পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (প্রথম ভাগ).djvu/১৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যুগলাঙ্গুরীর సి জানিলাম ষে, আমি বিধবা হইয়াছি, স্বজনহীন মৃতের ধন আপনার হস্তগত হইয়াছে । নহিলে তিনি জীবিতাবস্থায় ইহা ত্যাগ করিবার সম্ভাবনা ছিল না।” রাজা হাসিয়া কহিলেন, “আমার কথায় বিশ্বাস কর, তুমি বিধবা নহ ।” হি। তবে আমার স্বামী অামার অপেক্ষাও দরিদ্র । ধনলোভে ইহা বিক্রয় করিয়াছেন । রা। তোমার স্বামী ধনী ব্যক্তি । হি। তবে আপনি বলে ছলে-কৌশলে তাহার নিকট ইহা অপহরণ করিয়াছেন । রাজা এই দুঃসাহসিক কথা শুনিয়া বিস্মিত হইলেন । বলিলেন, “তোমার বড় সাহস, রাজা মদনদেব চোর, ইতা আর কেহ বলে না।” হি। নচেৎ আপনি এ অঙ্গুরীয় কোথায় পাইলেন ? রা। আনন্দ স্বামী তোমার বিবাহের রাত্রে ইহা আমার অঙ্গুলিতে পরাইয়া দিয়াছেন । হিরন্ময়া তখন লজ্জায় অধোমুখ হইয়া কহিলেন, “আৰ্য্যপুত্র! আমার অপরাধ ক্ষমা করুন, আমি চপলা, না জানিয়া কটুকথা বলিয়াছি।” নবম পরিচ্ছেদ হিরন্ময়ী রাজমহিষী, ইহা শুনিয়া হিরণায়ী অভ্যন্ত ধিস্মিত হইলেন ; কিন্তু কিছুমাত্র আহলাদিত হইলেন না ; বরং বিষণ্ণা হইলেন । ভাবিতে লাগিলেন ষে, “আমি এতদিন পুরন্দরকে পাই নাই বটে, কিন্তু পরপত্নীত্বের যন্ত্রণাভোগ করি নাই । এখন হইতে আমার সে যন্ত্রণা আরম্ভ হইল। আর আমি হৃদয়মধ্যে পুরন্দরের পত্নী—কি প্রকারে অন্যানুরাগিণী হইয়া এই মহাত্মার গৃহ কলঙ্কিত করিব ?” হিরন্ময়ী ভাবিতেছিলেন, এমত সময়ে রাজা বলিলেন, "হিরন্ময়ি ! তুমি আমার মহিষী বটে ; কিন্তু তোমাকে গ্রহণ করিবার পূৰ্ব্বে আমার কয়েকটি কথা জিজ্ঞাস্ত আছে । তুমি বিনা মূল্যে পুরন্দরের গৃহে বাস কর ८कन ?” হিরন্ময়ী অধোবদন হইলেন । রাজা পুনরপি জিজ্ঞাসা করিলেন, “তোমার দাসী আমলা সৰ্ব্বদা পুরন্দরের গৃহে যাতায়াত করে কেন ?” হিরন্ময়ী আরও লজ্জাবনতমুখী হইয়া রহিলেন, ভাবিতেছিলেন, “রাজা মদনদেব কি সৰ্ব্বজ্ঞ ?" তখন রাজা কহিলেন, “আর একটা গুরুতর কথা আছে। তুমি পরনারী হইয়। পুরন্দর প্র হীরকহার গ্রহণ করিয়াছিলে কেন ?” - এবার হিরন্ময়ী কথা কহিলেন। বলিলেন, “আৰ্যপুত্র! জানিলাম, আপনি সৰ্ব্বজ্ঞ নহেন। হীরকহার আমি ফিরাইয়া দিয়াছি।” রাজা । তুমি সেই হার আমার নিকট বিক্রয় করিয়াছ । এই দেখ সেই হার । এই বলিয় রাজা কোঁটার মধ্য হইতে হার বাহির করিয়া দেখাইলেন, হিরন্ময়ী হীরকহার চিনিতে পারিয়া বিস্মিত হইলেন । কহিলেন, “আৰ্য্যপুত্ৰ ! এ হার কি আমি স্বয়ং আসিয়া আপনার কাছে বিক্রয় করিয়াছি ?” রা। না, তোমার দাসী বা দূতী অমলা আসিয়া বিক্রয় করিয়াছে । তাহাকে ডাকাইব ? হিরণয়ীর অমর্ষান্বিত বদনমণ্ডলে একটু হাসি দেখা দিল । তিনি বলিলেন, “আৰ্য্যপুত্র, অপরাধ ক্ষমা করুন। অমলাকে ডাকাইতে হইবে না, আমি এ বিক্রয় স্বীকার করিতেছি ।” এবার রাজা বিস্মিত হইলেন । বলিলেন, “স্ত্রীলোকের চরিত্র অভাবনীয় । তুমি পরের পত্নী হইয়া পুরন্দরের নিকট কেন এ হার গ্রহণ করিলে ?” ছি। প্রণয়োপহার বলিয়া গ্রহণ করিয়াছি। . রাজা আরও বিস্মিত হইলেন । জিজ্ঞাসা করিলেন, “সে কি ? কি প্রকারে প্রণয়োপহার ?” হি । আমি কুলট । মহারাজ ! আমি আপনার গ্রহণের ষোগ্য নহি । আমি প্রণাম করিতেছি, আমাকে বিদায় দিন। আমার সঙ্গে বিবাহ বিস্তৃত ইউন । হিরণায়ী রাজাকে প্রণাম করিয়া গমনোদ্যত হইয়াছেন, এমন সময়ে রাজার বিস্ময়বিকাশক মুখকাস্তি অকস্মাৎ প্রফুল্প হইল । তিনি উচ্চৈহাস্ত করিয়া উঠিলেন । হিরন্ময়ী ফিরিল। রাজা কহিলেন, “হিরন্ময়ি! তুমিই জিতিলে, আমি হারিলাম । তুমিও কুলটা নহ, আমিও তোমার স্বামী নহি । যাইও না ।” হি। মহারাজ ! তবে এ কাণ্ডটা কি, আমাকে বুঝাইয়া বলুন । আমি অতি সামান্ত স্ত্রী, আমার সঙ্গে আপনার তুল্য গম্ভীরপ্রকৃতি রাজাধিরাজের রহস্ত সম্ভবে না । রাজা হাস্তত্যাগ না করিয়া বলিলেন, “আমার স্তায় রাজারই এইরূপ রহস্ত সম্ভবে । ছয় বৎসর হইল, তুমি একখানি পত্রাদ্ধ অলঙ্কারমধ্যে পাইয়া ছিলে, তাহা কি আছে ?” *