পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/১৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিজ্ঞাপন্ন হলঃ “আচায্য বহবিধ উপায়ের দ্বারা বায় অতি পরিপাটী করিয়া ছকিয়া দেখিয়াছেন। তিনি অনেক দেখিয়াছেন যে, তাহাও ধলোয় পরিপািণ। এইরূপ ধলা অদশ্য; কেন না, তাহার কণাসকল অতি ক্ষদ্র। রৌদ্রেও উহা অদশ্য। অণবীক্ষণ যন্ত্রের দ্বারাও অদশ্য, কিন্তু বৈদ্যুতিক প্রদীপের আলোক রৌদ্রপেক্ষাও উত্তজৰল। উহার আলোক ঐ ছাঁকা বায়ার মধ্যে প্রেরণা করিয়া তিনি দেখিয়াছেন যে, তাহাতেও ধলা চিকচিকা করিতেছে। যদি এত যত্নপরিস্কৃত বায়তেও ধলা, তবে সচরাচর ধনী লোকে যে ধলা নিবারণ করিবার উপায় করেন, তাহাতে ধলো নিবারণ হয় না, ইহা বলা বাহল্য। ছায়ামধ্যে রৌদ্র না পড়িলে রৌদ্রে ধলা দেখা যায় না, কিন্তু রৌদ্রমধ্যে উক্তজবল বৈদ্যুতিক আলোকের রেখা প্রেরণ করিলে ঐ ধলা দেখা যায়। অতএব আমরা যে বায় মহতে মহাতে নিশ্বাসে গ্রহণ করিতেছি, তাহা ধালিপািণ । যাহা কিছ ভোজন করি, তাহা ধালিপািণ ; কেন না, বায়স্থিত ধালিরাশি দিবারাত্র সকল পদার্থের উপর বর্ষণ হইতেছে। আমরা যে কোন জল পরিস্কৃত করি না কেন, উহা ধালিপািণ। কলিকাতার জল পলতার কলে পরিস্কৃত হইতেছে বলিয়া তাহা ধালিশন্য নহে। ছকিলে ধলা যায় না। ২ । এই ধলা বাস্তবিক সমদায়ংশই ধলো নহে। তাহার অনেকাংশ জৈব পদাৰ্থ । যে সকল অদশ্য ধন্লিকণার কথা উপরে বলা গেল, তাহার অধিক ভাগ ক্ষমাদ্র ক্ষদ্র জীব। যে ভাগ জৈব নহে, তাহা অধিকতর গরীত্বেবিশিষ্ট; এজন্য তাহা বায়াপরি তত ভাসিয়া বেড়ায় না। অতএব আমরা প্রতি নিশ্বাসে শত শত ক্ষদ্র ক্ষদ্র জীব দেহমধ্যে গ্রহণ করিয়া থাকি; জলের সঙ্গে সহস্ৰ ‘সহস্ৰ পান করি; রাক্ষসবৎ অনেককে আহার করি। লন্ডনের আটটি কোম্পানীর কালে ছাঁকা পানীয় জল টিন্ডল সাহেব পরীক্ষা করিয়া দেখিয়াছেন, এতদ্ভিন্ন তিনি আরও অনেক প্রকার জল পরীক্ষা করিয়া দেখিয়াছেন। তিনি পরীক্ষা করিয়া সিদ্ধান্ত করিয়াছেন যে, জল সম্পণেরিপে পরিস্কার করা মনষ্যে-সাধ্যাতীত। যে জল সাফাটিক পাত্রে রাখিলে বহৎ হীরকখন্ডের ন্যায় স্বচ্ছ বোধ হয়, তাহাও সমল, কীটাণপণ। জৈনেরা একথা সন্মরণ রাখিবেন। ৩। এই