পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

శ్రీఘ్ర

বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী

“উভয়ের নিকট দাড়াইল, তথাপি দেখিতে পাইলেন ম। ক্ষণেক স্তস্তের ন্যায় স্থির দাড়াইয়। পরে ক্রোধকম্পিতম্বরে আগন্তুক কহিল, “নবাবপুলি ! এ উত্তম।" উভয়ে মুখ তুলিয়৷ দেখিলেন, —ওসমান । ওসমান তাহার অনুচর অঙ্গুরীয়বাহকের নিকট সবিশেষ অবগত হইয়া, আয়েষীর সন্ধানে আসিয়াছিলেন। রাজপুত্র, ওসমানকে সে স্থলে দেখিয়া আয়েষার জন্য শঙ্কান্বিত হইলেন, পাছে আয়েষ। ওস মান বা কতলু খার নিকট তিরস্কৃত বা অপমানিত। ছন । ওসমান যে ক্রোধ প্রকাশক স্বরে বঙ্গোক্তি করিলেন, তাহাতে সেইরূপ সম্ভাবন বোধ হইল । ব্যঙ্গোক্তি শুনিবামাত্র আয়েস। ওস্মানের কথার অভিপ্রায় নিঃশেষ বুঝিতে পারিলেন । মুহূৰ্ত্তমাত্র তাহার মুখ রক্তবর্ণ হইল। আর কোন অধৈর্যের চিহ্ন প্রকাশ পাইল না। স্থিরস্বরে উত্তর করিলেন, “কি উত্তম, ওসমান ?" ওসমান পূৰ্ব্ববং ভঙ্গীতে কহিলেন, “নিশীথে একাকিনী বন্দিসহবাস নবাবপুল্লীর পক্ষে উত্তম । বন্দীর জন্য নিশীথে কারাগারে অনিয়ম-প্রবেশও উত্তম ।" আয়েষার পবিত্র চিত্তে এ তিরস্কার সহন। তীত হইল । ওসমানের মুখপানে চাহিয়া উত্তর করিলেন। সেইরূপ গৰ্ব্বিত স্বর ওসমান কখনও আয়েষার কণ্ঠে শুনেন নাই । আয়েষ কহিলেন, “এ নিশীথে একাকিনী কার|গারমধ্যে আসিয়া বন্দীর সহিত আলাপ কর। আমার ইচ্ছ। আমার কৰ্ম্ম উত্তম কি অধম, সে কথায় তোমার প্রয়োজন নাই ।” ওসমান বিস্মিত হইলেন, বিন্মিতের অধিক ক্রুদ্ধ হইলেন ; কহিলেন, “প্রয়োজন আছে কি না, কাল প্রাতে নবাবের মুখে শুনিবে " আয়েষ৷ পূৰ্ব্ববত কহিলেন, “যখন পিতা আমাকে জিজ্ঞাসা করিবেন, আমি তখন তাহার উত্তর দিব । তোমার চিন্তা নাই ।” ওসমানও পূৰ্ব্ববৎ ব্যঙ্গ করিয়া কহিলেন, “আর যদি আমিই জিজ্ঞাসা করি ?” আয়েৰ দাড়াইয়া উঠিলেন । কিয়ৎক্ষণ পূৰ্ব্ববৎ স্থির দৃষ্টিতে ওসমানের প্রতি নিরীক্ষণ করিলেন ; র্তাহার বিশাল লোচন আরও যেন বদ্ধিতায়তন হইল। মুখপদ্ম যেন অধিকতর প্রস্ফুটিত হইয়া উঠিল। ভ্রমরকৃষ্ণ আলকাবলীর সহিত শিরোদেশ ঈষৎ এক দিকে হেলিল ; হৃদয় তরঙ্গান্দোলিত নিবিড় শৈবালস্বলবৎ উৎকম্পিত হইতে লাগিল ; অতি