পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৭৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ৰঙ্কিম রচনাবলী যদি তাই হয়, তাহা হইলে এই শ্লোকের অর্থ এই বঝিতে হয় যে, বেদোক্তাদি যজ্ঞাদি করিবে, কিন্তু সেই সকল যজ্ঞের ফল সবগাদি, সেই সবগাদির কামনা করিবে না। এইরপ অৰ্থ চিরপ্রচলিত বলিয়া সশিক্ষিত ইংরেজিনবিশেরাও এইরূপ অৰ্থ বঝিয়াছেন। সপন্ডিত কাশীনাথ ব্ল্যািবক তেলাঙা ইহার পািৰব-শ্লোকের টীকায় লিখিয়াছেন, “The Vedas . . . prescribe particular rites and ceremonies for going to heaven or destroying an enemy &c. But, says Krishna, man's duty is nuerely to perform the actions prescribed for him among these, and not entertain desires for thc special benefits named.' যদি কৰ্ম্মম: শব্দের এই অর্থ হয়, তবে পাঠককে একটি গোলযোগে পড়িতে হইবে। পাঠক বলিলেন যে, যে কম্পেমর ফল সবগাদি, অন্য কোন প্রয়োজন নাই, যদি সে ফলই কামনা না করিলাম, তবে সে কমই করিব কেন ? নিস্কাম কাম্য কম কিরাপ ? কাম্য কৰ্ম্ম নিৰ্ভকাম হইয়াই বা করি কেন ? অতএব দেখা যাইতেছে যে, কৰ্ম্মম অর্থে বেদোক্তাদি কাম্য কৰ্ম্ম বঝিলে আমরা কোন বোধগম্য তত্ত্বে উপস্থিত হইতে পারি না। আর বেদোক্ত কাম্য কৰ্ম্ম গীতোক্ত নিকাম কন্মের উদ্দিন্ডটি নহে, তাহা গীতার তৃতীয় অধ্যায়ের আলোচনায় অতি সপস্ট প্রতীয়মান হয। ঐ তৃতীয় অধ্যায়ের নামই “কম্পমাযোগ” । ইহাতে কম সম্পবন্ধে কথিত হইয়াছে ন হি কশিচৎ ক্ষণমপি জাতু তিস্ঠত্যকৰ্ম্মম কৃৎ । কাৰ্য্যতে হ্যবশঃ কৰ্ম্ম সব্ব প্রকৃতিজৈগণৈঃ ৷ ৫ ৷৷ “কেহ কখন ক্ষণমাত্ৰ কৰ্ম্মম না করিয়া থাকিতে পারে না ; কেন না, প্রকৃতিজা বা স্বাভাবিক গণে সকলকেই কক্ষমা করিতে বাধ্য করে।” এখন দেখা যাইতেছে, বেদোক্ত যজ্ঞাদি সম্পবন্ধে এ কথা কখনই বলা যায় না। কেবল সচরাচর যাহাকে কম বলি-যাহাকে ভাষায় কাজ এবং ইংরেজিতে action বলে, তাহার সম্পবন্ধেই কেবল এ কথা বলা যাইতে পারে। কেহ কখন কাজ না করিয়া থাকিতে পারে না, অন্য কোন কাজ না করােক, সাবভাব বা প্রকৃতির (Nature) বশীভূত হইয়া কতকগলি কাজ অবশ্য করিতে হইবে। যথা-অশন, বসন, শয়ন, শ্বাস, প্রশ্বাস ইত্যাদি। অতএব সম্পন্টই কলম শবেদ বাচা, যাহাকে সচরাচর কম বলা যায়, তাহাই; যজ্ঞাদি নহে। পােনশচ ঐ অধ্যায়ের ৮ম শ্লোকে কথিত হইতেছে নিয়তং কুর, কৰ্ম্ম ত্বং কম্পম জ্যায়ো হ্যাকমািণঃ। শরীর যাত্ৰাপি চ তে ন প্রসিধ্যেদকমণঃ ৷ “তুমি নিয়ত কম কর; কন্ম অকৰ্ম্মম হইতে শ্রেষ্ঠ; অকলোিম তোমার শরীর যাত্ৰাও নির্বাহ হইতে পরিবে না।” এখানেও নিশ্চিত কৰ্ম্মম সব্বাবিধ কম বা ‘কাজ’ :- যজ্ঞাদি নহে। যজ্ঞাদি ব্যতীত সকলেরই শরীর যাত্রা নিববাহ হইতে পারে ও হইয়া থাকে, কেবল কাজ বা Action যাহাকে সচরাচর কম। বলা যায়, তাহা ভিন্ন শরীর যাত্রা নিববাহ হয় না। এবংবিধ প্রমাণ গীতা হইতে আরও উদ্ধত করা যাইতে পারে।* প্রমাণ নিন্দোন হইলে, এক প্রমাণই যথেষ্ট। অতএব আর নিম্প্রয়োজনীয়। অতএব ইহা সিদ্ধ যে, কম্পমাযোগ ব্যাখ্যায় কম অর্থে সচরাচর যাহাকে কম বলা যায়, অর্থাৎ কাজ বা action তাহাই ভগবানের অভিপ্রেতি :-বৈদিক যজ্ঞাদি নহে।

  • পক্ষান্তরে অল্টমাধ্যায়ে, “ভুতভাবোস্তবকরো বিসগঃ কমসংজ্ঞিতঃ” ইতি বাক্যও আছে। তাহার প্রচলিত অর্থ যজ্ঞ পক্ষে বটে। কিন্তু সেই প্রচলিত অৰ্থও যে ভ্ৰমাত্মক, বোধ করি পাঠক তাহা পশ্চাৎ বঝিতে পরিবেন। আমি বাবাইব, এমন কথা বলি না-পাঠক সহজেই বঝিবেন। এবং ইহাও সবীকার করিতে আমি বাধ্য যে, কখন কখন গীতাকেও কম শব্দে বৈদিক কাম্য কম বঝায়, যথাএই যে অধ্যায়ের ৪৯ শ্লোকে, “দরেণ। হ্যবরং কলম”। কিন্তু এখানেও অপটিই বঞ্চিা যায়, এ ‘কমেরি” সঙ্গে কিস্মিযোগের বিরদ্ধে ভাব। গীতায় অনেকগলি শব্দ ভিন্ন ভিন্ন অর্থে স্থানে স্থানে ব্যবহৃত হইয়াছে, ইহা পর্বেই বলিয়াছি।

Գ Օձ,