পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/২৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিবিধ প্ৰবন্ধ-ভালবাসার অত্যাচার কোন সমাজে কখন একেবারে লিপ্ত হয় নাই। দ্বিতীয়াবস্থায় ধৰ্ম্মের অত্যাচার; সামাজিক অত্যাচার; এবং সকল অবস্থাতেই ভালবাসার অত্যাচার। এই চতুৰিবধি পীড়নের মধ্যে, প্ৰণয়ের পীড়ন কাহারও পীড়ন অপেক্ষা হীনবল বা অলপানিস্টকারী নহে। বরং ইহা বলা যাইতে পারে যে, রাজা, সমাজ বা ধৰ্ম্মমবেত্তা, কেহই প্রণয়ীর অপেক্ষা বলবান নহেন বা কেহ তেমন সদাসব্বক্ষণ সকল কাজে আসিয়াই হস্তক্ষেপ করেন না-সতরাং প্রণয়ের পীড়ন যে সব্বাপেক্ষা অনিমেটকারী, ইহা বলা যাইতে পারে। আর অন্য অত্যাচারকারীকে নিবারণ করা যায়, অন্য অত্যাচারের সীমা আছে। কেন না, অন্যান্য অত্যাচারকারীর বিরোধী হওয়া যায়। প্ৰজা, প্রজাপীড়ক রাজাকে রাজ্যচু্যত করে; কখনও মস্তকচু্যত করে। লোকপীড়ক সমাজকে পরিত্যাগ করা যায়। কিন্তু ধমের পীড়নে এবং স্নেহের পীড়নে নিম্প্রকৃতি নাই।-কেন না, ইহাদিগের বিরোধী হইতে প্রবত্তিই জন্মে না। হরিদাস বাবাজি পাঁটার বাটি দেখিলে কখন কখন লাল ফেলিয়া থাকেন বটে, কিন্তু কখন গোস্বামীর সম্মখে মাংসভোজনের ঔচিত্য বিচার করিতে ইচ্ছা করেন না-কেন না, জানেন যে, ইহলোকে যতই কন্ট পান না কেন, বাবাজি পরলোকে গোলোক প্রাপ্ত হইবেন। মনকেষ্য যে সকল অত্যাচারের অধীন, সে সকলের ভিত্তিমল মনষ্যের প্রয়োজনে। জড়পদার্থকে আয়ত্ত না করিতে পারিলে মনষ্যজীবন নিৰ্ব্ববাহ হয় না, এজন্য বাহবিলের প্রয়োজন। এবং সেই জন্যই বাহবিলের অত্যাচারও আছে। বাহবিলের ফল। বদ্ধি করিবার জন্য সমাজের প্রয়োজন ; এবং সমাজের অত্যাচারও সঙ্গে সঙ্গে। যেমন পরস্পরে সমাজবন্ধনে বদ্ধ না হইলে, মনষ্যজীবনের উদ্দেশ্য সসম্পন্ন হয় না, তেমনি পরস্পরে আন্তরিক বন্ধনে বদ্ধ না হইলে, মনষ্যজীবনের সনিকবাহ হয় না। অতএব সমাজের যেরপে প্রয়োজন, প্রণয়েরও তদ্রপ বা ততোধিক প্রয়োজন। এবং বাহবিলের বা সমাজের অত্যাচার আছে বলিয়াই যেমন বাহবিল বা সমাজ মনষ্যের ত্যাজ্য বা অনাদরণীয় হইতে পারে না, প্ৰণয়ের অত্যাচার আছে বলিয়াই তাহাও ত্যাজ্য বা অনাদরণীয় হইতে পারে না। অপিচ। যেমন বাহবিল বা সমাজবলকে অত্যাচারী দেখিয়া তাহাকে পরিত্যক্ত বা অনাদত না করিয়া, মনষ্যে ধর্মের