পরিষ্কার. স্বরে আয়েষা কছিলেন, “ওসমান, যদি তুমি জিজ্ঞাসা কর, তবে আমার উত্তর এই যে, এই বন্দী অামার প্ৰাণেশ্বর !" যদি তন্মুহূৰ্ত্তে কক্ষমধ্যে বজ্রপতন হইত, তবে রাজপুত কি পাঠান অধিকতর চমকিত হইতে পারিতেন না। রাজপুত্রের মনে অন্ধকারমধ্যে যেন কেহ প্রদীপ জালিয়া দিল । আয়েষার নীরব রোদন এখন তিনি বুঝিতে পারিলেন। ওসমান কতক কতক ঘুণীক্ষরে পূর্বেই এরূপ সন্দেহ করিয়াছিলেন, এবং সেই জন্যই আয়েষার প্রতি এরূপ তিরস্কার করিতেছিলেন, কিন্তু আয়েষা তাহার সম্মুখেই মুক্তকণ্ঠে কথা ব্যক্ত করিবেন, ইহ। তাহার স্বপ্নের অগোচর । ওসমান নিরুত্তর হইয়। রহিলেন । আয়েষ! পুনরপি কহিতে লাগিলেন, “শুন, ওসমান, আবার বলি, এই বন্দী আমার প্রাণেশ্বর,--যাবজ্জীবন অন্য কেহ আমার হৃদয়ে স্থান পাইবে না। কাল যদি বধ্যভূমি ইহার শোণিতে আর্দ্র হয়;" —বলিতে বলিতে আয়েষ শিহরিয়া উঠিলেন ; “তথাপি দেখিবে, হৃদয়মন্দিরে ইহার মুক্তি প্রতিষ্ঠা করিয়া অন্তকাল পর্য্যন্ত আরাধন করিব । এই মুহূর্তের পর, যদি আর চিরন্তন ইহার সঙ্গে দেখ। ন হয়, কাল যদি মুক্ত হইয়া ইনি শত মহিলার মধ্যবৰ্ত্তী হন, আয়েষার নামে ধিক্কার করেন, তথাপি আমি ইহার প্রেমাকাজিহ্মণী দাসী রহিব । আরও শুন, মনে কর, এতক্ষণ একাকিনী কি কথ। বলিতেছিলাম ? বলিতেছিলাম, আমি দৌবারিকগণকে বাক্যে পারি, ধনে পারি, বশীভূত করিয়া দিব ; পিতার অশ্বশালা হইতে অশ্ব দিব ; বন্দী পিতৃশিবিরে এখনই চলিয়া যাউন । বন্দী নিজে পলায়নে অস্বীকৃত হইলেন । নচেৎ তুমি এতক্ষণ ইহার নখাগ্রও দেখিতে পাইতে না ।” আয়েয। আবার অশ্রজল মুছিলেন । কিয়ৎক্ষণ নীরব থাকিয়া অন্ত প্রকার স্বরে কহিতে লাগিলেন, “ওসমান, এ সকল কথা বলিয়া তোমাকে ক্লেশ দিতেছি, অপরাধ ক্ষমা কর । তুমি আমায় স্নেহ কর, আমি তোমায় স্নেহ করি ; এ—আমার অনুচিত । কিন্তু তুমি আজি আয়েষাকে অবিশ্বাসিনী ভাবিয়াছ । আয়েষ অন্য যে অপরাধ করুক, অবিশ্বাসিনী নহে। অয়েষা যে কৰ্ম্ম করে, তাহ মুক্তকণ্ঠে বলিতে পারে। এখন তোমার সাক্ষাৎ বলিলাম, প্রয়োজন হয়, কাল পিতার সমক্ষে বলিব ।” পরে জগৎসিংহের দিকে ফিরিয়া কহিলেন, “রাজপুত্র, তুমিও অপরাধ ক্ষমা কর । যদি ওসমান আজ আমাকে মনঃপীড়িত না করিতেন, তবে এ দগ্ধ