মৃণালিনী মাধ। গৌড়েশ্বরের সভাপণ্ডিত মানবধৰ্ম্মশাস্ত্রেও কি পারদর্শী নহেন ? দামো। কি জ্বালা ! আপনি আমাকে বিহবল করিয়া তুলিলেন । আপনার সম্মুখে সরস্বতী বিমন। হয়েন, আমি কোম্ ছার ? আপনার সম্মুখে গ্রন্থের নাম স্মরণ হইবে না ; কিন্তু কবিতাটা শ্রবণ করুন । মাধ। গৌড়েশ্বরের সভাপণ্ডিত যে অনুষ্টপ ছন্দে একটি কবিতা রচনা করিয়া থাকিবেন, ইহা কিছুই অসম্ভব নহে ; কিন্তু আমি মুক্তকণ্ঠে বলিতেছি— তুরকজাতীয় কর্তৃক গৌড়বিজয়ুবিষয়িণী কথা কোন শাস্ত্রে কোথাও নাই । e পশুপতি কহিলেন, “আপনি কি সৰ্ব্বশাস্ত্রবিৎ ?” মাধবাচার্য্য কহিলেন, “আপনি যদি পারেন, তবে আমাকে অশাস্ত্রজ্ঞ বলিয়া প্রতিপন্ন করুন ।” সভাপণ্ডিতের এক জন পারিষদ কহিলেন, “আমি করিব | আত্মশ্লাঘা শাস্ত্রে নিষিদ্ধ । ষে আত্মশ্লাঘাপরবশ, সে যদি পণ্ডিত, তবে মুখ কে ?” মাধবাচাৰ্য্য কহিলেন, “মুর্থ তিন জন । ষে আত্মরক্ষায় যত্নহীন, যে সেই ষত্বহীনতার প্রতিপোষক, আর যে আত্মবুদ্ধির অতীত বিষয়ে বাক্যব্যয় করে, ইহারাই মুখ। আপনি ত্ৰিবিধ মূখ।” সভাপণ্ডিতের পারিষদ অধোবদনে উপবেশন করিলেন । পশুপতি কহিলেন, “যবন আইসে, আমরা যুদ্ধ করিব।” মাধবাচাৰ্য্য কহিলেন, “সাধু সাধু! আপনার ষেরূপ যশ, সেইরূপ প্রস্তাব করিলেন । জগদীশ্বর আপনাকে কুশলী করুন। আমার কেবল এই জিজ্ঞাস্ত যে, যদি যুদ্ধই অভিপ্রায়, তবে তাহার কি উদ্যোগ হইয়াছে ?” পশুপতি কহিলেন, “মন্ত্রণা গোপনেই বক্তব্য । এ সভাতলে প্রকাগু নহে । কিন্তু যে অশ্ব, পদাতি এবং নাবিকসেনা সংগৃহীত হইতেছে, কিছু দিন এই নগরী পর্য্যটন করিলে তাহা জানিতে পারিবেন ।” মা ! কতক কতক জানিয়াছি । প । তবে এ প্রস্তাব করিতেছেন কেন ? মা ! প্রস্তাবের তাৎপৰ্য্য এই যে, এক বীরপুরুষ এক্ষণে এখানে সমাগত হইয়াছেন । মগধের যুবরাজ হেমচন্দ্রের বীৰ্য্যের খ্যাতি শুনিয়া থাকিবেন । প। বিশেষ শুনিয়াছি । ইহাও শ্রত আছি যে, তিনি মহাশয়ের শিষ্য। আপনি বলিতে পারিবেন যে, ঈদৃশ বীরপুরুষের বাহুরক্ষিত মগধরাজ্য শক্ৰ হস্তগত হইল কি প্রকারে ? S a মা । ষবনবিপ্লবের কালে যুবরাজ প্রবাসে ছিলেন । এইমাত্র কারণ। প। তিনি কি এক্ষণে নবদ্বীপে আগমন করিয়াছেন ? মা । আসিয়াছেন। রাজ্যাপহারক যবন এই দেশে আগমন করিতেছে শুনিয়া, এই দেশে তাহদিগের সহিত সংগ্রাম করিয়া দ ম্যর দণ্ডবিধান করিবেন। গৌড়রাজ র্তাহার সঙ্গে সন্ধিস্থাপন করিয়া উভয়ে শত্রুবিনাশের চেষ্টা করিলে উভয়ের মঙ্গল । প | রাজবল্লভেরা অদ্যই তাহার পরিচর্য্যায় নিযুক্ত হইবে । র্তাহার নিবাসার্থ যথাযোগ্য বাসগৃহ নির্দিষ্ট হইবে। সন্ধিনিবন্ধনের মন্ত্রণা যথাযোগ্য সময়ে স্থির হইবে । পরে রাজাজ্ঞায় সভাভঙ্গ হইল ।
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ কুসুমনিৰ্ম্মিত উপনগরপ্রান্তে গঙ্গাতীরবর্তী এক অট্টালিকা হেমচন্দ্রের বাসার্থ রাজপুরুষের নির্দিষ্ট করিলেন। হেমচন্দ্র মাধবাচার্য্যের পরামর্শানুসারে সুরম্য অট্টালিকায় আবাস সংস্থাপিত করিলেন । নবদ্বীপে জনাৰ্দ্দন নামে এক বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ বাস করিতেন । তিনি বয়োবাহুল্য-প্রযুক্ত এবং শ্রবণেন্দ্রিয়ের হানিপ্রযুক্ত সৰ্ব্বতোভাবে অসমর্থ, অথচ নিঃসহায় । তাহার সহধৰ্ম্মিণীও প্রাচীন এবং শক্তিহীন । কিছু দিন হইল, ইহাদিগের পর্ণকুটীর প্রবল বাত্যায় বিনাশপ্রাপ্ত হইয়াছিল। সেই অবধি ইহারা আশ্রয়াভাবে এই বৃহৎ পুরীর এক পাশ্বে রাজপুরুষদিগের অনুমতি লষ্টয়া বাস করিতেছিলেন। এক্ষণে কোন রাজপুত্র আসিয়া তথায় বাস করিবেন শুনিয়া, তাহারা পরাধিকার ত্যাগ করিয়া যাসাস্তরের অন্বেষণে যাইবার উদ্যোগ করিতেছিলেন । হেমচন্দ্র উহা শুনিয়া দুঃখিত হইলেন। বিবেচনা করিলেন যে, এই বৃহৎ ভবনে আমাদিগের উভয়েরই স্থান হইতে পারে। ব্রাহ্মণ কেন নিরাশ্রয় হইবেন ? হেমচন্দ্র দিগ্বিজয়কে আজ্ঞা করিলেন, “ব্রাহ্মণকে গুহত্যাগ করিতে নিবারণ কর।” তৃত্যু ঈষৎ হাস্ত করিয়া কহিল, “এ কার্য্য ভূত্যের দ্বারা সম্ভবে না। ব্রাহ্মণঠাকুর আমার কথা কাণে তুলেন না।” ব্রাহ্মণ বস্তুতঃ অনেকেরই কথা কাণে তুলেন না – কেন না, তিনি বধির । হেমচন্দ্র ভাবিলেন, ব্রাহ্মণ