, গলায় তারই দোলন-মালা । তার পর এক জোড়া নুতন সোনার ইয়ারিং বাহির করিয়া বলিল, “এ আমি নিজের টাকায় র-বাবুকে দিয়া কিনিয়া আনিয়াছি— তোমাকে দিবার জন্ত ! তুমি যেখানে যখন থাক, এ পরিলে আমাকে তুমি মনে করিবে । কি জানি ভাই, আজ বৈ তোমার সঙ্গে যদি দেখা না হয় – ভগবান তাই করুন,—তাই তোমাকে আজ এই ইয়ারিং পরাইব । এতে আর না’ বলিও না ।” or ২৫: ' বলিতে বলিতে সুভাষিণী কাদিল । আমারও স্থা চক্ষে জল আসিল, আমি আর না বলিতে পারিলাম ন। সুভাষিণী ইয়ারিং পরাইল । সাজ-সজ্জা শেষ হইলে সুভাষিণীর ছেলেকে ঝি . দিয়া গেল । ছেলেটিকে কেলে লইয়। তাহার সঙ্গে গল্প করিলাম । সে একটি গল্প শুনিয়। ঘুমাইয়৷ পড়িল । তার পর মনে একটি দুঃখের কথ৷ উদয় হইয়াছিল, তাও এ দুঃখের মাঝে সুভাষিণীকে না বলিয়৷ থাকিতে পারিলাম না । বলিলাম, "আমি আলাদিভ হইয়াছি, কিন্তু মনে মনে তঁহাকে একটু নিন্দ করিতেছি । আমি চিনিয়াছি যে, তিনি আমার স্বামী এই জন্য আমি যাহা করিয়াছি, তাহাতে আমার বিবেচনায় দোষ নাই । কিন্তু তিনি সে আমাকে চিনিতে পারিয়াছেন, এমন কেনমতেই সন্তবে না । আমি তাহাকে বয়ঃপ্রাপ্ত অবস্থায় দেখিয়াছিলাম । এ জন্য আমার প্রথমেই সন্দেহ হইয়াছিল । তিনি তামাকে একাদশ বৎসরের বালিক দেখিয়াছেন মাত্র । তিনি আমাকে চিনিতে পারিয়াছেন, এমন কোন লক্ষণও দেখি নাই । অতএব তিনি আমাকে পরস্ত্রী জানিয়; আমার প্রণয়।শায় লুব্ধ হইলেন, শুনিয়া মনে মনে বড় নিন্দ করিতেছি । কিন্তু তিনি স্বামী, আমি স্ত্রী,—ষ্টাহাকে মন ভাবা তামার অকৰ্ত্তব্য বলিয়। সে কথার আলোচন করিব না । মনে মনে সঙ্কল্প করিলাম, যদি কখনও দিন পাই, তবে এ স্বভাব ত্যাগ করাইব ।" সুভাষিণী আমার কথ। শুনিয়া বলিল, “তোর মন্ত সাদর গাছে নেই, ওঁর সে স্ত্রী নেই ।” আমি ! আমার কি স্বামী আছে না কি ? সুভ ! অ’ মলে। ! মেয়েমানুষে পুরুষমানুষে সমান ? তুই কমিসেরিয়েটে কাজ ক'রে টাকা নিয়ে আয় না দেখি ? আমি । ওর পেটে ছেলে ধরিয়া প্রসব করুক, আমি কমিসেরিয়েটে যাইব । যে যা পারে, সে ত৷ করে । পুরুষমাতুষের ইন্দ্রিয়দমন কি এতই শক্ত ? মুভী । আচ্ছ, আগে তোর ঘর হোক, তার পর তুই ঘরে আগুন দিস ও সব কথা রাখ, কেমন ক’রে স্বামীর মন ভুলাবি, তার একজামিন দে দেখি ? তা নইলে ত তোর গতি নেই। আমি একটু ভাবিত হইয়। বলিলাম, “সে বিদ্য৷ ত কখনও শিখি নাই ।” সু । তবে আমার কাছে শেখ । আমি এ শাস্ত্রে পণ্ডিত, তা জানিস ? আমি । তা ত দেখিতে পাই ।
পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/২৬৫
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।