পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

છ8 াৈগিল। পূৰ্ব্বে তিলোত্তমার চেতন ইয়া আসিতেছিল, ன்ே আয়েষার শুশ্রীষায় সম্পূর্ণরূপ সংজ্ঞাপ্রাপ্ত য়ৈ উঠিলেন ।

  • চারিদিক চাহিবামাত্ৰ পূৰ্ব্বকথা মনে পড়িল । জিংক্ষণাৎ তিলোত্তম কক্ষ হইতে নিষ্ক্রান্ত হইয়া যাইতেলেন, কিন্তু এ রাত্রির শারীরিক ও মানসিক পরিসুমে শীর্ণ তনু অবসর হইয়া আসিয়াছিল, যাইতে প্লারিলেন না : পূৰ্ব্বকথা স্মরণ হইবামাত্র মস্তক ঘূর্ণিত "ীয়া আমনি আবার বসিয়া পড়িলেন । আয়েষ

হস্ত ধরিয়া কহিলেন, “ভগিনি । তুমি কেন ধ্যস্ত হইতেছ? তুমি এক্ষণে অতি দুৰ্ব্বল, আমার গৃহে গিয়া বিশ্রাম করিবে চল, পরে তোমার যখন ইচ্ছ, তখন অভিপ্রেত স্থানে তোমাকে পাঠাইয়া দিব ।” ঃ তিলোত্তম উত্তর করিলেন না । আয়েষা প্রহরীর নিকট, সে যত দূর জানে,সকলই গুনিয়াছিলেন, অতএব তিলোত্তমার মনে সন্দেহ আশঙ্ক। ক্ষরিয়া কহিলেন, “আমাকে অবিশ্বাস করিতেছ কেন ? অামি তোমার শক্ৰকল্প বটে, কিন্তু তাই বলিয়। অামাকে অবিশ্বাসিনী বিবেচনা করিও না । আম হইতে কোন কথা প্রকাশ হইবে না। রাত্রি অবসান হইতে না হইতে যেখানে যাইবে, সেইখানে দাসী দিয়া পঠাইয় দিব । কেন্স কোন কুথ। প্রকাশ করিবেন।” _ ". এই কথা আয়েম। এমন স্থমিষ্টস্বরে কহিলেন যে, প্তিলোত্তামার তৎপ্রতি কিছুমাত্র অবিশ্বাস হইল না। বিশেষ এক্ষণে চলিতেও আর পারেন না, জগতসিংহের নিকট বসিয়াও থাকিতে পারেন না, সুতরাং স্বীকৃত। হইলেন । আয়েষা কহিলেন, “তুমি ত চলিতে পারিবে না, এই দাসীর উপর শরীরের ভর রাখিয়া চল ।” তিলোত্তম দাসীর স্কন্ধে হস্ত রাখিয়৷ তদবলম্বনে ধীরে ধীরে চলিলেন। আয়েষাও রাজপুত্রের নিকট বিষ্কায় হয়েন ; রাজপুত্র তাহার মুখপ্রতি চাহিয়া রহিলেল, যেন কিছু বলিবেন । আয়েষা ভাব বুঝিতে পারিয়া দাসীকে কহিলেন, “তুমি ইহাকে আমার শয়নাগারে বসাইয়া পুনৰ্ব্বার আসিয়া আমাকে লইয়া বাও ।” দাসী তিলোত্তমাকে লইয়া চলিল । জগতসিংহ মনে মনে কহিলেন, “তোমায় আমায় এই দেখা-শুমা।” গভীর নিশ্বাস ত্যাগ করিয়া নিঃশব্দ স্কুইঞ্জা রহিলেন । যতক্ষণ তিলোত্তমাকে দ্বারপথে দেখা গেল, ততক্ষণ তৎপ্রতি চাহিয়া রহিলেন । - তিলোত্তমাও ভাবিতেছিলেন, “আমার এই দেখাশুন৷ ” যতক্ষণ দৃষ্টিপথে ছিলেন, ততক্ষণ ফিরিয়া বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী চাহিলেন না। যখন ফিরিয়া চাহিলেন, তখন আর জগৎসিংহকে দেখা গেল না । অঙ্গুরীয়বাহক তিলোত্তমার নিকট আসিয়া কহিল, “তবে আমি বিদায় হই ?” তিলোত্তম৷ উত্তর দিলেন না। দাসী কহিল, “হঁ।” প্রহরী কহিল, “তবে আপনার নিকট যে সাঙ্কেতিক অঙ্গুরীয় আছে, ফিরাইয়া দিউন ৷” তিলোত্তম অঙ্গুরীয় লইয়া প্রহরীকে দিলেন । প্রহরী বিদায় হইল । পঞ্চদশ পরিচ্ছেদ মুক্তকণ্ঠ তিলোত্তম ও দাসী কক্ষমধ্য হইতে গমন করিলে আয়েয। শয্যার উপর আসিয়া বসিলেন ; তথায় আর বসিবার আসন ছিল না । জগৎসিংহ নিকটে দাড়াইলেন । - আয়েষা কবরী হইতে একটি গোলাব খসাইয়৷ তাহার দলগুলি নখে ছিড়িতে ছিড়িতে কহিলেন, “রাজকুমার, ভাবে বোধ হইতেছে যে, আপনি আমাকে কি বলিবেন । আম৷ হইতে যদি কোন কৰ্ম্ম সিন্ধ হইতে পারে, তবে বলিতে সঙ্কোচ করিবেন না ; আমি আপনার কার্য্য করিতে পরম সুখী হইব ।” রাজকুমার কহিলেন, “নবাবপুলি, এক্ষণে আমার কিছুরই বিশেষ প্রয়োজন নাই । সে জন্য আপনার সাক্ষাতের অভিলাষী ছিলাম না। আমার এই কথা যে, আমি যে দশাপন্ন হুইয়াছি, ইহাতে আপনার সহিত পুনৰ্ব্বার দেখা হইবে, এমন ভরসা করি না ; বোধ করি, এই শেষ দেখা । আপনার কাছে যে ঋণে বদ্ধ আছি, তাহা কথায় প্রতিশোধ কি করিব ? আর কার্য্যেও কখন ষে তাহার প্রতিশোধ করিব, সে অদৃষ্টের ভরসা করি না। তবে এই ভিক্ষা যে, যদি কখনও সাধ্য হয়, যদি কখনও অন্য দিন হয়, তবে আমার প্রতি কোন আজ্ঞা করিতে সঙ্কোচ করিবেন না ।” জগতসিংহের স্বর এতাদৃশ কাতর, নৈরাপ্তব্যঞ্জক যে, তাহাতে আয়েষাও ক্লিষ্ট হইলেন । আয়েষা কহিলেন, “আপনি এত নির্ভরসা হইতেছেন কেন ? এক দিনের অমঙ্গল পরদিন থাকে না ।" জগৎসিংহ ,কহিলেন, “আমি নির্ভরসা হুই নাই, কিন্তু আমার আর ভরসা করিতে ইচ্ছা করে না ;