পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (প্রথম ভাগ).djvu/১৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

# 48 করিয়াছিল যে, “আজ বাবুকে ভৈল মাখাইবার সময়ে দেখি ষে, তাহার পিঠে একটা কালশিরা দাগ।” দেবেন্দ্র গৃহে গিয়া দুই বিষয়ে স্থিরসঙ্কল্প হইলেন। প্রথম, হীরা থাকিতে তিনি আর দত্তবাড়ী যাইবেন ন । দ্বিতীয়, হীরাকে ইহার প্রতিফল দিবেন। “পরিণামে তিনি ইরাকে গুরুতর প্রতিফল প্রদান টুকরিলেন। হীরার লঘুপাপে গুরু দণ্ড হইল । হীরা এমন গুরুতর শাস্তি প্রাপ্ত হইল যে, তাহ দেখিয়৷ শেষে দেবেন্দ্রেরও পাষাণহৃদয় বিদীর্ণ হইয়াছিল। তাহ বিস্তারে বর্ণনীয় নহে, পরে সংক্ষেপে বলিব । momo-oo: চতুস্ত্রিংশত্তম পরিচ্ছেদ পথিপাশ্বে

বর্ষাকাল। বড় দুদিন । সমস্ত দিন বৃষ্টি হইয়াছে। একবারও স্বর্য্যোদয় হয় নাই । আকাশ মেঘে ঢাকা । কাশী যাইবার পাকা রাস্তার ঘুটিঙ্গের উপর একটু একটু পিছল হইয়াছে। পথে প্রায় লোক নাই —ভিজিয়া ভিজিয়া কে পথ চলে ? এক জন মাত্র পথিক পথ চলিতেছিল। পথিকের ব্রহ্মচারী বেশ । গৈরিকবর্ণ বস্ত্র পরা—গলায় রুদ্রাক্ষ-কপালে চন্দনরেখা—জটার আড়ম্বর কিছু নাই, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কেশ– কতক কতক শ্বেতবর্ণ। এক হাতে গোল পাতার ছাভা, অপর হাতে তৈজ৭–ব্রহ্মচারী ভিজিতে ভিজিতে চলিয়াছেন । একে ত দিনেই অন্ধকার, তাহাতে আবার পথে রাত্রি হইল—আমনি পৃথিবী সুসীময় হইল—পথিক কোথায় পথ, কোথায় অপথ, কিছু অনুভব করিতে পারলেন ন—তথাপি পথিক পথ অতিবাহিত করিয়া চলিলেন—কেন না, তিনি সংসারত্যাগী ব্রহ্মচারী। ষে সংসার ত্যাগী, তাহার অন্ধকার, অালো, কুপথ, স্থপথ, সব সমান ।

রাত্রি অনেক হইল। ধরণী মসীময়ী—আকাশের মুখে কৃষ্ণাবগুণ্ঠন। বৃক্ষগণের শিরোমাল কেবল গাঢ়তর অন্ধকারে স্ত পম্বরূপ লক্ষিত হইতেছে। সেই বৃক্ষশিরোমালার বিচ্ছেদে মাত্র পথের রেখা অনুভূত হইতেছে । বিন্দু বিন্দু বৃষ্টি পড়িতেছে। এক একবার বিদ্যুৎ হইতেছে—সে আলোর অপেক্ষা আঁধার ভাল । অন্ধকারে ক্ষণিক বিদ্যুদালোকে স্বষ্টি যেমন ভীষণ দেখায়, অন্ধকারে তত নয়। “ম গে৷ ” অন্ধকারে যাইতে যাইতে ব্ৰহ্মচারী অকস্মাৎ পথিমধ্যে এই শব্দসূচক দীর্ঘনিশ্বাস শুনিতে পাইলেন। 懿 বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী 好 শব্দ অলৌকিক-কিন্তু তথাপি মনুষ্যকণ্ঠনিঃস্থত বলিয়৷ নিশ্চিত বোধ হইল। শব্দ অতি মূছ, অথচ অতিশয় ব্যথাব্যঞ্জক বলিয়া বোধ হইল। ব্ৰহ্মচারী পথে স্থির হইয়া দাড়াইলেন । কতক্ষণে আবার বিদ্যুৎ হইবে—সেই প্রতীক্ষায় দাড়াইয়া রছিলেন । , ঘন ঘন বিদ্যুৎ হইতেছিল। বিদ্যুৎ হইলে পথিক দেখিলেন, পথিপাশ্বে কি একটা পড়িয়া আছে। এটা কি মনুষ্য ? পথিক তাহাই বিবেচনা করিলেন । কিন্তু আর একবার বিদ্যুতের অপেক্ষা করিলেন । দ্বিতীয়বার বিদ্যুতে স্থির করিলেন, মনুষ্য বটে। তখন পথিক ডাকিয়া বলিলেন, “কে তুমি পথে পড়িয়া আছ ?” কেহ কোন উত্তর দিলেন না। আবার জিজ্ঞাসা করিলেন—এবার অফুট কাতরোক্তি—আবার মুহূৰ্ত্তজন্য কর্ণে প্রবেশ করিল । তখন ব্রহ্মচারী ছত্র, তৈজস ভূতলে রাখিয়া সেই স্থান লক্ষ্য করিয়া ইতস্ততঃ হস্তপ্রসারণ করিতে লাগিলেন । অচিরাৎ কোমল মনুষ্যদেহে করম্পর্শ হইল। "কে গা তুমি ?” শিরোদেশে হাত দিয়া কবরী স্পর্শ করিলেন । “দুর্গে ! এ যে স্ত্রীলোক ” তখন ব্রহ্মচারী উদ্ভরের প্রতীক্ষা না করিয়! মুম্‌ অ বা অচেতন স্ত্রীলোকটিকে দুই হস্ত দ্বারা কোলে তুলিলেন । ছাত্র, তৈজস পথে পড়িয়া রহিল । ব্ৰহ্মচারী পথ ত্যাগ করিয়া সেই অন্ধকার মাঠ ভাঙ্গিয় গ্রামাভিমুখে চললেন। ব্রহ্মচারী এ প্রদেশের পথ ঘাট গ্রাম বিলক্ষণ জানিতেন । শরীর বলিষ্ঠ নহে, তথাপি শিশুসন্তানবং সেই মরণোন্মুখীকে কোলে করিয়া এই দুর্গম পথ ভাঙ্গিয়া চলিলেন । যাহারা পরোপকারী, পরপ্রেমে বলবান, তাহারা কখনও শারীরিক বলের অভাব জানিতে পারে না । গ্রামের প্রান্তভাগে ব্রহ্মচারী এক পর্ণকুটীর প্রাপ্ত হইলেন । নিঃসংজ্ঞ স্ত্রীলোককে ক্রোড়ে লইয়৷ সেই কুটীরের দ্বারদেশে উপস্থিত হইলেন। ডাকিলেন, "বাছা হর, ঘরে আছে গ ?” কুটীরমধ্য হইতে এক জন স্ত্রীলোক কহিল, “এ যে ঠাকুরের গলা শুনিতে পাই । ঠাকুর কবে এলেন ?” ব্রহ্মচারী। এই আসছি । শীঘ্র দ্বার খোল— আমি বড় বিপদগ্ৰস্ত । হরমণি কুটীরের দ্বার মোচন করিল। ব্রহ্মচারী তখন ভাহাকে প্রদীপ জালিতে বলিয়া দিয়া আস্তে আন্তে স্ত্রীলোকটিকে গৃহমধ্যে মাটীর উপর শোওয়াইলেন। হর প্রদীপ জালিত করিল, তাহ মুমূর্ব