পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (প্রথম ভাগ).djvu/২৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

鯰· Woo এইরূপ কথোপকথনের পর হেমচন্দ্র মাধবীচার্য্যের নিকট বিদায় হইলেন । মাধবাচার্য্য আশীবৰ্বাদ, আলিঙ্গন করিয়া সাশ্রলোচনে তাহাকে বিদায় করিলেন । ত্ৰয়োদশ পরিচ্ছেদ মহম্মদ আলির প্রায়শ্চিত্ত যে রাত্রে রাজধানী যবন সেনা-বিপ্লবে পীড়িত হইতেছিল, সেই রাত্রে পশুপতি একাকী কারাগারে অবরুদ্ধ ছিলেন । নিশাবশেষে সেনা-বিপ্লব সমাপ্ত হুইয়া গেল। মহম্মদ আলি তখন র্তাহার সম্ভাষণে আসিলেন । পশুপতি কহিলেন,—“যষন !— প্রিয়সম্ভাষণে আর আবষ্ঠক নাই । একবার তোমারই প্রিয়সম্ভাষণে বিশ্বাস করিয়া এই অবস্থাপন্ন হইয়াছি । বিধৰ্ম্মী যবনকে বিশ্বাস করিবার যে ফল, তাহ প্রাপ্ত হইয়াছি ; এখন আমি মৃত্যু শ্রেয়ঃ বিবেচনা করিয়া অন্ত ভরস ভ্যাগ করিয়াছি । তোমাদিগের কোন প্রিয়সম্ভাষণ শুনিব না ।" মহম্মদ আলি কহিল, “আমি প্রভুর আজ্ঞা প্রতিপালন করি—প্রভুর আজ্ঞা প্রতিপালন করিতে আসিয়াছি। আপনাকে যবন বেশ পরিধান করিতে হইবে।” পশুপতি কছিলেন, “সে বিষয়ে চিত্ত স্থির করুন । আমি এক্ষণে মৃত্যু স্থির করিয়াছি। প্রাণত্যাগ করিতে স্বীকৃত আছি, কিন্তু যবনধৰ্ম্ম অবলম্বন করিব না ।” ম। আপনাকে এক্ষণে ষবনধৰ্ম্ম অবলম্বন করিতে বলিতেছি না। কেবল রাজপ্রতিনিধির তৃপ্তির জন্য যবনের পোষাক পরিধান করিতে বলিতেছি । প। ব্রাহ্মণ হইয়া কি জন্য স্নেচ্ছের বেশ পরিব ? ম। আপনি ইচ্ছাপূর্বক না পরিলে আপনাকে বলপূৰ্ব্বক পরাইব । অস্বীকারে লাভের ভাগ অপমান । পশুপতি উত্তর করিলেন না। মহম্মদ আলি স্বহস্তে র্তাহাকে যবনবেশ পরাইলেন ; কহিলেন, “আমার সঙ্গে আসুন ।” প। কোথায় যাইব ? ম। আপনি বন্দী—জিজ্ঞাসার প্রয়োজন কি ? বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী মহম্মদ আলি তাহাকে সিংহদ্বারে লইয়া চলিলেন । ষে ব্যক্তি পশুপতির রক্ষায় নিযুক্ত ছিল, সেও সঙ্গে সঙ্গে চলিল । দ্বারে প্রইরিগণের জিজ্ঞাসামতে মহম্মদ আলি আপন পরিচয় দিলেন ; এক সঙ্কেত করিলেন । প্রহরিগণ র্তাহাদিগকে যাইতে দিল । সিংহদ্বার হইতে নিষ্ক্রান্ত হইয়া তিন জনে কিছু দুর রাজপথ অতিবাহিত করিলেন । তখন ষবনসেন নগরমন্থন সমাপন করিয়া বিশ্রাম করিতেছিল । সুতরাং রাজপথে আর উপদ্রব ছিল না । মহম্মদ আলি কহিলেন,—”ধৰ্ম্মাধিকার ! আপনি আমাকে বিনা দোষে তিরস্কার করিয়াছেন । বখতিয়ার খিলিজির এরূপ অভিপ্রায় আমি ,কিছুই অবগত ছিলাম না। তাহা হইলে আমি কদাচ প্রবঞ্চকের বার্তাবহ হুইয়া আপনার নিকট যাইতাম না। যাঃ হউক, আপনি আমার কথায় প্রত্যয় করিয়া এরূপ দুৰ্দ্দশাপন্ন হইয়াছেন, ইহার যথাসাধ্য প্রায়শ্চিত্ত করিলাম। গঙ্গাতীরে নৌকা প্রস্তুত আছে—আপনি যথেচ্ছ স্থানে প্রস্থান করুন । আমি এখান হইতে বিদায় হই ।” পশুপতি বিস্ময়াপন্ন হইয়া অবাক হইয়া রছিলেন। মহম্মদ আলি পুনরপি কহিতে লাগিলেন, “আপনি এই রাত্রিমধ্যে এ নগরী ত্যাগ করিবেন । নচেৎ কাল প্রাতে যবনের সহিত আপনার সাক্ষাৎ হইলে প্রমাদ ঘটবে। খিলিজির আজ্ঞার বিপরীত আচরণ করিলাম—ষ্টহার সাক্ষী এই প্রহরী। সুতরাং আত্মরক্ষার জন্য ইহাকেও দেশাস্তরিত করিলাম । ইহাকেও আপনার নৌকায় লইয়া যাইবেন।” এই বলিয়া মহম্মদ আলি বিদায় লইলেন। পশুপতি কিমৃৎকাল বিস্ময়াপন্ন হইয়া থাকিয়া গঙ্গা তীরাভিমুখে চলিলেন । ப_ চতুর্দশ পরিচ্ছেদ ধাতুমূৰ্ত্তির বিসর্জন মহম্মদ আলির নিকট বিদায় হইয়া, রাজপথ অতিবাহিত করিয়া পশুপতি ধীরে ধীরে চলিলেন । ধীরে ধীরে চলিলেন—ষবনের কারাগার হইতে বিমুক্ত হইয়াও দ্রুতপদক্ষেপণে র্তাহার প্রবৃত্তি জন্মিলল। রাজপথে যাহা দেখিলেন, তাহাতে আপনার মনোমধ্যে আপনি মরিলেন। তাহার প্রতি পদে মৃত নাগরিকদের দেহ চরণে বাজিতে লাগিল ; প্রতি পদে