বঙ্কিম রচনাবলী কিছ সৎকাৰ্য্য সিদ্ধ হইয়াছে—তাহা কলে; তাঁহার দ্বারা যে কিছ. অনিষ্ট ঘটিয়াছে, তাহা কলে। তিনি উচ্চ শিক্ষার পোষক ছিলেন বলিয়া বাঙ্গালীমহলে বড় প্রশংসিত; কিন্তু বাঙ্গালীবাবদিগের মত, আসল কথাটা কি, তাহা বাঝেন নাই; কেবল আটকিলসন- সাহেব কল টিপিয়া দিয়াছিলেন বলিয়া কলের পত্তলী সারা উইলিয়ম- গ্রে উচ্চশিক্ষার পোষকতা করিয়াছিলেন, ঘড়ির মরদ ঘড়ি পিটিয়া দিয়া কলে ল্যুকাইয়াছিলেন। এমন নহে যে, সারা জজ- কাম্পেইেবলের সময় কলে শাসন একেবারে ছিল না। শাসনের কল চিরকাল বজায় আছে, যিনি ইচ্ছা, তিনি শাসনকৰ্ত্তা হউন, সে কলা মধ্যে মধ্যে বাতাসে নড়িবে; সকল শাসনকৰ্ত্তাকেই শাসনের কল চালাইয়া কতকগলি কায্য সম্পন্ন করিতে হইবে। তবে সর জজ কাবেল কলে সিদ্ধ তত্ত্বগলি অবশ্যগ্রাহ্য মনে কবিতেন না; ইচ্ছানসারে তাহা ত্যাগ করিতেন: ইচ্ছানসারে তত্তৎস্থানে নািতন সিদ্ধান্ত আদিভট করিতেন। সারা জজ কালেবল কল নিজে চালাইতেন, স্বয়ং কলের অংশ ছিলেন না। বাঙ্গালার ইতিহাস * সাহেবেরা যদি পাখী মারিতে যান, তাহারও ইতিহাস লিখিত হয়, বাঙ্গালার ইতিহাস নাই। গ্রীনলন্ডের ইতিহাস লিখিত হইয়াছে, মাওরি জাতিব ইতিহাসও আছে, যে দেশে গৌড়, তামলিপ্তি, সপ্তগ্রামাদি নগর ছিল, যেখানে নৈষধচরিত গীতগোবিন্দ লিখিত হইয়াছে, যে দেশ উদয়নাচাৰ্য্য, রঘনাথ শিরোমণি ও চৈতন্যদেবের জন্মভূমি, সে দেশের ইতিহাস নাই। মার্শামুনু, টুয়ার্ট প্রভৃতি প্রণীত পত্তিকগলিকে আমরা সাধ করিয়া ইতিহাস বলি; সে কেবল সাধ-পরাণ মাত্র। יירו ן ভারতবষীয়দিগের যে ইতিহাস নাই, তাহার বিশেষ কারণ আছে। কতকটা ভারতবষীয় ভারতবষীয়েরা ঘোরতর দেবভক্ত। বিপদে পড়িলেই দেবতার প্রতি ভয় বা ভক্তি জন্মে। যে কারণেই হউক, জগতের যাবতীয় কক্ষম দৈবান কক্ষপায় সাধিত হয়, ইহা তাঁহাদিগের বিশ্বাস। ইহলোকের যাবতীয় অমঙ্গল দেবতার অপ্রসন্নতায় ঘটে, ইহাও তাঁহাদিগের বিশ্বাস। এজন্য শাভের নাম “দৈব”, অশাভের নাম “দদৈবি”। এরপ মানসিক গতির ফল। এই যে, ভারতবষীয়েরা অত্যন্ত বিনীত ; সাংসারিক ঘটনাবলীর কত্তা আপনাদিগকে মনে করেন না ; দেবতাই সববািন্ত্র সাক্ষাৎ কত্তা বিবেচনা করেন। এজন্য তাঁহারা দেবতাদিগেরই ইতিহাস কীৰ্ত্তনে প্রবত্ত; পরাণেতিহাসে কেবল দেবকীত্তিই বিবত করিয়াছেন। যেখানে মনষ্যেকীৰ্ত্তি বাণিতি হইয়াছে, সেখানে সে মনষ্যেগণ হয় দেবতার আংশিক অবতার, নয় দেবতান গহীত; সেখানে দৈবের সংকীত্তনই উদ্দেশ্য। মনষ্য কেহ নহে, মানষ্যে কোন কায্যেরই কত্তা নহে, অতএব মনষ্যের প্রকৃত কীৰ্ত্তিবাণীনে প্রয়োজন নাই। এ বিনীত মানসিক ভাব ও দেবভক্তি অসমস্তজাতির ইতিহাস না থাকার কারণ। ইউরোপীয়েরা অত্যন্ত গৰিবতো; তাঁহারা মনে করেন, আমরা যাহা করিতেছি, ইহা আমাদিগেরই কীত্তি, আমরা যদি হাই তুলি, তাহাও বিশ্বসংসারে অক্ষয় কীত্তিসাবরােপ চিরকাল আখ্যাত হওয়া কৰ্ত্তব্য, অতএব তাহাও লিখিযা রাখা যাউক। এই জন্য গবিবর্তিত জাতির ইতিহাসের বাহাল্য; এই জন্য আমাদের ইতিহাস নাই। অহঙ্কার অনেক স্থলে মনষ্যের উপকারী ; এখানেও তাই। জাতীয় গবের কারণ লৌকিক ইতিহাসের সন্টি বা উন্নতি; ইতিহাস সামাজিক বিজ্ঞানের এবং সামাজিক উচ্চাশয়ের একটি মলে। ইতিহাসবিহীন জাতির দঃখ, অসীম। এমন দই একজন হতভাগ্য আছে যে পিতৃপিতামহের নাম জানে না; এবং এমন দই এক হতভাগ্য জাতি আছে যে, কীৰ্ত্তিমন্ত পৰবৰ্ণপরিষগণের কীত্তি অবগত নহে। সেই হতভাগ্য জাতিদিগের মধ্যে অগ্রগণ্য বাঙ্গালী । উড়িয়াদিগেরও ইতিহাস আছে। এক্ষণে বাঙ্গালার ইতিহাসের উদ্ধার কি অসম্ভব ? নিতান্ত অসম্ভব নহে। কিন্তু সে কাৰ্য্যে
- প্রথমশিক্ষা বাঙ্গালার ইতিহাস। শ্ৰী রাজকৃষ্ণ মখোপাধ্যায়, এম এ, বি এল, বিরচিত। মেসিয়াস জে জি চাটধর্য্যা এন্ড কোং কলিকাতা। বঙ্গদর্শন ১২৮১৷৷
○○○。
