পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/২২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্কিম রসুনানিল । পরবত্তীৰ্ণ বৈষ্ণব কবিদিগের মধ্যে বিদ্যাপতি, গোবিন্দদাস, এবং চন্ডীদাসই প্রসিদ্ধ, কিন্তু আরও কতকগালিন এই সম্প্রদায়ের গীতিকাব্যপ্রণেতা আছেন; তাঁহাদের মধ্যে অন্যান চরি৷ পাঁচ জন উৎকৃষ্ট কবি বলিয়া গণ্য হইতে পারেন। ভারতচন্দ্রের রাসমঞ্জরীকে এই শ্রেণীর কাব্য বলিতে হয়। রামপ্রসাদ সেন আর একজন প্ৰসিদ্ধ গীতি-কবি। তৎপরে কতকগলি৷ “কবিওয়ালার" প্রাদাভােব হয়, তন্মধ্যে কাহারও কাহারও গীত অতি সন্দর। রাম বস হার ঠাকুর, নিতাই দাসের এক একটি গীত এমত সন্দর আছে যে, ভারতচন্দ্রের রচনার মধ্যে তত্তল্য কিছ নাই। কিন্তু কবিওয়ালাদিগের অধিকাংশ রচনা আশ্রদ্ধেয় ও অশ্রাব্য সন্দেহ নাই। সকলই নিয়মের ফল। সাহিত্যও নিয়মের ফল। বিশেষ বিশেষ কারণ হইতে, বিশেষ বিশেষ নিয়মানসারে, বিশেষ বিশেষ ফলোৎপত্তি হয়। জল উপরিস্থ বায় এবং নিম্নস্থ পথিবীর অবস্থানসারে, কতকগলি অলংঘ্য নিয়মের অধীন হইয়া, কোথাও বাল্প, কোথাও বন্টিবিন্দ, কোথাও শিশির, কোথাও হিমকণা বা বরফ, কোথাও কুজব্বাটিকারীপে পরিণত হয়। তেমনি সাহিত্যও দেশভেদে, দেশের অবস্থাভেদে, অসংখ্য নিয়মের বশবত্তী হইয়া রপোন্তরিত হয়। সেই সকল নিয়ম অত্যন্ত জটিল, দ্যজ্ঞেয়, সন্দেহ নাই; এ পৰ্যন্ত কেহ তাহার সবিশেষ তত্ত্ব নিরাপণ করিতে পারেন নাই। কোমৎ বিজ্ঞান সম্পবন্ধে যেরপ তত্ত্ব আবিস্কৃত করিয়াছেন, সাহিত্য সম্পবন্ধে কেহ তদ্রপ করিতে পারেন নাই। তবে ইহা বলা যাইতে পারে যে, সাহিত্য দেশের অবস্থা এবং জাতীয় চরিত্রের প্রতিবিম্ব মাত্র। যে সকল নিয়মানসারে দেশভেদে, রাজবিপলবের প্রকারভেদ, সমাজবিপলবের প্রকারভেদ, ধৰ্ম্মম বিপলবের প্রকারভেদ ঘটে, সাহিত্যের প্রকারভেদ সেই সকল কারণেই ঘটে। কোন কোন ইউরোপীয় গ্রন্থকার সাহিত্যের সঙ্গে সমাজের আভ্যন্তরিক সম্পবিন্ধ বক্সাইতে চেণ্টা করিয়াছেন। বকলা ভিন্ন কেহ বিশেষ রূপে পরিশ্রম করেন নাই, এবং হিতবাদ মতপ্রিয় বকলের সঙ্গে কাব্যসাহিত্যের সম্প্ৰবন্ধ কিছ অলপ। মনষ্যচরিত্র হইতে ধৰ্ম্মম এবং নীতি মাছিয়া দিয়া, তিনি সমাজতত্ত্বের আলোচনায় প্রবত্ত। বিদেশ সম্পবন্ধে যাহা হউক, ভারতবর্ষ সম্পবন্ধে এ তত্ত্ব কেহ কখন