সৰ্ব্বব্যাপী ধালিকণা সংক্ৰামক পীড়ার মািল। অনতিপবে সৰ্ব্বত্র এই মত প্রচলিত ছিল যে, কোন এক প্রকার পচনশীল নিজজীব জৈব পদাৰ্থ (Malaria) কত্ত্বক সংক্রামক “পীড়ার বিস্তার হইয়া থাকে। এ মত ভারতবর্ষে অদ্যাপি প্রবল। ইউরোপে এ বিশ্বাস এক ‘প্রকার উচ্ছিন্ন হইতেছে। আচাৰ্য্য টিন্ডল প্রভৃতির বিশ্বাস এই যে, সংক্রামক পীড়ার বিস্তারের কারণ সজীব পীড়াবীজ (Germ) । ঐ সকল পীড়াবীজ বায়তে এবং জলে ভাসিতে থাকে; “এবং শরীরমধ্যে প্রবিন্স্ট হইয়া তথায় জীবজনক হয়। জীবের শরীরমধ্যে অসংখ্য জীবের আবাস। কেশে উৎকুণ, উদরে কৃমি, ক্ষতে কীট, এই কয়টি মনীষা-শরীরে সাধারণ উদাহরণ। পাশ মাত্রেরই “গাত্রমধ্যে কীটসমহের আবাস। জীবতত্ত্ববিদেরা অবধারিত করিয়াছেন যে, ভূমে, জলে বা বায়তে যত জাতীয় জীব আছে, তদপেক্ষা অধিক জাতীয় জীব অন্য জীবের শরীরবাসী। “যাহাকে উপরে “পীড়াবীজ” বলা হইয়াছে, তাহাও জীবশরীরবাসী জীব বা জীবোৎপাদক বীজ। শরীরমধ্যে প্রবিন্স্ট হইলে তদ্যুৎপাদ্য জীবের জন্ম হইতে থাকে। এই সকল শোণিতনিবাসী জীবের জনকতাশক্তি অতি ভয়ানক। যাহার শরীরমধ্যে ঐ প্রকার পীড়াবীজ প্রবিন্স্ট হয়, সে - সংক্ৰামক পীড়াগ্রস্ত হয়। ভিন্ন ভিন্ন পীড়ার ভিন্ন ভিন্ন বীজ। সংক্ৰামক জীবরের বীজে জৰুর উৎপন্ন হয়; বসন্তের বীজে বসন্ত জন্মে ; ওলাওঠার বীজে ওলাওঠা; ইত্যাদি। ৪ । পীড়াবীজে কেবল সংক্রামক রোগ উৎপন্ন হয়, এমত নহে। ক্ষতাদি যে শকায় না, ক্রমে পচে, দিগন্ধ হয়, দরারোগ্য হয়, ইহাও অনেক সময়ে এই সকল ধলিকণার্যপী পীড়াবীজের জন্য। ক্ষতমাখ কখনই এমত আচ্ছন্ন রাখা যাইতে পারে না যে, অদশ্য ধলা তাহাতে লাগিবে না। নিতান্ত পক্ষে তাহা ডাক্তারের অস্ত্ৰ-মখে ক্ষতমধ্যে প্রবেশ করিবে। ডাক্তার যতই অস্ত্র পরিস্কার রােখন না কেন, অদশ্য ধন্লিপিঞ্জের কিছতেই নিবারণ হয় না। কিন্তু ইহার একটি সন্দর উপায় আছে। ডাক্তারেরা প্রায় তাহা অবলম্বন করেন। কাকবলিক অ্যাসিড নামক দ্রাবক বীজঘাতী; তাহা জল মিশাইয়া ক্ষতমখে বর্ষণ করিতে থাকিলে প্রবিন্স্ট বীজসকল মরিয়া যায়। ক্ষতমখে পরিস্কৃত তুলা বধিয়া রাখিলেও অনেক উপকার হয়; কেন না, তুলা বায় -পরিস্কৃত করিবার একটি উৎকৃষ্ট উপায়। SOct