পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (প্রথম ভাগ).djvu/৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাজসিংহ জৈব । এখন সেখানে যাইতে পারিবে ? আসি । হুকুম দিলেই পারি । জেব। আজ মবারক আলি ( একটু গলা কাপিল ) সর্পাঘাতে মরিয়াছে, জান ? আসি । জানি । জেব । কোথায় তাহাকে গোর দিয়াছে, জান ? আসি দেখি নাই, কিন্তু যে গোরস্থানে গোর দিবে, তাহা আমি জানি। নুতন গোর, ঠিকানা করিয়া লইতে পারিব । জেব। আমি তোমাকে দুই শত অসিরফি দিতেছি । এক শ হাতেম মালকে দিবে, এক শ আপনি লইবে । মবারক আলির গোর খুঁড়িয়া, মোরদার বাহির করিয়া, চিকিৎসা করিয়া তাহাকে বঁাচাইবে । যদি বাচে, তাহাকে আমার কাছে লইয়া আসিবে । এখনই যাও । আসরফি লইয়া খোজা আসিরদীন তখনই বিদায় হইল । নবম পরিচ্ছেদ সমিধ সংগ্রহ-দরিয়া আর একবার রঙ মহালে পাথরের দ্রব্য বেচিয় মাণিকলাল নিৰ্ম্মলকুমারীর খবর লইল । এবারও সেই পাথরে কেীট চাবি-বন্ধ হইয়া আসিয়াছিল । চাবি খুলিয়া, নিৰ্ম্মল পাইল—সেই দৌত্যপারাবত । নিৰ্ম্মল সেটিকে রাখিল । পত্রের দ্বারা পুৰ্ব্বমত সংবাদ পাঠাইল । লিখিল, “সব মঙ্গল ! তুমি এখন যাও, * পূৰ্ব্বেই বলিয়াছি, আমি বাদশাহের সঙ্গে द !” মাণিকলাল তখন দোকান-পাট উঠাইয়া উদয়পুর যাত্রা করিল । রাত্রি প্রভাত হইবার তখন অল্প বিলম্ব আছে । দিল্লীর অনেক ‘দরওয়াজা ।" পাছে কেহ কিছু সন্দেহ করে, এ জন্য মাণিকলাল আজমীর দরওয়াজায় না গিয়া অভ্যন্ত দরওয়াজায় চলিল। পথিপাশ্বে একটা সামান্ত গোরস্থান আছে । একটা গোরের নিকট দুইটা লোক দাড়াইয়া আছে। মাণিকলালকে এবং তাহার সমভিব্যাহারীদিগকে দেখিয়া, সেই দুইটা মানুষ দৌড়াইয়। পলাইল। মাণিকলাল তখন ঘোড়া হইতে নামিয়া নিকটে গিয়া দেখিল । দেখিল যে, গোরের মাটী উঠাইয়া উহার মৃতদেহ বাহির করিয়াছে। মাণিকলাল সেই মৃতদেহ খুব ఆసి যত্বের সহিত, উদয়োম্মুখ উষার আলোকে পর্যবেক্ষণ করিল। তার পর কি বুঝিয়া ঐ দেহ আপনার অশ্বের উপর তুলিয়া বাধিয়া কাপড় ঢাকা দিয়া আপনি পদব্রজে চলিল । মাণিকলাল দিল্লীর দরওয়াজার বাহিরে গেল । কিছু পরে স্বৰ্য্যোদয় হইল, তখন মাণিকলাল ঐ মৃতদেহ ঘোড়া হইতে নামাইয়া জঙ্গলের ছায়ায় লইয়া গিয়া রাখিল এবং আপনার পেটার হইতে একটি ঔষধের বড়ী বাহির করিয়া তাহ কোন অনুপান দিয়া" মাড়িল । তার পর ছুরি দিয়া মৃতদেহটা স্থানে স্থানে একটু একটু চিরিয়া, ছিদ্রমধ্যে সেই ঔষধ প্রবেশ করাষ্টয়া দিল এবং জিবে ও চক্ষুতে কিছু কিছু মাখাইয়া দিল । দুই দণ্ড পরে আবার ঐরূপ করিল। এইরূপ তিনবার ঔষধপ্রয়োগ করিলে মৃতব্যক্তি নিশ্বাস ফেলিল। চারিবারে সে চক্ষু চাহিল ও তাহার চৈতন্য হইল। পাঁচবারে সে উঠিয়া বসিয়া কথা কহিল । মাণিকলাল একটু দুগ্ধ সংগ্রহ করাইয়াছিল । তাহ মবারককে পান করাইল । মবারক ক্রমশঃ দুগ্ধ পান করিয়া সবল হইলে সকল কথা তাহার স্মরণ হইল । তিনি মাণিকলালকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “কে আমাকে বঁাচাইল ? আপনি ?” মাণিকলাল বলিল, “ই্যা ” মবারক বলিল, “কেন বঁাচাইলেন ? আপনাকে : আমি চিনিয়াছি । আপনার সঙ্গে রূপনগরের পাহাড়ে যুদ্ধ করিয়াছি। আপনি আমায় পরাভব করিয়াছিলেন ।” মাণিক। আমিও আপনাকে চিনিয়াছি । আপনিই মহারাণাকে পরাজয় করেন, আপনার এ অবস্থা কেন ঘটিল ? মবারক । এখন বলিবার কথা নহে, সময়ান্তরে বলিব । আপনি কোথায় যাইতেছেন—উদয়পুরে ? মাণিক ; হুঁ । মবা । আমাকে সঙ্গে লইবেন ? দিল্লীতে আমার ফিরিবার যো নাই, তা বুঝিতেছেন বোধ হয়। আমি রাজদণ্ডে দণ্ডিত । মাণিক । সঙ্গে লইয়। যাইতে পারি ; কিন্তু আপনি এখন বড় দুৰ্ব্বল । মবা । সন্ধ্যা লাগায়েৎ শক্তি পাইতে পারি । ততক্ষণ বিলম্ব করিতে পারিবেন কি ? মাণিক । করিব । মবারককে আর কিছু দুগ্ধাদি খাওয়াইল । গ্রাম হইতে মাণিকলাল একটা টাটু কিনিয়া আনিল ।