দ্বারা তাহার শমতার চেন্টা পাইয়াছে, প্ৰণয়ের অত্যাচারও সেইরােপ ধৰ্ম্মেমরি দ্বারা শমিত করিতে যত্ন করা কত্তব্য। ধৰ্ম্মেরও অত্যাচার আছে বটে, এবং ধন্মের অত্যাচার শমতার জন্য যদি আরও কোন শক্তি প্ৰব্যক্তি হয়, তাহারও অত্যাচার ঘটিবে; কেন না, অত্যাচার শক্তির সর্বভাব সিদ্ধ। যদি ধৰ্ম্মেমরি অত্যাচার শমতায় সক্ষম কোন শক্তি থাকে, তবে জ্ঞান সেই শক্তি। কিন্তু জ্ঞানেরও অত্যাচার আছে। তাহার উদাহরণ, হিতবাদ এবং প্রত্যক্ষবাদ। এতদভয়ের বেগে মনষাহাদয়সাগরে অনলপ ভাগ চড়া পড়িয়া যাইতেছে। বোধ হয়, জ্ঞান ব্যতীত জ্ঞানের অত্যাচার শাসনের জন্য অন্য কোন শক্তি যে মনষ্যকত্ত্বক ব্যবহৃত হইবে, এক্ষণে এমন বিবেচনা হয় না। সেইরােপ ইহাও বলা যাইতে পারে যে, প্ৰণয়ের দ্বারাই প্ৰণয়ের অত্যাচার শমিত হওয়াই সম্ভব। এ কথা যথাৰ্থ, সবীকার করি। স্নেহ যদি সবাথপরতাশন্য হয়, তবে তাহা ঘটিতে পারে। কিন্তু সাধারণ মনষ্যের প্রকৃতি এইরপ যে, সবার্থপরতাশন্য স্নেহ দলভ। এই কথার প্রকৃত তাৎপৰ্য্য গ্ৰহণ না করিয়া, অনেকেই মনে মনে ইহার প্রতিবাদ করিতে পারেন। তাঁহারা বলিতে পারেন যে, যে মাতা স্নেহবশতঃ পত্রকে অর্থান্বেষণে যাইতে দিল না-সে। কি সবার্থপর ? বরং যদি সবার্থপর হইত, তাহা হইলে পত্রিকে অর্থান্বেষণে দরদেশে যাইতে নিষেধ করিত না; কেন না, পত্র অথোেপাজন করিলে কোন না। মাতা তাহার ভাগিনী হইবেন ?-অতএব ঐরাপ দশনমাত্র আকাঙক্ষী রোহকে অনেকেই অসাবাথ পর স্নেহ মনে করেন। বাস্তবিক সে কথা সত্য নহে -এ স্নেহ অসাবাথািপর নহে। যাঁহারা ইহা অসাবাথািপর মনে করেন, তাঁহারা অর্থপরতাকে সবাৰ্থপরতা মনে করেন; যে ধনের কামনা করে না, তাহাকে সাবাথপরতাশন্য মনে করেন। ধনলাভ ভিন্ন পথিবীতে যে অন্যান্য সখি আছে, এবং তন্মধ্যে কোন কোন সখের আকাংক্ষা ধনাকাঙক্ষা হইতে অধিকতর বেগবতী, তাহা তাঁহারা বঝিতে পারেন না। যে মাতা অর্থের মায়া পরিত্যাগ করিয়া পত্রিমখদশ নসখের বাসনায় পত্রিকে দারিদ্র্যে সমপণ করিল, সেও আত্মসখ। খাজিল। সে অৰ্থজনিত সখি চায় না, কিন্তু পত্রসন্দশনজনিত সখি চায়। সে সখি মাতার, পত্রের নহে; মাতৃদশনজনিত পত্রের যদি সখি থাকে, থােক;-সে। সর্বতন্ত্র, পত্রের প্রবত্তিদায়ক, মাতার নহে। মাতা এখানে আপনার একটি সখি খাজিল-নিত্য পত্রিমখদশনা; তাহার অভিলাষিণী হইয়া SSct