পাতা:বঙ্কিম চন্দ্রের দীনবন্ধু-জীবনী.pdf/১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\ দীনবন্ধু জীবনী । তাহারা শক্ৰতা করিলে বিশেষ অনিষ্ট করিতে পারুক না পারুক, সৰ্ব্বদা উদ্বিগ্ন করিতে পারে ; এ সকল জানিয়াও দীনবন্ধু নীল-দৰ্পণ প্রচারে পরাঘুখ হয়েন নাই । নীল দর্পণে গ্ৰন্থকারের নাম ছিল না বটে, কিন্তু গ্ৰন্থকারের নাম গোপন করিবার জন্য দীনবন্ধু অন্য কোন প্রকার যত্ন করেন নাই। নীল-দর্পণ প্রচারের পরেই বঙ্গদেশের সকল লোকেই কোন প্রকারে না কোন প্রকারে জানিয়াছিল যে, দীনবন্ধু ইহার প্রণেতা । দীনবন্ধু পরের দুঃখে নিতান্ত কাতর হইতেন, নীল-দৰ্পণ। এই গুণের ফল । তিনি বঙ্গদেশের প্রজাগণের দুঃখ সহৃদয়তার সহিত সম্পূর্ণরূপে অনুভূত করিয়াছিলেন বলিয়াই নীল-দৰ্পণ প্রণীত ও প্রচারিত হইয়াছিল । যে সকল মনুষ্য পরের দুঃখে কাতর হয়, দীনবন্ধু তাহার মধ্যে অগ্রগণ্য ছিলেন। তাহার হৃদয়ের অসাধারণ গুণ এই ছিল যে, যাহার দুঃখ, সে যে ৰূপ কাতর হইতে, দীনবন্ধু ত দ্রুপ বা ততোধিক কাতর হইতেন । ইহার একটা অপুৰ্ব্ব উদাহরণ আমি প্ৰত্যক্ষ করিয়াছি । " একাদ। তিনি যশে। হারে আমার বাসায় অবস্থিতি করিতেছিলেন । রাত্রে তাহার কোন বন্ধুর কোন উৎকট পীড়ার উপক্ৰম হইল। যিনি পীড়ার আশঙ্কা করিতেছিলেন, তিনি দানবন্ধুকে জাগরিত করিলেন, এবং পীড়ার আশঙ্কা জানাইলেন । শুনিয়া দীনবন্ধু মূচ্ছি ত হইলেন । যিনি স্বয়ং পীড়িত বলিয়া সাহায্যাৰ্থ দীনবন্ধুকে জগাইয়াছিলেন, তিনিই আবার দীনবন্ধুর শুশ্রুষায় নিযুক্ত হইলেন । ইহা আমি স্বচক্ষে দেখিয়াছি। সেই দিন জানিয়াছিলাম যে, অন্য যাহার যে গুণ থাকুক, পরের দুঃখে দীনবন্ধুর ন্যায় কেহ কাতর হয় না । সেই গুণের ফল নীল-দৰ্পণ । নীল-দৰ্পণ ইংরেজিতে অনুবাদিত হইয়া ইংলণ্ডে যায়। লং সাহেব তৎপ্রচারের জন্য সুপ্রীম কোটের বিচারে দণ্ডনীয় হইয়া কারাবদ্ধ হয়েন । সীটনকার সাহেব তৎপ্রচার জন্য অপদস্থ হইয়াছিলেন । এ সকল বৃত্তান্ত সকলেই অবগত আছেন । এই গ্রন্থের নিমিত্ত লং সাহেব কারাবদ্ধ হইয়াছিলেন বলিয়াই হউক, অথবা ইহার কোন বিশেষ গুণ থাকার নিমিত্তই হউক, নীল-দৰ্পণ ইয়ুরোপের অনেক ভাষায় অনুবাদিত ও পঠিত হইয়াছিল । এই সৌভাগ্য বাঙ্গালার আর কোন গ্রন্থেরই ঘটে নাই। গ্রন্থের সৌভাগ্য যতই হউক, কিন্তু যে যে ব্যক্তি ইহাতে লিপ্ত ছিলেন, প্ৰায় তঁাহারা সকলেই কিছু কিছু বিপদগ্ৰস্ত হইয়াছিলেন । ইহার প্রচার করিয়া। লং সাহেব কারাবদ্ধ হইয়াছিলেন ; সীটনকার