পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দুর্গেশনন্দিনী । আমি কাদিয়া কছিলাম, ‘তুমি আমাকে পরি ত্যাগ করিও না । পিত কহিলেন, ‘ন, আমি এক্ষণে কোথাও যাইব না। তুমি এখন মানসিংহের গৃহে যাও । আমি এখানেই রহিলাম ; প্রত্যন্তই তোমাকে দেখিয়া আসিব । তুমি তথায় কিরূপ থাক, তাহা বুঝিয়া কৰ্ত্তব্য বিপন করিব ? যুবরাজ ! আমি তোমাদিগের গৃহে পুরাঙ্গনা হইলাম । কৌশলে পিতা আমাকে নিক্ষে লোমাতার চক্ষুপথ হইতে দূর করিলেন । যুবরাজ ! আমি তোমার পিতৃভবনে অনেক দিন পৌরঙ্গী হইয়াছিলাম ; কিন্তু তুমি আমাকে চেন না । তুমি তখন দশমবর্মীয় বালক মাত্র, অস্বরের রাজবাটীতে মাতৃসন্নিধানে থাকিতে, আমি তোমার ( নবোঢ় ) বিমাভার সাহচর্য্যে দিল্লীতে নিসক্ত থাকিতাম কুমুমের মালার তুলা মঙ্গরাজ মানসি”হের কণ্ঠে তাগণিতসংখ্যা রমণীপ্লাজি গ্রথিত থাকিত । তুমি কি তোমার বিমাতা সকলকেই চিনিতে ? ষোপপুরসস্তৃত৷ উৰ্ম্মিল দেবীকে তোমার স্মরণ হুইবে ? উৰ্ম্মিলার গুণ তোমার নিকট কত পরিচয় দিব ? তিনি আমাকে সচৰ্চারিণী দাসী বলিয়া জানিতেন না ; আমাকে প্রাণাধিক। সহোদর ভগিনীর দ্যায় জানিতেন ; তিনি আমাকে সমৃত্বে নানা বিদ্যা শিখাষ্টবার পদবীতে আরূঢ় করিয় দিলেন । তাই রঙ্গ অনুকম্পায়, শিল্পকার্যাদি শিখিলাম । তাঙ্গারই মনোরঞ্জনার্থে মৃভাগত শিখিলাম । তিনি তামাকে স্বরং লেখাপড়। শিখাইলেন । এষ্ট যে কদক্ষর সম্বদ্ধ পত্রী তোমার নিকট পঠাইতে সক্ষম হইতেছি, ইহা কেবল তোমার বিমাতা উৰ্ম্মিল দেবীর অন্তকম্পন্ন । সখী উৰ্ম্মিলার রূপায় তারও গুরুতর লাভ শুইল । তিনি নিজ প্রতিচক্ষে আমাকে যেমন দেখিতেন, মহারাজের নিকট সেরূপ পরিচয় দিতেন । আমার সঙ্গীতাদিতে কিঞ্চিৎ ক্ষমতা জন্মিদাছিল, তদর্শনশ্রবণেও মহারাজের প্রীতি জন্মিত । যে কারণেই হউক, মহ! রাজ মানসিংহ আমাকে নিজ পরিবারস্থার ত্যায় ভাবিতেন । তিনি আমার পিতাকে ভক্তি করিতেন : পিতা সৰ্ব্বদা আমার সহিত সাক্ষাৎ করিয়। আসিতেন । উৰ্ম্মিল! দেবীর নিকটে তামি সুখী ছিলাম । কেবল একমাত্র পরিতাপ যে, যাহার জন্য ধৰ্ম্ম ভিন্ন সৰ্ব্বত্যাগী হইতে প্রস্তুত ছিলাম, তাহার দর্শন পাইতাম না । তিনিই কি আমাকে বিস্তৃত হইয়াছিলেন ? তাহা নহে। যুবরাজ ! আশ মানী