পাতা:বঙ্কিম চন্দ্রের দীনবন্ধু-জীবনী.pdf/২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দীনবন্ধু-জীবনী । SS কল্পনার দ্বারা বসাইতে পারিলেই তাহার সঙ্গে আমার সহানুভূতি জন্মে। যদি তাহাই হয়, তবে এমন হইতে পারে যে, অতি নিৰ্দয়-নিষ্ঠুর ব্যক্তিও কল্পনাশক্তির বল থাকিলে কাব্য প্রণয়ন কালে দুঃখীর সঙ্গে আপনার সহানু ভূতি জন্মাইয়া লইয়া কাব্যের উদ্দেশ্য সাধন করেন। কিন্তু আবার এমন শ্রেণীর লোক ও আছেন, যে দয়া প্রভূতি কোমল বৃত্তি সকল তঁহাদের স্বভাবে এত প্ৰবল যে, সহানুভূতি তঁহাদের স্বতঃসিদ্ধ ; কল্পনার সাহায্যের অপেক্ষা করে না । মনস্তত্ববিদেরা বলিবেন, এখানেও কল্পনাশক্তি লুকাইয়া কাজ করে, তবে সে কাৰ্য্য এমন অভ্যস্ত, বা শীঘ্ৰ সম্পাদিত যে, আমরা বুঝিতে পারি না । এখানেও কল্পনা বিরাজমান। তাই না হয় হইল। তথাপিও একটা প্ৰভেদ হইল। প্রথমোক্ত শ্রেণীর লোকের সহানুভূতি তঁহাদের ইচ্ছা বা চেষ্টার অধীন, দ্বিতীয় শ্রেণীর লোকের সহানুভূতি তঁহাদের ইচ্ছাধীন নহে, তঁহারাই সহানুভূতির অধীন। এক শ্রেণীর লোক যখন মনে করেন, তখনই সহানুভূতি আসিয়া উপস্থিত হয়, নহিলে সে আসিতে পারে না ; সহানুভূতি তাহদের দাসী । অপর শ্রেণীর লোকেরা নিজেই সহানুভূতির দাস, র্তাহারা তাকে চান বা না চান, সে আসিয়া ঘাড়ে .চাপিয়াই আছে, হৃদয় ব্যাপিয়া আসন পাতিয়া বিরাজ করিতেছে। প্রথমোক্ত শ্রেণীর লোকের কল্পনাশক্তি বড় প্ৰবল ; দ্বিতীয় শ্রেণীর লোকের প্রীতি দয়াদি বৃত্তি সকল প্ৰবল । দীনবন্ধু এই দ্বিতীয় শ্রেণীর লোক ছিলেন। তঁহার সহানুভূতি তাহার অধীন বা আয়ত্ত নহে ; তিনি নিজেই সহানুভূতির অধীন। তঁাহার। সৰ্ব্বব্যাপী সহানুভূতি তঁহাকে যখন যে পথে লইরা যাইত, তখন তাহাই করিতে বাধ্য হইতেন । র্তাহার গ্রন্থে যে রুচির দোষ দেখিতে পাওয়া যায়, বোধ হয়, এখন তাহা আমরা বুঝিতে পারিব। তিনি নিজে সুশিক্ষিত এবং নিৰ্ম্মল চরিত্র ; তথাপি তঁহার গ্রন্থে যে রুচির দোষ দেখিতে পাওয়া যায়, তঁহার প্রবলা—দুৰ্দ্ধমনীয়া সহানুভূতিই তাহার কারণ। যাহার সঙ্গে তঁহার সহানুভূতি, যাহার চরিত্র আঁকিতে বসিয়াছেন, তাহার সমুদায় অংশই তাহার কলমের আগয় আসিয়া পড়িত। কিছু বাদ সাদ দিবার তঁহার শক্তি ছিল না ; কেননা, তিনি সহানুভূতির অধীন। সহানুভূতি তঁহার অধীন নহে । আমরা বলিয়াছি যে, তিনি জীবন্ত আদর্শ সম্মুখে রাখিয়া চরিত্র প্রণয়নে নিযুক্ত হইতেন। সেই জীবন্ত আদর্শের সঙ্গে সহানুভূতি হইত বলিয়াই