পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (প্রথম ভাগ).djvu/১৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

مر"وي ছিল। চিত্রগুলি বিলাতী নহে। স্বৰ্য্যমুখী নগেন্দ্র " উভয়ে মিলিত হইয়া চিত্রের বিষয় মনোনীত করিয়া এক দেশী চিত্রকরের দ্বারা চিত্রিত করাইয়াছিলেন । দেশী চিত্রকর এক জন ইংরেজের শিষ্য ; লিখিয়াছিল ভাল। নগেন্দ্র তাহা মহামূল্য ফ্রেম দিয়া শয্যাগৃহে রাখিয়াছিলেন । একখানি চিত্র কুমারসম্ভব হইতে নীত । মহাদেব পৰ্ব্বতশিখরে বেদীর উপর বসিয়া তপশ্চরণ করিতেছেন । লতাগৃহদ্বারে নন্দী, বাম প্রকোষ্ঠাপিতহেমবেত্র—মুখে এক অঙ্গুলি দিয়া কাননশস্ব নিবারণ করিতেছেন । কানন স্থির— ভ্রমরের পাতার ভিতর লুকাইয়াছে—মূগেরা শয়ন করিয়া আছে। সেইকালে হরধ্যান ভঙ্গের জন্য মদনের অধিষ্ঠান । সঙ্গে সঙ্গে বসন্তের উদয় । অগ্ৰে বসন্তপুষ্পাভরণময়ী পাৰ্ব্বতী মহাদেবকে প্রণাম করিতে আসিয়াছেন। উমা যখন শস্তুসম্মুখে প্রণাম জন্ত নত হইতেছেন, এক জামু ভূমিস্পৃষ্ট করিয়াছেন, আর এক জানু ভূমিস্পর্শ করিতেছে, স্কন্ধসহিত মস্তক নমিত হইয়াছে, সেই অবস্থা চিত্রে চিত্রিত। মস্তক নমিত হওয়াতে অলকবন্ধ হইতে দুই একটি কর্ণবিলম্বী কুরুবককুসুম খসিয়া পড়িতেছে, বক্ষ হইতে বসন ঈষৎ স্রস্ত হইতেছে, দুর হইতে মন্মথ সেই সময়ে বসন্ত-প্রফুল্লবনমধ্যে অৰ্দ্ধলুক্কায়িত হইয়া, এক জানু ভূমিতে রাখিয়া, চারু ধনু চক্রাকার করিয়া, পুষ্পধমুতে পুষ্পশর সংযোজিত করিতেছেন। আর এক চিত্রে শ্রীরাম জানকী লইয়া লঙ্কা হইতে ফিরিয়া আসিতেছেন, উভয়ে এক রত্নমণ্ডিত বিমানে বসিয়! শূন্তমার্গে চলিতেছেন । ত্রীরাম জানকীর স্বন্ধে এক হস্ত রাখিয়া, আর এক হস্তের অঙ্গুলি দ্বারা নিয়ে পৃথিবীর শোভা দেখাইতেছেন । বিমানচতুষ্পার্শে নানাবর্ণের মেঘ নীল, লোহিত, শ্বেত ধুমতরঙ্গোৎক্ষেপ কয়িয়া বেড়াইতেছে। নিয়ে আবার বিশাল স্ট্রীযুদ্রে তরঙ্গ ভঙ্গ হইতেছে—স্বৰ্য্যকরে তরঙ্গসকল ফরাশির মত জলিতেছে। এক পারে অতিদূরে স্ট্রিসৈাঁধকিরীটিনী লঙ্কা”—তাহার প্রাণদাবলীর স্বর্ণমণ্ডিত চুড়াসকল স্বৰ্য্যকরে জলিতেছে। অপর পারে শুামশোভাময়ী “তমালতালৗবনরাজিনীলা” সমুদ্রবেলা। মধ্য শূন্তে হংসশ্রেণীসকল উড়িয়া যাইতেছে। আর এক চিত্রে অর্জুন স্বভদ্রাকে হরণ করিয়া রথে তুলিয়াছেন। রথ শূন্তপথে মেঘমধ্যে পথ করিয়া চলিয়াছে, পশ্চাৎ অগণিত যাদবী সেনা ধাবিত হইতেছে, দুরে তাহদের পতাকাশ্রেণী এবং রজোজনিত মেঘ দেখা যাইতেছে। সুভদ্র স্বয়ং সারথি হইয়া রথ চালাইতেছেন। অশ্বের। মুখামুখি বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী of: - *玄 করিয়া পদক্ষেপে মেঘসকল চূৰ্ণ করিতেছে ; স্বভদ্র আপন সারথনৈপুণ্যে গ্ৰীও হইয়া মুখ ফিরাইয়া অৰ্জুনের প্রতি বক্রবৃষ্টি করিতেছেন, কুনাদন্তে আপন অধর দংশন করিয়া টিপি টিপি হাসিতেছেন ; রথবেগজনিত পবনে র্তাহার অলক সকল উড়িতেছে— দুই এক গুচ্ছ কেশ স্বেদবিজড়িত হইয়া কপালে চক্রাকারে লিপ্ত হইয়া রহিয়াছে । আর একখানি চিত্রে সাগরিকাবেশে রত্নাবলী, পরিষ্কার নক্ষত্রালোকে বালতমালতলে উদ্বন্ধনে প্রাণত্যাগ করিতে যাইতে ছেন। তমালশাখা হইতে একটি উজ্জ্বল পুষ্পময়ী লতা বিলম্বিত হইয়াছে, রত্নাবলী এক হস্তে সেই লতার অগ্রভাগ লইয়া গলদেশে পরাইতেছেন, আর এক হস্তে চক্ষের জল মুছিতেছেন। লতাপুষ্প সকল র্তাহার কেশদামের উপর অপূৰ্ব্ব শোভা করিয়া রহি স্বাছে। অার একখানি চিত্রে, শকুন্তলা দুষ্মন্তকে দেখিবার জন্য চরণ হইতে কাল্পনিক কুশাঙ্কুর মুক্ত করিতেছেন—অনস্বয়া প্রিয়ংবদা হাসিতেছে—শকুন্তল৷ ক্রোধে ও লজ্জায় মুখ তুলিতেছেন না—দুষ্মন্তের দিকে চাহিতেও পারিতেছেন না—যাইতেও পারিতেছেন না । আর এক চিত্রে রণসজ্জিত হইয়া সিংহশাবক তুল্য প্রতাপশালী কুমার অভিমন্ত্র্য উত্তরার নিকট যুদ্ধযাত্রার জন্য বিদায় লইতেছেন—উত্তর যুদ্ধে যাইতে দিবেন না বলিয়া দ্বাররুদ্ধ করিয়! আপনি দ্বারে দাড়াইয়াছেন। অভিমত্যু তাহার ভয় দেখিয়া হাসিতেছেন, আর কেমন করিয়া অবলীলাক্রমে ব্যুহভেদ করিবেন তাহা মাটীতে তরবারির অগ্রভাগের দ্বারা অঙ্কিত করিয়া দেখাইতেছেন । উত্তর তাহা কিছুই দেখিতেছেন না ; চক্ষে দুই হস্ত দিয়া কাদিতেছেন। আর একখানি চিত্রে, সত্যভামার তুলাব্রত চিত্রিত হইয়াছে। বিস্তৃত প্রস্তরনিৰ্ম্মিত প্রাঙ্গণ, তাহার পাশে উচ্চসোধপরিশোভিত রাজপুরী স্বর্ণচুড়ার সহিত দীপ্তি পাইতেছে। প্রাঙ্গণমধ্যে এক অত্যুচ্চ রজতনিৰ্ম্মিত তুলযন্ত্র স্থাপিত হইয়াছে। তাহার একদিকে ভর করিয়া বিদ্যুদীপ্ত নীরদখণ্ডবৎ নানালঙ্কারভূষিত, প্রৌঢ়বয়স্ক দ্বারকাধিপতি শ্ৰীকৃষ্ণ বসিয়াছেন ; তুলাষন্ত্রের সেই ভাগ ভূমি স্পর্শ করিতেছে ; আর একদিকে নানারত্নাদি সহিত স্থবৰ্ণরাশি স্ত,পীকৃত হইয়া রহিয়াছে, তথাপি তুলাষন্ত্রের সেই ভাগ উৰ্দ্ধোখিত হইতেছে না । , তুলাপাশে সত্যভামা ; সত্যভামা প্রৌঢ়বয়স্ক, . সুন্দরী, উন্নতদেহবিশিষ্ট, পুষ্টকাস্তিমতী, নানাভরণভূষিতা, পঙ্কজলোচনা ; কিন্তু তুলাষন্ত্রের অবস্থা দেখিয়া তাহার মুখ শুকাইয়াছে। তিনি অঙ্গের অলঙ্কার খুলিয়া ভুলায় ফেলিতেছেন, হস্তের চম্পকোপম