নামী পরিচারিকাকে কি আপনার স্মরণ হয় ? হইতেও পারে । ২য়—৭ 8為 আশমানীর সহিত আমার বিশেষ সম্প্রীতি ঘটিল, আমি তাহাকে প্রভুর সংবাদ আনিতে পাঠাইলাম । সে র্তাহার অনুসন্ধান করিয়া ভঁাহাকে আমার সংবাদ দিয়া আসিল । প্রত্যুত্তরে তিনি আমাকে কত কথা কহিয়া পাঠাইলেন, তাহ কি বলিব ? আমি আশ মানীর হস্তে র্তাহাকে পত্র লিখিস্থ পাঠাইলাম, তিনিও তাহার প্ৰেত্যুত্তর পাঠাইলেন । পুনঃ পুনঃ ঐরূপ ঘটিতে লাগিল । এই প্রকার আদর্শনেও পরস্পর কথোপকথন করিতে লাগিল।ম । এই প্রণালীতে তিন বৎসর কাটির গেল । যখন তিন বৎসরের বিচ্ছেদেও পরস্পর বিস্তুত হইলাম না, তখন উভয়েই বুঝিলাম যে, এ প্রণয় শৈবাল-পুষ্পের ঠায় কেবল উপরে ভাসমান নহে, পদ্মের স্যায় ভিতরে বদ্ধমূল ! কি কারণে বলিতে পারি না, এই সময়ে তাঙ্কারও ধৈর্যাবশেস হইল । এক দিন তিনি বিপরীত ঘটাইলেন । নিশাকালে একাকিনী শয়নকক্ষে শয়ন করিয়াছিলাম, অকস্মাৎ নিদ্রাভঙ্গ শুইলে স্তিমিত দীপা লাকে দেখিলাম, শিল্পরে এক জন মনুষ্য । মধুর শব্দে আমার কর্ণরন্ধে এই বাক্য প্রবেশ করিল যে, "প্ৰাণেশ্বরি । ভয় পাষ্ট্ৰও না । আমি ভোমাখ্রষ্ট একান্ত দাস ?’ আমি কি উত্তর দিব ? তিন বৎসরের পর সাক্ষাৎ । সকল কথ। ভুলিয়া গেলাম - তাহার কণ্ঠলগ্ন হুইয়া রোদন করিতে লাগিলাম । শীঘ্ৰ মরিব, তাই আমার লজ্জা নাই সকল কথা বলিতে পারিতেছি । সখল আমার বাক।" গুস্তল, ৩খন শহীকে জিজ্ঞাসা করিলাম, তুমি কেমন করিয়। এ পুরীর মধ্যে অসিলে ?’ তিনি কছিলেন, "আশমানীকে জিজ্ঞাসা কর, তাহার সমভিবাস্তারে বারিবাহক দাস সাজিয়া পুরী মপে। প্রবেশ করিয়ছিলাম : সেই পৰ্য্যস্ত লুক্কায়িত আছি ? আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, এখন ?” তিনি কহিলেন, ‘আর কি ? তুমি যাহ কর ।” আমি চিস্ত করিতে লাগিলাম, কি করি ? কোন দিক রাখি ? চিত্ত দুধ দিকে লয়, সেই দিকে মতি শুঠতে লাগিল । এইরূপ চিন্তা করিতে করিতে অকস্মাৎ আমার শয়নকক্ষর দ্বার মুক্ত হইয়। গেল । সম্মুখে দেখি, মহারাজ মানসিংহ ! বিস্তারে আবখ্যক কি ? বীরেন্দ্ৰসিংহ কারাগারে আবদ্ধ হইলেন । মহারাজ এইরূপ প্রকাশ করিলেন যে, তাহাকে রাজদণ্ডে দণ্ডিত করিবেন । আমার হৃদয়মধ্যে কিরূপ হইতে লাগিল, তাহা বোধ করি