উত্থাপন করিয়াছিলেন, এমত আমাদের সমরণ হয় না। সংস্কৃত সাহিত্য সম্পবন্ধে মক্ষমলরের গ্রন্থ বহমাল্য বটে, কিন্তু প্রকৃত সাহিত্যের সঙ্গে সে গ্রন্থের সামান্য সম্পবিন্ধ । ভারতবষীয় সাহিত্যের প্রকৃত গতি কি ? তাহা জানি না, কিন্তু তাহার গোটাকত স্থল স্থল চিহ্ন পাওয়া যায়। প্রথম ভারতীয় আৰ্য্যগণ অনায্য আদিমবাসীদিগের সহিত বিবাদে ব্যস্ত; তখন ভারতবষীয়েরা অনায্যকুলপ্রমথনকারী, ভীতিশন্য, দিগন্তবিচারী, বিজয়ী বীর জাতি। সেই জাতীয় চরিত্রের ফল। রামায়ণ। তার পর ভারতবর্ষের অনায্য শত্ৰসকল ক্ৰমে বিজিত, এবং দরপ্রস্থিত; ভারতবর্ষ আৰ্যগণের করস্থ, আয়ত্ত, ভোগ্য এবং মহা সমদ্ধিশালী। তখন আৰ্য্যগণ বাহ্য শত্রর ভয় হইতে নিশ্চিন্ত, আভ্যন্তরিক সমদ্ধি সম্পাদনে সচেস্ট, হস্তগত অনন্ত রত্নপ্ৰসবিনী ভারতভূমি অংশীকরণে ব্যস্ত। যাহা সকলে জয় করিয়াছে, তাহা কে ভোগ করিবে ? এই প্রশেনর ফল আভ্যন্তরিক বিবাদ। তখন আৰ্য্য পৌরষ চরমে দাঁড়াইয়াছে।--অন্য শত্রর অভাবে সেই পৌরািষ পরস্পরের দমনাথ প্রকাশিত হইয়াছে। এই সময়ের কাব্য মহাভারত। বল যাহার, ভারত তাহার হইল। বহ কালের রক্তবাল্টি শমিত হইল। স্থির হইয়া, উন্নতাপ্রকৃতি আৰ্য্যকুল শান্তিসমুখে মন দিলেন। দেশের ধনবদ্ধি শ্ৰীবদ্ধি ও সভ্যতাবদ্ধি হইতে লাগিল। রোমক হইতে ব্যবদ্বীপ ও চৈনিক পয্যন্ত ভারতবর্ষের বাণিজ্য ছটিতে লাগিল; প্রতি নদীকালে অনন্তসৌধমালাশোভিত মহানগরী সকল মস্তক উত্তোলন করিতে ' লাগিল। ভারতবষীয়েরা সখী হইলেন। সখী এবং কৃতী। এই সখি ও কৃতিত্বের ফল ভক্তিশাস্ত্র ও দশনশাস্ত্র, এ অবস্থা কাব্যে তােদশ পরিসফট হয় নাই। কিন্তু লক্ষী বা সরস্বতী কোথাও চিরস্থায়িনী নহেন; উভয়েই চঞ্চলা। ভারতবর্ষ ধৰ্ম্মশঙ্খলে এরপ নিবদ্ধ হইয়াছিল যে, সাহিত্যর সগ্ৰাহিণী শক্তিও তাহার বশীভুত হইল। প্ৰকৃতাপ্রকৃত বোধ বিলপ্ত হইল। সাহিত্যও ধৰ্ম্মমানকারী হইল। কেবল তাহাই নহে, বিচারুশক্তি ধৰ্ম্মমমোহে বিকৃত হইয়াছিল-প্রকৃত ত্যাগ করিয়া অপ্রকৃত কামনা করিতে লাগিল। ধৰ্ম্মমই তৃষ্ণা, ধৰ্ম্মই আলোচনা, ধৰ্ম্মই সাহিত্যের বিষয়। এই ধৰ্ম্মমোহের ফল পরাণ। কিন্তু যেমন এক দিকে ধৰ্ম্মেমরি স্রোতঃ বহিতে লাগিল, তেমনি আর এক দিকে বিলাসিতার স্রোতঃ বহিতে লাগিল। তাহার ফল কালিদাসের काद नाकाम है', ' , ' ఎసి,