পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (প্রথম ভাগ).djvu/১২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

oxv সৰ্ব্বশেষে দেবেন্দ্রের সমবয়স্ক, সুশীতলকান্তি এক যুবাপুরুষ আসিয়া বসিলেন। ইনি দেবেন্দ্রের মাতুলপুত্র সুরেন্দ্র ; গুণে সৰ্ব্বাংশে দেবেন্দ্রের বিপরীত । ইহাঁর স্বভাবগুণে দেবেন্দ্রও ইহাকে ভালবাসিতেন । দেবেন্দ্র ইহার ভিন্ন সংসারে আর কাহারও কথার বাধ্য নহেন । সুরেন্দ্র প্রত্যহ রাত্রে একবার দেবেন্দ্রের সংবাদ লক্টতে আসিতেন । কিন্তু মদ্যাদির ভয়ে অধিকক্ষণ বসিতেন না । সকলে উঠিয়া গেলে, স্বরেন্দ্র দেবেন্দ্রকে জিজ্ঞাস করিলেন, “আজ তোমার শরীর কিরূপ আছে ?” দে। "শরীরং ব্যাধিমন্দিরম ” স্ব। বিশেষ তোমার । আজ জ্বর জানিতে পারিয়াছিলে ? Co I of স্থ । আর যকৃতের সেই ব্যথাটা ? দে। পূৰ্ব্বমত আছে । স্থ । তবে এখন এ সব স্থগিত রাখিলে ভাল হয় না ? দে । কি—মদ খাওয়া ? কত দিন বলিবে ? ও আমার সাথের সাথী ৷ স্থ । সাথের সাথী কেন ? সঙ্গে আসে নাই, সঙ্গেও যাইবে না। অনেকে ত্যাগ করিয়াছে - তুমিও ত্যাগ করিবে না কেন ? দে । আমি কি সুখের জন্ত ত্যাগ করিব ? ষাহারা ভ্যাগ করে, তাহীদের অন্ত মুখ আছে—সেই ভরসায় ত্যাগ করে ! আমার আর কোন সুখই নাই । সু । তবু বঁচিবার আশায়, প্রাণের আকাঙ্ক্ষায় ত্যাগ কর । দে । ষাহীদের বঁচিয় সুখ, তাহারা বাঢ়িবার আশায় মদ ছাড়ক । আমার বাচিয়া কি লাভ ? স্বরেন্দ্রের চক্ষু বাষ্পাকুল হইল । তখন বন্ধুস্নেহে পরিপূর্ণ হইয়া কহিলেন, “তবে আমাদের অনুরোধে ত্যাগ কর।” দেবেন্দ্রের চক্ষে জল আসিল । দেবেন্দ্র বলিল, “আমাকে যে সৎপথে যাইতে অনুরোধ করে, তুমি ভিন্ন এমন আর কেহ নাই । যদি কখন ত্যাগ করি, সে তোমারই অনুরোধে করিব । আয়---” সু।” আর কি ? দে । আর যদি কখন আমার স্ত্রীর মৃত্যুসংবাদ কৰ্ণে শুনি—তবে মদ ছাড়িব, নচেৎ এখন মরি বঁচি, সমান কথা । সুরেন্দ্র সজল নয়নে মনোমধ্যে হৈমবর্তীকে শত শত গালাগালি দিতে দিতে গৃহে প্রত্যাগমন করিলেন । বাঙ্কমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী একাদশ পরিচ্ছেদ স্বৰ্য্যমুখীর পত্র “প্রাণাধিক শ্ৰীমতী কমলমণি দাসী চিরায়ুষ্মতীশ্ন । আর তোমাকে আশীৰ্ব্বাদ পাঠ লিখিতে লজ্জা করে । এখন তুমিও এক জন হইয়া উঠিয়াছ-এক ঘরের গৃহিণী । ত যাহাই হউক, আমি তোমাকে আমার কনিষ্ঠ ভগিনী ভিন্ন আর কিছুই বলিয়া ভাবিস্তে পারিতেছি না ; তোমাকে মানুষ করিয়াছি । প্রথম “ক থ" লিখাই ; কিন্তু তোমার হাতের অক্ষর দেখিয়া, আমার এ হিজিবিজি তোমার কাছে পাঠাইতে লজ্জা করৈ, তা লজ্জ করিয়া কি করিব ? অামাদিগের দিনকাল গিয়াছে ৷ দিনকাল থাকিলে আমার এমন দশা হইবে কেন ? কি দশা ? এ কথা কাহাকে বলিবার নহে— বলিতে দুঃখও হয়, লজ্জাও করে । কিন্তু অন্তঃকরণের ভিতর যে কষ্ট, তাহা কাহাকে না বলিলেও সহ্য হয় না । আর কাহাকে বলিব ? তুমি আমার প্রাণের ভগিনী—তুমি ভিন্ন অঞ্চর আমাকে কেহ ভালবাসে ন। আর তোমার ভাইয়ের কথ। তোমা ভিন্ন পরের কাছেও বলিতে পারি না । আমি আপনার চিত। আপনিষ্ট সাজাইয়াছি । কুন্দনন্দিনী যদি ন খাইয়া মরিত, তাহাতে আমার কি ক্ষতি ছিল ? পরমেশ্বর এত লোকের উপায় করিতেছেন, তাহার কি উপায় করিতেন না ? আমি কেন আপন খাটয় তাহাকে ঘরে আনিলাম ? তুমি সে হতভাগিনীকে ষখন দেখিয়াছিলে, তখন সে বালিক। ; এখন তাহীর বয়স ১৭।১৮ বৎসর হইয়াছে । সে স্বে সুন্দরী, তাঙ্ক স্বীকার করিতেছি, সেই সৌন্দর্য্যই আমার কাল হইয়াছে । - পৃথিবীতে যদি আমার কোন সুখ থাকে, তবে সে স্বামী ; পৃথিবীতে যদি আমার কোন চিন্ত থাকে, তবে সে স্বামী ; পৃথিবীতে যদি আমার কোন কিছু সম্পত্তি থাকে, তবে সে স্বামী ; সেই স্বামী কুন্দনন্দিনী আমার হৃদয় হইতে কাড়িয়া লইতেছে । পৃথিবীতে আমার যদি কোন অভিলাষ থাকে, তবে সে স্বামীর স্নেহ ; সেই স্বামীর স্নেহে কুন্দনন্দিনী আমাকে বঞ্চিত করিতেছে । তোমার সহোদরকে মন্দ বলিও না। আমি র্তাহার নিন্দা করিতেছি না। তিনি ধৰ্ম্মাত্মা, শক্রতেও তাহার চরিত্রের কলঙ্ক এখনও করিতে পারে না । আমি প্রত্যহ দেখিতে পাই, তিনি প্রাণপণে আপনার চিত্তকে বশ করিতেছেন। যে দিকে কুন্দনন্দিনী