পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (প্রথম ভাগ).djvu/৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

సిర్చె অদ্বিতীয় । অতএব পত্র লিখিবার হুকুম হইল । দয়াল সাহা পত্র প্রস্তুত করাইলেন । তাহার মৰ্ম্ম এই যে, বাদশাহ সমস্ত সৈন্ত মেবার হইতে উঠাইয়া লইয়া যাইবেন । মেবারে গোহত্যা ও দেবালয়ভঙ্গ নিবারণ করিবেন, এবং জেজেয়ার কোন দাবী করিবেন না। তাহা হইলে রাজসিংহ পথ মুক্ত করিয়া দিবেন, নিরুদ্বেগে বাদশাহকে যাইতে দিবেন । পত্র সভাসদ সকলকে শুনান হইল। শুনিয়া মাণিকলাল বলিল, “বাদশাহের স্ত্রী-কন্যা আমাদিগের নিকট বন্দী আছে। তাহারা থাকিবে ?” বলিবামাত্র সভামধ্যে একটা হাসির ঘটা পড়িয়া গেল । সকলে একবাক্যে বলিল, “ছাড়া হইবে না ।” কেহ বলিল, “থাক, উহারা মহারাণার আঙ্গিনা বণটাইবে ।” কেহ বলিল, “উহাদের ঢাকায় পাঠাইয়া দাও । হিন্দু হইয়া বৈষ্ণবী সাজিয়া হরিনাম করিবে ।” কেহ বলিল, “উহাদের মূল্যস্বরূপ এক এক ক্রোর টাকা বাদশাহ দিবেন।” ইত্যাদি নানা প্রকার প্রস্তাব হইল। মহারাণা বলিলেন, “দুইটা মুসলমান বঁাদীর জন্ত সন্ধি ত্যাগ করা হইবে না । সেই দুইটাকে ফিরাইয়া দিব লিখিয়া দাও।” সেইরূপ লেখা হইল। পত্ৰখানি মাণিকলালের জিম্মী হুইল। তখন সভাভঙ্গ হইল । নবম পরিচ্ছেদ অগ্নিতে জলসেক সভাভঙ্গ হইল, তবু মাণিকলাল গেল না। সকলেই চলিয়া গেল, মাণিকলাল গোপনে মহারাণাকে জানাইল, “মবারকের বখশিশের কথাটা এই সময়ে মহারাজকে স্মরণ করিয়া দিতে হয় ।” - রাজসিংহ জিজ্ঞাসা করিলেন, “সে কি চায় ?” মাণিক । বাদশাহের যে কন্য। আমাদিগের কাছে বন্দী আছে, তাকেই চায় । রাজসিংহ । তাহাকে যদি বাদশাহের নিকট ফেরৎ না পাঠাই, তবে বোধ করি সন্ধি হইবে না। আর স্ত্রীলোকের উপর কি প্রকারে আমি পীড়ন করিব ? মাণিক। পীড়ন করিতে হইবে না । শাহজাদীর সঙ্গে মবারকের গতরাত্রে সাদী হুইয়াছে । রাজসিংহ । সেই কথা শাহজাদী বাদশাহকে মলিলেই বোধ হয়, সব গোল মিটিবে । বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী মাণিক ৷ এক রকম—কেন না, জুই জনের মাথ৷ কাটা ষাইবে । রাজসিংহ । কেন ? মাণিক । শাহজাদীদের শাহজাদা ভিন্ন বিবাহ নাই । এই শাহজাদী এক জন ক্ষুদ্র সৈনিককে বিবাহ করিয়া দিল্লীর বাদশাহের কুলের কলঙ্ক করিয়াছে । বিশেষ বাদশাহকে না জানাইয়া এ বিবাহ করিয়াছে, এ জন্য তাহাকে দিল্লীর রঙ মহালের প্রথানুসারে বিষ খাইতে হইবে । আর মবারক সাপের বিষে যখন মবেন নাই, তখন তাহাকে হাতীর পায়ে কি শূলে যাইতে হইবে। যদি সে অপরাধও মার্জনা হয়, তবে তিনি মহারাজের ষে উপকার করিয়াছেন, তাহার জন্য বাদশাহের কাছে শুলে যাইবার যোগ্য। জানিতে পারিলে বাদশাহ ঠাহাকে শূলে দিবে। তাহা ছাড়া তিনি বিনামুমতিতে শাহজাদী বিবাহ করিয়াছেন, সে জন্যও শূলে যাইতে বাধ্য । রাজসিংহ । আমি ইহার কিছু প্রতীকার করিতে পারি কি ? - মাণিক । ঔরঙ্গজেব কন্যাজামাতাকে মার্জন না করিলে আপনি সন্ধি করিবেন না, এই নিয়ম করিতে পারেন । রাজসিংহ বলিলেন, “তাহ আমি করিতে স্বীকৃত হইতেছি। উহাদের জন্য আমি একখানি পৃথকৃ পত্র বাদশাহকে লিখিতেছি । তাহাও তুমি ঐ সঙ্গে লইয়া যাও । ঔরঙ্গজেব কন্যাকে মার্জনা করিতে পারেন, কিন্তু মবারককে মার্জনা করিতে তিনি আপাততঃ স্বীকৃত হইলেও, তাহাকে ষে তিনি নিস্কৃতি দিবেন, এমন আমার ভরসা হয় না। যাহা হউক, মবারক যদি ইহাতে সস্তুষ্ট হয়, তবে আমি ইহা করিতে প্রস্তুত আছি ।” এই বলিয়া রাজসিংহ একখানি পৃথক পত্র স্বহস্তে লিখিয়া মাণিকলালকে দিলেন । মাণিকলাল পত্র দুইখানি লইয়৷ সেই রাত্রিতে উদয়পুর চলিল । উদয়পুরে গিয়া মাণিকলাল প্রথম নিৰ্ম্মলকুমারীকে এই সকল সংবাদ দিলেন । নিৰ্ম্মল সন্তুষ্ট হইল। সেও একখানি পত্র বাদশাহকে এই মৰ্ম্মে লিখিল— “শাহানশাহ t বাদীর অসংখ্য কুর্ণিশ । হুজুর যাহা আজ্ঞা করিয়াছিলেন, বাদী তাহা সম্পন্ন করিয়াছে । এক্ষণে হুজুরের সম্মতি পাইলেই হয় । আমার শেষ ভিক্ষাটা স্মরণ রাখিবেন ন সন্ধি করিবেন।” সে পত্রও নিৰ্ম্মল মাণিকলালকে দিল । তার পর নিৰ্ম্মল জেব উন্নিসাকে সকল কথা জানাইল, তিনিও