পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/১৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্কিম রচনাবলী ধন্যবান হইবে সন্দেহ নাই। তবে আপনার ক্ষমাদ্র বদ্ধিতে এ সকল গারতের তত্ত্বের মীমাংসা করিব কি প্রকারে ? প্রমাণানসারে। যিনি প্রমাণ দেখাইবেন, তাঁহার কথায় বিশ্বাস করিব। যিনি কেবল আন মানিক কথা বলিবেন, তাহার কোন প্রমাণ দেখাইবেন না, তিনি পিতৃপিতামহ হইলেও তাঁহার কথায় অশ্রদ্ধা করিব। দার্শনিকেরা কেবল অনমানের উপর নিভাির করিয়া বলেন, কি হইতে খ হইয়াছে, গর মধ্যে ঘ আছে ইত্যাদি। তাঁহারা তাহার কোন প্রমাণ নিন্দেশ করেন না; কোন প্রমাণের অন্যাসন্ধান করিয়াছেন, এমত কথা বলেন না, সন্ধান করিলেও কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। যদি কখন প্রমাণ নিন্দেশ করেন, সে প্রমাণও আন মানিক বা কালপনিক, তাহার আবার প্রমাণের প্রয়োজন; তাহাও পাওয়া যায় না। অতএব আজন্ম মািখ হইয়া থাকিতে হয়, সেও ভাল, তথাপি দশন মানিব না। এ দিকে বিজ্ঞান আমাদিগকে বলিতেছেন, “আমি তোমাকে সহসা বিশ্বাস করিতে বলি না, যে সহসা বিশ্বাস করে, আমি তাহার প্রতি অনগ্ৰহ করি না; সে যেন আমার কাছে আইসে না। আমি যাহা তোমার কাছে প্রমাণের দ্বারা প্ৰতিপন্ন করিব, তুমি তাহাই বিশ্বাস করিও, তাহার তিলাদ্ধা অধিক বিশ্বাস করিলে তুমি আমার ত্যাজ্য। আমি যে প্রমাণ দিব, তাহা প্রত্যক্ষ। একজনে সকল কান্ড প্রত্যক্ষ করিতে পারে না, এজন্য কতকগলি তোমাকে অন্যের প্রত্যক্ষের কথা শনিয়া বিশ্বাস করিতে হইবে। কিন্তু যেটিতে তোমার সন্দেহ হইবে, সেইটি তুমি স্বয়ং প্রত্যক্ষ করিও। সব্বদা আমার প্রতি সন্দেহ করিও। দশনের প্রতি সন্দেহ করিলেই, সে ভস্ম হইয়া যায়, কিন্তু সন্দেহেই আমার পন্টি। আমি জীব-শরীর সম্পবন্ধে যাহা বলিতেছি, আমার সঙ্গে শবচ্ছেদ-গহে ও রাসায়নিক পরীক্ষাশালায় আইস। সকলই প্রত্যক্ষ দেখাইব।” এইরপ অভিহিত হইয়া, বিজ্ঞানের গহে গিয়া সকলই প্রমাণ সহিত দেখিয়া আসিয়াছি। সতরাং বিজ্ঞানেই আমাদের বিশ্বাস।” যাঁহারা এই সকল কথা শনিয়া কুত হলবিশিস্ট হইবেন, তাঁহারা বিজ্ঞান মাতার আহবানানসারে তাঁহার শবচ্ছেদ-গহে এবং রাসায়নিক পরীক্ষাশালায় গিয়া দেখান, পঞ ভূতের কি দন্দশা হইয়াছে। জীব-শরীরের ভৌতিক তত্ত্ব সম্পবন্ধে আমরা যদি দাই একটা কথা বলিয়া রাখি, তবে তাঁহাদিগের পথ একটা সংগম হইবে। বিষয়বাহাল্য ভয়ে কেবল একটি তত্ত্বই আমরা সংক্ষেপে ব্যবস্কাইব । আমরা অনামান করিয়া রাখিলাম যে, পাঠক জীবের শারীরিক নিম্পমাণ সম্পবন্ধে অভিজ্ঞ । গঠনের কথা বলিব না-গঠনের সামগ্রীর কথা বলিব। এক বিন্দ শোণিত লইয়া অণবীক্ষণ যন্ত্রের দ্বারা পরীক্ষা কর। তাঁহাতে কতকগলি ক্ষদ্র ক্ষদ্র চক্রাকার বস্তু দেখিবো। অধিকাংশই রক্তবণ এবং সেই চক্রাণাসমহের বর্ণ হেতুই শোণিতের বণ রক্ত, তাহাও দেখিবো। তন্মধ্যে মধ্যে মধ্যে, আর কতকগলি দেখিবে, তাহা রক্তবর্ণ নহে,- বর্ণহীন, রক্ত-চক্রাণ হইতে কিঞ্চিৎ বড়, প্রকৃত চক্রাকার নহে-আকারের কোন নিয়ম নাই। শরীরাভ্যন্তরে যে তাপ, পরীক্ষ্যমাণ রক্তবিন্দ যদি সেইরােপ তাপসংযক্ত রাখা যায়, তাহা হইলে দেখা যাইবে, এই বর্ণহীন চক্রাণসকল সজীব পদার্থের ন্যায় আচরণ করবে। আপনারা যথেচ্ছা! চলিয়া বেড়াইবে, আকার পরিবত্তন করিবে, কখন কোন অঙ্গ বাড়াইয়া দিবে, কখন কোন ভাগ সঙ্কীর্ণ করিয়া লইবে। এইগলি যে পদার্থের সমন্টি, তাহাকে ইউরোপীয় বৈজ্ঞানিকেরা প্রোটােপলাস্টম বা বিওপিলাসমা বলেন। আমরা ইহাকে “জৈবনিক” বলিলাম। ইহাই জীব-শরীর নিশ্চমাণের একমাত্র সামগ্রী। যাহাতে ইহা আছে, তাহাই জীব; যাহাতে ইহা নাই, তাহা জীব নহে। দেখা যাউক, এই সামগ্ৰীটি কি । এক্ষণকার বিদ্যালয়ের ছাত্রেরা অনেকেই দেখিয়াছেন, আচায্যেরা বৈদ্যুতিক যন্ত্রসাহায্যে জল। উড়াইয়া দেন। বাস্তবিক জল উড়িয়া যায় না; জল অন্তহিত হয় বটে, কিন্তু তাহার স্থানে দাইটি বায়বীয় পদাৰ্থ পাওয়া যায়-পরীক্ষক সেই দাইটি পথক পথক পাত্রে ধরিয়া রাখেন। সেই দাইটি পানন্দবার একত্ৰিত করিয়া আগন্ন দিলে আবার জল হয়। অতএব দেখা যাইতেছে যে, এই দাইটি পদার্থের রাসায়নিক সংযোগে জলের জন্ম। ইহার একটির নাম অম্লজান বায়; দ্বিতীয়টির নাম জলজান বায়। যে বায় পথিবী ব্যাপিয়া রহিয়াছে, ইহাতেও অম্লজান আছে। অম্লজান ভিন্ন আর একটি বায়বীয় পদাৰ্থও তাহাতে আছে। সেটি যবক্ষারেও আছে বলিয়া তাহার নাম যবক্ষারজান। হইয়াছে। অন্লজান ও যবক্ষারজান সাধারণ বায়তে রাসায়নিক সংযোগে যক্ত নহে। মিশ্রিত AG. O