পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/২১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্কিম রচনাবলী তখন রামের শোকপ্রবাহ আবার অসম্পবরণীয় বেগে ছটিল। সীতার সেই জ্যোৎয়াময়ী মদমম্বন্ধমণালকলপ দেহলতিকা কোন হিংস্র পশ কর্তৃক বিনষ্ট হইয়াছে, সন্দেহ নাই। এই ভাবিয়া রাম “সীতে! সীতে!” বলিয়া সেই অরণ্যমধ্যে রোদন করিতে লাগিলেন। কখন বা যে কলঙ্কাকুৎসাকারক পৌরজনের কথায় সীতা বিসঙ্জন করায়াছিলেন, তাহাদিগের উদ্দেশে বলিতে লাগিলেন, “আমি অনেক সহ্য করিয়াছি, আমার প্রতি প্ৰসন্ন হও।” বাসন্তী ধৈৰ্য্যাবলম্বন করিতে বলিলেন। রাম বলিলেন, “সখি, আবার ধৈয্যের কথা কি বল ? আজি দ্বাদশ বৎসর সীতাশান্য জগৎ-সীতা নাম পৰ্যন্ত লিপ্ত হইয়াছে—তথাপি বাঁচিয়া আছি-আবার ধৈয্য কাহাকে বলে ?” রামের অত্যন্ত যন্ত্রণা দেখিয়া বাসন্তী তাঁহাকে জনস্থানের অন্যান্য প্রদেশ দেখিতে অনরোধ করিলেন। রাম উঠিয়া পরিভ্রমণ করিতে লাগিলেন। কিন্তু বাসন্তীর মনে সখীবিসঙ্গজনিদঃখ জীবলিতেছিল—কিছতেই ভুলিলেন না। বাসন্তী দেখাইলেন;- আসিমন্নেব লতাগাহে ত্বমভাব্যস্তন্মাগদত্তেক্ষণঃ স্যা হংসৈঃ কৃতকৌতুকা চিরমভুদ্গোদাবরী সৈকতে। আয়ান্ত্যা পরিদম নায়িতমিব ত্বাং বীক্ষ্য বদ্ধস্তয়া কান্তৰ্য্যাদরবিন্দকুটিলানিভো ম্যান্ধঃ প্ৰণামাঞ্জলিঃ।। (১) আর রাম সহ্য করতে পারিলেন না। ভ্ৰান্তি জন্মিতে লাগিল। তখন উচ্চৈঃস্বরে রাম ডাকিতে লাগিলেন, “চান্ডি জানকি, এই যে চারি দিকে তোমাকে দেখিতেছি।-কেন। দয়া কর না ? আমার বক ফাটিতেছে; দেহবন্ধ ছিড়িতেছে ; জগৎ শান্য দেখিতেছি; নিরন্তর অন্তর জবলিতেছে; আমার বিকল অন্তরাত্মা অবসন্ন হইয়া অন্ধকারে ডুবিতেছে; মোহ আমাকে চারি দিক হইতে আচ্ছন্ন করিতেছে; আমি মন্দভাগ্য—এখন কি করিব ?” বলিতে বলিতে রাম মচ্ছিত হইলেন। ছায়ারপিণী সীতা তমসার সঙ্গে আদ্যোপান্ত নিকটে ছিলেন। বাসন্তী রামকে পীড়িত করিতেছেন দেখিয়া, সীতা পািনঃ পািনঃ তাঁহাকে তিরস্কার করিতেছিলেন-কত বার রামের রোদন শনিয়া। আপনি মৰ্ম্মম পীড়িত হইতেছিলেন, আবার সীতা রামচন্দ্রের দঃখের কারণ হইলেন বলিয়া, কত কাতরোক্তি করিতেছিলেন। আবার রামকে মচ্ছিত দেখিয়া সীতা কাঁদিয়া উঠিলেন, “আৰ্য্যপত্র! তুমি যে সকল জীবলোকের মঙ্গলাধার! তুমি এ মন্দভাগিনীকে মনে করিয়া বার বার সংশয়িতজীবন হইতেছ? আমি যে মলেম।” এই বলিয়া সীতাও মচ্ছিতাপ্রায় ! তমসা এবং বাসন্তী তাঁহাকে উঠাইলেন। সীতা সসম্মন্দ্রমে রামের ললাট সপেশ করলেন। কি সপশ সখি! রাম যদি মৎপিন্ড হইয়া থাকিতেন, তাহা হইলেও তাঁহার চেতনা হইত। আনন্দনিমীলিতলোচনে সম্পশািসখি অন্যভব করিতে লাগিলেন, তাঁহার শরীরধাতু অন্তরে বাহিরে অমতময় প্রলেপে যেন লিপ্ত হইল-জ্ঞান লাভ করিলেও আনন্দেতে আর এক প্রকার মোহ তাঁহাকে অভিভূত করিল। রাম বাসন্তীকে বলিলেন, “সখি বাসিন্তি! বঝি অদম্পট প্রসন্ন হইল!” বাসন্তী। কিসে? রাম। আর কি সখি! সীতাকে পাইয়াছি। বাসন্তী। কৈ তিনি ? রাম। এই যে আমার সম্পম খেই রহিয়াছেন। বাসন্তী। মন্মভেদী প্ৰলাপ বাক্যে আমি একে প্রিয়সখীর দঃখে জবলিতেছি, তাহাতে আবার এমনতর এ হতভাগিনীকে কেন জীবালাইতেছেন ? রাম বলিলেন, “সখি, প্ৰলাপ কই? বিবাহকালে বৈবাহিক মঙ্গলসন্ত্রযক্ত যে হাত আমি ধরিয়াছিলাম-আর যে হাতের অমতশীতল স্বেচ্ছালন্ধ সখিসপোশে চিনিতে পারিতেছি, এ ত শ্ৰেষ্ট যুক্ত দুই তুহিনসদৃশ, বর্ষশক্রিতুল্য শীতল, কােমল লবলবিক্ষের নবাঞ্চুরতুল্য হন্তই পাইয়াছি।” (১) সীতা গোদাবরী সৈকতে হংস লইয়া কৌতুক করিতে করিতে বিলম্পিব করিতেন তখন তুমি এই লতাগহে থাকিয়া তাঁহার পথ চাহিয়া রহিতে। সীতা আসিয়া তোমাকে বিশেষ দাম্মািনয়মান দেখিয়া, তোমাকে প্ৰণাম করিবার জন্য পদমকলিকা তুল্য অঙ্গলির দ্বারা কি সন্দির অঞ্জলিবন্ধ করিতেন! NA 8