পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (প্রথম ভাগ).djvu/২৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(Ն করিয়া দিল। তীর্থপর্য্যটনে রাজপুত্রের কুলপুরোহিত সঙ্গে ছিলেন । তিনি আমাদিগের বিবাহ দিলেন ।” গি । কন্যা সম্প্রদান করিল কে ? - স্ব। অরুন্ধতী নামে আমার এক প্রাচীন কুটুম্ব ছিলেন । তিনি সম্বন্ধে মা'র ভগিনী হইতেন । আমাকে বালককাল হইতে লালন পালন করিয়াছিলেন । তিনি আমাকে অত্যন্ত স্নেহ করিতেন ; আমার সকল দৌরাত্ম্য সহ করিতেন । আমি তাহার নাম করিলাম । দিগ্বিজয় কোন ছলে পুরমধ্যে তাহাকে সংবাদ পঠাইয়া দিয়া ছলক্রমে হেমচঞ্জের গৃহে তাহাকে ডাকিয়া আনিল । অরুন্ধতী মনে জানিতেন, আমি যমুনায় ডুবিয়া মরিয়াছি। তিনি আমাকে জীবিত দেখিয়া এতই আছলাদিত হইলেন যে, আমার কোন কথাতেই অসন্তুষ্ট হইলেন না । অামি যাহা বলিলাম, তাহাতেই স্বীকৃত হইলেন । তিনিই কন্যা সম্প্রদান করিলেন। বিবাহের পর মাসীর সঙ্গে বাপের বাড়ী গেলাম। সকল সত্য বলিয়া কেবল বিবাহের কথা লুকাইলাম। আমি, হেমচন্দ্র, দিগ্বিজয়, কুলপুরোহিত আর অরুন্ধতী মাসী ভিন্ন এ বিবাহ আর কেহ জানিত না । অদ্য তুমি জানিলে । গি । মাধবাচার্য্য জানেন না ? মু। না । তিনি জানিলে সৰ্ব্বনাশ হইত। জগধরাজ তাহা হইলে অবশু শুনিতেন । আমার বাপ বৌদ্ধ, মগধরাজ বোঁদ্ধের বিষম শক্র । গি। ভাল, তোমার বাপ যদি তোমাকে এ পৰ্য্যস্ত কুমারী বলিয়া জানিভেল, তবে এত বয়সেও তোমার বিবাহ দেন নাই কেন ? স্ব। বাপের দোষ নাই । তিনি অনেক যত্ন করিয়াছেন, কিন্তু বৌদ্ধ সুপাত্র পাওয়া সুকঠিন ; কেন না, বৌদ্ধধৰ্ম্ম প্রায় লোপ হইয়াছে। পিতা বৌদ্ধ জামাপ্ত চাহেন, অথচ সুপাত্রও চাহেন। এরূপ একটি পাওয়া গিয়াছিল, সে আমার বিবাহের পর । ৰিবাহের দিন স্থির হইয়া সকল উদ্যোগও হইয়াছিল। কিন্তু আমি সেই সময়ে জর করিয়া বসিলাম । পাত্র অন্তর বিবাহ করিল। গি। ইচ্ছাপূৰ্ব্বক জর করিয়াছিলে ? স্ব। ছ, ইচ্ছাপূৰ্ব্বক। আমাদিগের উষ্ঠানে একটা কুয়া আছে, তাহার জল কেহ স্পর্শ করে না। তাহার পানে বা স্নানে নিশ্চিত জ্বর। আমি রাত্রিতে গোপনে সেই জলে স্নান করিয়াছিলাম । গি । আবার সম্বন্ধ হইলে, সেইরূপ করিতে ? বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী মৃ । সন্দেহ কি ? নচেৎ হেমচক্সের নিকট পলাইয়া যাইতাম । গি । মথুরা হইতে মগধ এক মাসের পথ। স্ত্রীলোক হইয়া কাহার সহায়ে পলাইতে ? মৃ । আমার সহিত সাক্ষাতের জন্য হেমচন্দ্র মথুরায় এক দোকান করিয়া আপনি তথায় রত্নদাস বণিক্‌ বলিয়া পরিচিত হইয়াছিলেন । বৎসরে একবার করিয়া তথায় বাণিজ্য করিতে আসিতেন । যখন তিনি তথায় না থাকিতেন, তখন দিগ্বিজয় তথায় তাহার দোকান রাখিত । দিগ্বিজয়ের প্রতি আদেশ ছিল যে, যখন আমি যেরূপ আজ্ঞা করিব, সে তখনই সেরূপ করিবে। সুতরাং আমি নিঃসহায় ছিলাম না । কথা সমাপ্ত হইলে গিরিজায়া বলিল, "ঠাকুরাণি ! আমি একটি বড় গুরুতর অপরাধ করিয়াছি। আমাকে মার্জনা করিতে হইবে ॥ আমি তাহার উপযুক্ত প্রায়শ্চিত্ত করিতে স্বীকৃত আছি ।” মৃ । কি এমন গুরুতর কাজ করিলে ? গি । দিগ্বিজয়ট তোমার হিতকারী, তাছ। আমি জানিতাম না, আমি জানিতাম, ওটা অতি অপদার্থ। এ জন্য আমি প্রভাতে তাঁহাকে ভালরূপে স্বা-কত বাট দিয়াছি, তা ভাল করি নাই। মৃণালিনী হাসিয়া বলিলেন, “তা কি প্রায়শ্চিত্ত করিবে ?” গি । ভিখারীর মেয়ের কি বিবাহ হয় ? মৃ । (হাসিয়া ) করিলেই হয়। “তবে আমি সে অপদার্থটাকে বিবাহ করিব— আর কি করি ?” মৃণালিনী আবার হাসিয়া বলিলেন, “তবে আজি তোমার গায়ে হলুদ দিব ।” দ্বাদশ পরিচ্ছেদ পরামর্শ হেমচন্দ্র মাধবাচার্য্যের বসতিস্থলে উপস্থিত হইয়া দেখিলেন যে, আচার্ষ্য জপে নিযুক্ত আছেন । হেমচন্দ্র প্রণাম করিয়া কহিলেন;–“আমাদিগের সকল যত্ন বিফল হইল। এখন ভূত্যের প্রতি আর কি আদেশ করেন ? যবন গোঁড় অধিকার করিয়াছে। বুৰি এ ভারতভূমির অষ্টে_ যবনের দাসত্ব বিধিলিপি। নচেৎ বিনা বিৰাজে,