পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/২৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ইন্দির হুঁ ৷ এখন সাম্লেছেন। আমি । তার পর ? হা । এখন বড় অবসন্ন—বাসায় যাইতে পারিলেন না । এইখানে বড় বৈঠকখানার পাশের ঘরে শুইলেন । বুঝিলাম, এ কৌশল। বলিলাম, “আলো সব নিবিলে, সবাই শুইলে আসিব ।” হারাণী বলিল, “অমুখ যে গ৷ ” আমি বলিলাম, “অমুখ না তোর মুণ্ড । আর পচিশখান। বিবির মুণ্ড, যদি দিন পাই ।” হারাণী হাসিতে হাসিতে গেল। পরে অালে সব নিবিলে, সবাই শুইলে হারাণী আমাকে সঙ্গে করিয়া লইয়। গিয়া দেখাইয়া দিয়া আসিল ; আমি ঘরের ভিতর প্রবেশ করিলাম। দেখিলাম, তিনি একাই শয়ন করিয়া আছেন । অবসন্ন কিছুই না ; ঘরে দুইট। বড় বড় আলে জ্বলিতেছে, তিনি নিজের রূপরাশিতে সমস্ত আলে৷ করিয়া আছেন । আমিও শরবিদ্ধ ; আনন্দে শরীর আপ্লুত হইল। যৌবন প্রাপ্তির পর আমার এই প্রথম স্বামিসম্ভাষণ । সে যে কি সুখ, তাহা কেমন করিয়া বলিব ? আমি অত্যন্ত মুখর, কিন্তু-যখন প্রথম র্তাহার সঙ্গে কথা কহিতে গেলাম, কিছুতেই কথা ফুটিল না । কণ্ঠ রোধ হইয়। আসিতে লাগিল । সৰ্ব্বাঙ্গ র্কাপিতে লাগিল । হৃদয়মধ্যে দুপ দুপ, শব্দ হইতে লাগিল। গলা শুকাইতে লাগিল । কথা আসিল না বলিয়া কঁাদিয়া ফেলিলাম । সে অশ্রজল তিনি বুঝিতে পারিলেন না। তিনি বলিলেন, “কঁাদিলে কেন ? আমি ত তোমাকে ডাকি নাই—তুমি আপনি আসিয়াছ—তবে র্কাদ কেন ?” এই নিদারুণ বাক্যে বড় মৰ্ম্মপীড়া হইল। তিনি আমাকে কুলটা মনে করিলেন—ইহাতে চক্ষুর প্রদাহ আরও বাড়িল ৷ মনে করিলাম, তখন পরিচয় দিই –এ যন্ত্রণা আর সহ্য হয় না, কিন্তু তখনই মনে হইল যে, পরিচয় দিলে যদি ইনি ন বিশ্বাস করেন, যদি মনে করেন যে, ইহার বাড়ী কালাদীঘি, অবশু) আমার স্ত্রী হরণের বৃত্তান্ত শুনিয়াছে, এক্ষণে ঐশ্বৰ্য্যলোভে আমার স্ত্রী বলিয়া মিথ্যা পরিচয় দিতেছে, —তাহা হইলে কি প্রকারে ইহার বিশ্বাস জন্মাইব ? সুতরাং পরিচয় দিলাম না । দীর্ঘনিশ্বাস ত্যাগ করিয়া চক্ষুর জল মুছিয়া তাহার সঙ্গে কথোপকথনে প্রবৃত্ত হইলাম। অন্যান্য কথার পরে তিনি বলিলেন, “কালাদীঘিতে যে এমন সুন্দরী জন্মিয়াছে, তাহা আমি স্বপ্নেও জানিতাম না ।" २ब्रु-७8 ২৭ . র্তার চক্ষের প্রতি আমি লক্ষ্য করিয়াছিলাম, তিনি বড় বিস্ময়ের সহিত আমাকে দেখিতেছিলেন । র্তার কথার উত্তরে আমি নেকী সাজিয়া বলিলাম, “আমি সুন্দরী না বান্দরী । আমাদের দেশের মধ্যে আপনার স্ত্রীরই সৌন্দর্য্যের গৌরব !” এই ছলক্রমে র্তাহার স্ত্রীর কথা পাড়িয়াই জিজ্ঞাসা করিলাম, “র্তাহার কি কোন সন্ধান পাওয়া গিয়াছে ?” - উত্তর । নী—তুমি কত দিন দেশ আসিয়াছ ? আমি বলিলাম, “আমি সেই সকল ব্যাপারের পরই দেশ হইতে আসিয়াছি । বোধ হয়, আপনি আবার বিবাহ করিয়াছেন ?” উত্তর । না । বড় বড় কথা, উত্তর দিবার তাহার অবসর দেখিলাম না । আমি উপযাচিক, অভিসারিক হইয়া আসিয়াছি,—আমাকে আদর করিবারও তার অবসর নাই । তিনি সবিস্ময়ে আমার প্রতি চাহিয়া রছিলেন । একবারমাত্র বলিলেন, “এমন রূপ ত মানুষের দেখি নাই ।” সপত্নী হয় নাই, শুনিয়া বড় আহলাদ হইল । বলিলাম, “আপনারা যেমন বড়লোক, এটি তেমনই বিবেচনার কাজ হইয়াছে । নহিলে যদি এর পর আপনার স্ত্রীকে পাওয়া যায়, তবে দুই সতীনে ঠেঙ্গাঠেঙ্গি বাধিবে ” তিনি মৃদু হাসিয়া বলিলেন, “সে ভয় নাই । সেই স্ত্রীকে পাইলেও আমি গ্ৰহণ করিব, এমন বোধ হয় না । তাহার আর জাতি নাই বিবেচনা করিতে হুইবে । আমার মাথায় বজ্রাঘাত হইল। এত আশাভরস। সব নষ্ট হইল। তবে অামার পরিচয় পাইলে আমাকে আপন স্ত্রী বলিয়া চিনিলেও আমাকে গ্রহণ করিবেন না। আমার এবারকার মত নারীজন্ম বৃথা হইল । সাহস করিয়া জিজ্ঞাসা করিলাম, “যদি এখন র্তাহার দেখা পান, তবে কি করিবেন ?” তিনি অম্লানবদনে বলিলেন, “তাকে ত্যাগ করিব।” কি নির্দয় ! আমি স্তম্ভিত হইয়া রহিলাম । পৃথিবী আমার চক্ষে ঘুরিতে লাগিল । সেই রাত্রিতে আমি স্বামিশয্যায় বসিয়া তাহার অনিন্দিত মোহনমূৰ্ত্তি দেখিতে দেখিতে প্রতিজ্ঞ করিলাম, “ইনি আমায় স্ত্রী বলিয়া গ্রহণ করিবেন, নচেৎ আমি প্রাণত্যাগ করিব।” _श्=श्_ंट