পাতা:বঙ্কিম চন্দ্রের দীনবন্ধু-জীবনী.pdf/২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S 8 দীনবন্ধু-জীবনী । রাগে দীনবন্ধুর সমালোচক-শ্রেণী-মধ্যে প্ৰবেশ করিয়াছিল। এ শ্রেণীস্থ নিন্দকদিগের নিন্দায় দীনবন্ধু হাসিতেন,--নিয় শ্রেণীর সংবাদপত্রে তঁহার সমুচিত ঘুণা ছিল, ইহা বলা বাহুল্য। কিন্তু “কলিকাতা রিবিউ”র ন্যায় পত্রে কোন নিন্দা দেখিলে তিনি ক্ষুব্ধ এবং বিরক্ত হইতেন। কলিকাতা রিবিউতে “সুরধুনী” কাব্যের যে সমালোচনা প্ৰকাশিত হইয়াছিল, তাহ অন্যায় বোধ হয় না । দীনবন্ধু যে ইহাতে রাগ করিয়াছিলেন, ইহাই অন্যায় । “ভোতারাম ভট” দীনবন্ধুর চরিত্রে ক্ষুদ্র কলঙ্ক ! ইহা স্পষ্ট করিয়া বলা যাইতে পারে যে, দীনবন্ধু কখন একটা ও অসৎ কাৰ্য্য করেন নাই । তঁহার স্বভাব তাদৃশ তেজস্বী ছিল না বটে, বন্ধুর অনুরোধ ব৷ সংসৰ্গদোষে নিন্দনীয় কাৰ্য্যের কিঞ্চিৎ সংস্পর্শ তিনি সকল সময়ে এড়াইতে পারিতেন না ; কিন্তু যাহা অসৎ, যাহাতে পরের অনিষ্ট আছে, যাহা পাপের কাৰ্য্য, এমত কাৰ্য্য দীনবন্ধু কখনও করেন নাই । তিনি অনেক লোকের উপকার করিয়াছেন,তাহার অনুগ্ৰহে বিস্তর লোকের অন্নের সংস্থান হইয়াছে । একটী দুলােভ সুখ দীনবন্ধুর কপালে ঘাঁটিয়াছিল। তিনি সাধ্বী স্নেহশালিনী পতিপরায়ণা পত্নীর স্বামী ছিলেন। দীনবন্ধুর অল্প বয়সে বিবাহ হয় নাই । হুগলীর কিছু উত্তর বংশবাটী গ্রামে তাহার বিবাহ হয় । দীনবন্ধু চিরদিন গৃহসুখে সুখী ছিলেন । দম্পতী-কলহ, কখন না। কখন সকল ঘরেই হইয়া থাকে, কিন্তু কস্মিন কালে মুহুৰ্ত্ত নিমিত্ত ইহঁদের কথাপ্তির হয় নাই। একবার কলহ করিবার নিমিত্ত দীনবন্ধু দৃঢ়প্ৰতিজ্ঞ হইয়াছিলেন, কিন্তু প্ৰতিজ্ঞা বৃথা হইয়াছিল। বিবাদ করিতে পারেন নাই । কলহ করিতে গিয়া তিনিই প্ৰথমে হাসিয়া ফেলেন, কি তাহার সহধৰ্ম্মিণী রাগ দেখিয়া উপহাস দ্বারা বেদখল করেন, তাহা এক্ষণে আমার স্মরণ নাই । দীনবন্ধু আটটা সস্তান রাখিয়া গিয়াছেন । দীনবন্ধু বন্ধুবর্গের প্রতি বিশেষ স্নেহবান ছিলেন । আমি ইহা বলিতে পারি যে, তাহার ন্যায় বন্ধুর প্রীতি সংসারের একটা প্ৰধান সুখ । র্যাহারা তাহা হারাইয়াছেন, তাহদের দুঃখ বৰ্ণনীয় নহে ।