পাতা:বঙ্কিম চন্দ্রের দীনবন্ধু-জীবনী.pdf/৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরিশিষ্ট । RG বঙ্কিমবাবু নীলদর্পণ-প্রসঙ্গে দীনবন্ধুর পরদুঃখকাতরতা, স্বদেশবৎসলতা ও নিৰ্ভীকতার কথা কীৰ্ত্তন করিয়াছেন। দীনবন্ধু দীনের বন্ধু ছিলেন, এবং প্ৰপীড়িত। মাতৃভূমির সেবায় তিনি তখন অগ্রগণ্য ছিলেন ;-কবির নীলদর্পণ ইহার সাক্ষী ; বঙ্কিম বাবুর মত মহৎ ব্যক্তি ইহার সাক্ষী ; বঙ্গের নীলকরদিগের কলঙ্কিত ইতিহাস ইহার সাক্ষী । এ ত গোল কবির, চরিত্ৰমাহাষ্ম্যের কথা ; ইহাতে কাব্যমাহাত্ম্য কিছু বলা হইল না। দীনবন্ধু “নীলদর্পণ প্ৰণয়ন করিয়া বঙ্গীয় প্ৰজাগণকে অপরিশোধনীয় ঋণে বদ্ধ করিয়াছেন”, ইহা যথাৰ্থ কথা । কিন্তু বঙ্গীয় সাহিত্যে এই গ্রন্থের গৌরব কতখানি, তাহা বলা হয় নাই। একেবারে যদি কিছু বলা না হইত, ক্ষতি ছিল না ; কিন্তু বঙ্কিমবাবু যখন এই গ্রন্থের সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রভাবের কথা বলিবার পর লিখিলেন যে, এ দেশে সামাজিক অনিষ্টের সংশোধনের উদ্দেশ্যে লিখিত কোনও কাব্যই ভাল হয় নাই, এবং হইতে পারে না, তখন একটু স্তম্ভিত হইয়াছিলাম। ঐ কথাগুলি লিখিয়া তাহার পরে যখন নীলদর্পণের প্রশংসায় লিখিলেন যে, “গ্ৰন্থকারের মোহময়ী সহানুভূতি সকলই মাধুৰ্য্যময় করিয়া তুলিয়াছে”, তখন বিষয়ের গুণে কাব্যের মনোহারিত্বে বুঝিলাম। ইংরেজি একটি বচনের অনুবৰ্ত্তিতায় বলিতে পারি যে, ইহাকে বলে,-“ক্ষীণ প্ৰশংসায় দমিয়ে দেওয়া ।” আদৌ বঙ্কিমবাবুর এই মন্তব্যটুকুই যথাৰ্থ বলিয়া গ্ৰহণ করিতে পারি না যে, যে সকল কাব্য উদ্দেশ্য লইয়া রচিত হয়, “সেগুলি কাব্যাংশে নিকৃষ্ট ; কারণ, কাব্যের মুখ্য উদ্দেশ্য সৌন্দৰ্য্য-সৃষ্টি।” যে ইউরোপীয় মন্তব্যের অনুবর্তনে উহা লিখিত, তাহার মূল গেটের একটি বচনে। উহার অতদুর অথর্ব করা সঙ্গত মনে করি না । যাহা সুন্দর নয়, তাহা যে কেবল ভাল সাহিত্য নয়, তাহাই নয় ; সাহিত্যে অসুন্দর বা কুৎসিতের স্থানই নাই। কিন্তু যাহা “হিত” বা মঙ্গলের জন্য মূলতঃ বিকশিত, সে “সাহিত্য” যে “সংস্করণে”র উদ্দেশ্যে সৃষ্ট হইলে সুন্দর হইতে পারে না, তাহা স্বীকার করিতে পারি না । যাহা অসুন্দর কুৎসিত, নীচ ও অকল্যাণকর, তাহা দূর করিয়া দিয়া উৎকৃষ্ট সাহিত্যে অতি মহান, কল্যাণপ্ৰদ ও সুন্দর আদর্শ স্থাপিত হয় ; আমরা সাহিত্যের আদর্শে মুগ্ধ হইয়া নীচতার প্রতি আসক্তি অতিক্ৰম করি। একটা উদ্দেশ্যহীন খেয়াল লইয়া প্ৰকৃতির যে কোনও ছবি দর্পণে প্ৰতিফলিত করিয়া লইলেই, কাব্য গড়া যায় না ; সৌন্দৰ্য্যের সৃষ্টি করা যায় না।