পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/১৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্কিম রচনাবলী ছটিল। জয়াচোর, বদমাশ, মাতাল, লম্পট, নিম্পকম্পমা ভাল ধতি চাদর, জাতা ও লাঠিতে অঙ্গ পরিশোভিত করিয়া, চুল ফিরাইয়া, বাবকে সম্ভাষণ করিতে আসিল। মচিরাম তাহাদিগকে কলিকাতার বড় বড় বাব মনে করিয়া তাহাদিগকে বিশেষ আদর করিতে আরম্ভ করিলেন। তাহারাও আত্মীয়তা করিয়া তাঁহার বৈঠকখানায় আড়া করিল-তামাক পোড়ায়, খবরের কাগজ পড়ে, মদ খায়, তাস পেটে, বাজনা বাজায়, গান করে, পোলাও ধবংসায় এবং বাবর প্রয়োজনীয় এবং অপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী কিনিয়া আনে। টাকাটায় আপনার বার আনা মনোফা রাখে, বলে দাঁওয়ে যোওয়ে সিকি দামে কিনিয়াছি। উভয় পক্ষের সখের সীমা রহিল না। যে গলিতে মচিরাম বাড়ী লইয়াছিলেন, সেই গলিতে একজন প্রথমশ্রেণীর বাটপাড় বাস করিতেন। তাঁহার নাম রামচন্দ্র দত্ত। রামচন্দ্ৰবাব প্রথমশ্রেণীর বাটপাড়—একটি ব্রামিড বা একখানা কাটলেটের লোভে কাহারও আন গত্য করিবার লোক নহেন। তাঁহার ত্রিতল গহ, প্রস্তরমকুর কাঠ কাচ কাপোেটাদিতে সকুসম উদ্যানতুল্য রঞ্জিত; তাঁহার দরওয়াজায় অনেকগলো দ্বারবান গালিচাল্লা বাঁধিয়া সিদ্ধি ঘোঁটে ; আস্তাবলে অনেকগালি অশ্বের পদধবনি শানা যায়— তিনখানা গাড়ি আছে, সোেণাবাঁধা হকা, হীরাবাঁধা গহিণী, হ্যান্ডনোটে বাঁধা। ইংরেজ খাদক, এবং তাড়াবাঁধা কাগজ-সকলই ছিল। তথাপি তিনি জয়াচোর-জয়াচুরিতেই এ সকল হইয়াছিল। তিনি যখন শনিলেন, টাকার বোঝা লইয়া গ্রাম্য গব্দািভ পাড়ায় আসিয়া চরিয়া বেড়াইতেছে, তখন ভাবিলেন যে, গদ্দভের পাঠ হইতে টাকার বোঝাটি নামাইয়া লইয়া তাহার উপকার করিতে হইবে। আহা! অবোধ পশ! এত ভারি বোঝা বহিবে কি প্রকারে—বোঝাটি নামাইয়া লইয়া তাহার উপকার করি। প্রথম প্রয়োজন, মচিরামের সঙ্গে আলাপ পরিচয়। রামচন্দ্ৰবাব বড়লোক-মচিরামের বাড়ী আগে যাইবেন না। ইঙ্গিত পাইয়া একজন অনচর মচিরামের কাণে তুলিয়া দিল, রামচন্দ্রবাব কলিকাতার অতি প্রধান লোক, আর মচিরামের প্রতিবাসী-মচিরামের সঙ্গে আলাপ করিবার জন্য অতি ব্যস্ত। সতরাং মচিরাম গিয়া উপস্থিত। এইরনুপে উভয়ে উভয়ের নিকট পরিচিত হইলেন। উভয়ে উভয়ের বাড়ী যাতায়াত হইতে লাগিল। ঘন ঘন যাতায়াতে ক্ৰমে সৌহােন্দ্য বদ্ধি। রামচন্দ্রব্যাবর সেই ইচ্ছা! তিনি চতুর, মচিরাম নিবোধ ; মচিরাম গ্রাম্য, তিনি নাগরিক। অলপ কালেই মচিরাম-মৎস্য ফাঁদে পড়িল —রামচন্দ্রের সঙ্গে বন্ধতা করিল। রামচন্দ্র তাঁহার মরবিব হইলেন—মচিরামের নাগরিক জীবনযাত্ৰানিবাহে শিক্ষাগার হইলেন। তিনি নাগরিক জীবননিৰ্ব্ববাহে মচিরামের শিক্ষাগার-কলিকাতারাপ গোচারণভূমে তাঁহার রাখাল-কালীঘাট হইতে চিতপর পর্য্যন্ত, তখন মচিরামবলদ সখের গাড়ি টানিয়া যায়, রামবাব তখন তাহার গাড়োয়ান; সখের ছেকড়ায় এই খোঁড়া টাটটি জড়িয়া রামচন্দ্ৰ পাকা কোচমানের মত মিঠাকড়া চাবক লাগাইতেন। তাঁহার হস্তে ক্ৰমে গ্রাম্য বানর সহরে বানরে পরিণত হইল। কি গতিকের বানর, তাহা নিম্নোদ্ধত পত্রাংশ পড়িলেই বাবা যাইতে পারে। এই সময় তিনি ভজগোবিন্দকে যে পত্র লিখিয়াছিলেন, তাহা হইতে উদ্ধত করা গেল “তোমার পত্রের বিবাহ শনিয়া আহাদ হইল। টাকার তেমন আনকল্যা করিতে পারিলাম না-মাপ করিও । দইখানা গাড়ি কিনিয়াছি-একখানা বেরাষ-একখানা ব্রোিনবেরি। একটা আরবের যাড়িতে ২২oo, টাকা পড়িয়াছে। ছবিতে, আয়নাতে, কারপেটে অনেক টাকা পড়িয়া গিয়াছে। কলিকাতার এত খরচ, তাহা জানিলে কখন আসিতাম না-সেখানে সাত সিকায় কাপড় ও মজরিসমেত আমার একটা চাপিকান তৈয়ার হইত—এখানে একটা চাপিকানে ৮৫ টাকা পড়িয়াছে। এক সেট রপোর বাসনে অনেক টাকা লাগিয়াছে। থাল, বাটি, গেলাস, সে বাসনের কথা বলতেছি না-এ সেট টেবিলের জন্য। বীরকন্যাকে আমার হইয়া আশীৰ্ব্ববাদ করিবে।” এই হলো বানরামি নম্বর এক। তারপর, মচিরাম, কলিকাতায় যে কেহ একটি খ্যাতিযক্তি, তাহারই বাড়ীতে, রামচন্দ্ৰবাবরে পশ্চাতে পশ্চাতে যাইতে আরম্ভ করিলেন। কোন নামজাদা বাব তাঁহার বাড়ীতে আসিলে জন্ম সার্থক মনে করিতেন। কিসে আসে, সেই চেন্টায় ফিরিতেন। S8