পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (প্রথম ভাগ).djvu/১০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

慈 ৯৮ এই বলিয়া বিক্রম সোলাঙ্কি যুদ্ধে যাইবার উদ্যোগার্থ বিদায় লইলেন। চঞ্চলকুমারীর কথা কিছু F নী । পঞ্চদশ পরিচ্ছেদ মবারক ও দরিয়া ভস্মীভূত গোপীনাথ রাঠোর, বিক্রম সোলাঙ্কি এবং মাণিকলাল দিলীর খার ধ্বংসাকাজক্ষায় চলিলেন । ষে পথে দিলীর র্থ আসিতেছেন, সেই পথে তিন স্থানে তিনজন লুক্কায়িত রহিলেন । কিন্তু পরস্পরের অনতিদূরেই রছিলেন । বিক্রম সোলাঙ্কি অশ্বারোহী সৈন্ত লষ্টয়া আসিয়া:ছলেন, কাজেই তিনি উচ্চ সানুদেশে থাকিতে পারিলেন না । তিনি পৰ্ব্বতবাসী হইলেও তাহাকে অশ্ব রাখিতে হইত, তাহার কারণ, তদ্ব্যতীত নিম্নভূমিনিবাসী শত্রু ও দসু্যর পশ্চাদ্ধাবিত হইতে পারিতেন না । আর এমন সকল ক্ষুদ্র রাজগণ রাত্রিকালে সুযোগ পাইলে নিজে নিজেও এক আধটা ডাকাতি— অর্থাৎ এক রাত্ৰিতে দশ পাঁচখানা গ্রাম লুণ্ঠন না করিতেন, এমন নহে। পৰ্ব্বতের উপর তাহার সৈনিকের অশ্ব ছাড়িয়া, পদাতিকের কাজ করত । এক্ষণে মোগলের পশ্চাদমুসরণ করিতে হইবে বলিয়া, বিক্রমসিংহ অশ্ব লইয়া আসিয়াছিলেন । পাৰ্ব্বত্য যুদ্ধে তাঁহাতে অসুবিধা হইল । অতএব তিনি পৰ্ব্বতে না উঠিয়া অপেক্ষাকৃত সমতল ভূমির অন্বেষণ করিলেন। মনোমত সেরূপ কিছু ভূমি পাইলেন । তাহার সম্মুখে কিছু বনজঙ্গল আছে । জঙ্গলের পশ্চাৎ তাহার অশ্বারোহিগণকে শ্রেণীবদ্ধ করিয়া রাখিলেন। তিনি সৰ্ব্বাগ্রবর্তী হইয়া রহিলেন । তৎপরে মাণিকলাল রাজসিংহের পদাতিগণ লইয়া লুক্কায়িত ། རྩྭ་རྩེའི་། ། সৰ্ব্বশেষে গোপীনাথ রাঠোর রহিলেন ।** দিলীর র্থ আক্ব্বরের দুর্দশ স্মরণ করিয়া একটু সতর্কভাবে আসিতেছিলেন—অগ্ৰে অগ্ৰে অশ্বারোহী পাঠাইয়া সন্ধান লইতেছিলেন যে, রাজপুত কোথাও লুকাইয়া আছে কি না। অতএব বিক্রম সোলাঙ্কির অশ্বারোহিগণের সন্ধান তাহাকে সহজে মিলিল । তিনি তখন কতৃকগুলি সৈন্য অশ্বারোহীদিগকে তাড়াইয়৷ দিবার জন্য পাঠাইয়া দিলেন । বিক্রম সোলাঙ্কি অন্যান্ত বিষয়ে বড় স্থূলবুদ্ধি, কিন্তু যুদ্ধকালে অতিশয় ধৰ্ব এবং রণপণ্ডিত—অনেক সময়ে ধূৰ্ত্ততাই বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী 响 রণপাণ্ডিত্য—তিনি মোগল সেনার সঙ্গে অতি সামান্থ যুদ্ধ করিয়া সরিয়া পড়িলেন--দিলীর খার মুগুপাত করিবার জন্য । - দিলীর মাণিকলালকে অতিক্রম করিয়া চলিলেন। মাণিকলাল যে পার্থে লুক্কায়িত আছে, তাহ তিনিও জানিতে পারিলেন না-মাণিকলালও কোন সাড়াশব্দ করিল না । সোলাস্কিকে তাড়াইয়া দিলীর বিবেচনা করিয়াছিলেন, সব রাজপুতই হঠিয়াছে—অতএব আর পুৰ্ব্ববৎ অবধানের সহিত চলিতেছিলেন না। মাণিকলাল বুঝিল, এ উপযুক্ত সময় নহে—গেও স্থির রহিল । পরে, যথায় গোপীনাথ রাঠোর লুক্কায়িত তাঁহারই নিকট দিলীর উপস্থিত। সেখানে পৰ্ব্বতমধ্যস্থ পথ অতি সঙ্কীর্ণ হইয়া আসিয়াছে । সেইখানে সেনার মুখ উপস্থিত হইলে, গোপীনাথ রাঠোর লাফ দিয়া তাহার উপর পড়িয়া, বাঘ যেমন পথিকের সম্মুখে থাব পাতিয়া বসে, সেইরূপ সসৈন্তে বসিলেন । দিলীর মবারককে আজ্ঞা করিলেন, “সম্মুখবর্তী সেনা লইয়া ইহাদিগকে তাড়াইয়া দাও ” মবারক অগ্রসর হইলেন । কিন্তু গোপীনাথ রাঠোরকে তাড়াইবার তার সাধ্য কি ? সঙ্কীর্ণ পথে অল্প মোগলই দাড়াইতে পারিল । যেমন গর্ত হইতে পিপীলিকা বাহির হুইবার সময়ে, বালকে একটি একটি করিয়া টিপিয়া মারে, তেমনই রাজপুতেরা মোগলদিগকে সঙ্কীর্ণ পথে টিপিয়া মারিতে লাগিল। এ দিকে দিলীর, সম্মুখে পথ না পাইয়া সেন লইয়া নিশ্চল হইয়া মধ্যপথে দাড়াইয়। রছিলেন । মাণিকলাল বুঝিল, এই উপযুক্ত সময় । সে সসৈন্য পৰ্ব্বতাবতরণ করিয়া বজের ন্যায় দিলীরের উপর পড়িল । দিলীর খার সেনা প্রাণপণ করিয়া যুদ্ধ করিতে লাগিল । কিন্তু এই সময়ে ৰিক্রম সোলাঙ্কি সেই দুই হাজার অশ্বারোহী লইয়া হঠাৎ দিলীরের সৈন্যের পশ্চাদ্ভাগে উপস্থিত হইলেন । তখন তিন দিকে আক্রান্ত হইয়া মোগলসেনা আর এক দণ্ড তিষ্ঠিল না। যে পারিল, সে পলাইয়া বাচিল ; অধিকাংশই পলাইবার পথ পাইল না— কৃষকের অস্ত্রের নিকট ধান্সের ন্যায় ছিন্ন হইয়া রণক্ষেত্রে নিপতিত হইল । কেবল গোপীনাথ রাঠোরের সম্মুখে কয় জন মোগল যোদ্ধা কিছুতেই হঠিল না—মৃত্যুকে তৃণজ্ঞান করিয়া যুদ্ধ করিতেছিল। তাঁহার মোগলসেনার সার-বাছা বাছা লোক। মবারক তাছাদের নেতা · কিন্তু তাহারাও আর টিকে না। পলকে পলকে এক