পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৮১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেবতত্ত্ব ও হিন্দুধৰ্ম্ম छिन्निक्षन्श्ञ* সম্প্রতি সশিক্ষিত বাঙ্গালিদিগের মধ্যে হিন্দধমের আলোচনা দেখা যাইতেছে। অনেকেই মনে করেন যে, আমরা হিন্দধমের প্রতি ভক্তিমান হইতেছি। যদি এ কথা সত্য হয়, তবে আহমাদের বিষয় বটে। জাতীয় ধমের পািনজজীবন ব্যতীত ভারতবর্ষের মঙ্গল নাই, ইহা আমাদিগের দািঢ় বিশ্বাস। কিন্তু যাঁহারা হিন্দধমের প্রতি এইরপ অন্যরাগব্যক্তি, তাঁহাদিগকে আমাদিগের গোটাকত কথা জিজ্ঞাস্য আছে। প্রথম জিজ্ঞাসা, হিন্দধৰ্ম্ম কি ? হিন্দয়ানিতে অনেক রকম দেখিতে পাই। হিন্দী হাঁচি পড়িলে পা বাড়ায় না, টিকটিকি ডাকিলে “সত্য সত্য” বলে, হাই উঠিলে তুড়ি দেয়, এ সকল কি হিন্দধৰ্ম্ম ? অমক শিয়রে শইতে নাই, আমােক আস্যে খাইতে নাই, শান্য কলসী দেখিলে যাত্ৰা করিতে নাই, আমােক বারে ক্ষৌরী হইতে নাই, অমক বারে আমাক কাজ করিতে নাই, এ সকল কি হিন্দধৰ্ম্ম ? অনেকে স্বীকার করিবেন যে, এ সকল হিন্দধৰ্ম্ম নহে। মাখের আচার মাত্র। যদি ইহা হিন্দধৰ্ম্মম হয়, তবে আমরা মক্তকণ্ঠে বলিতে পারি যে, আমরা হিন্দধমের পািনজজীবন চাহি না।” এহ্মণে শনিতে পাইতেছি যে, হিন্দধমের নিয়মগালি পালন করিলে শরীর ভাল থাকে। যথা একাদশীর ব্রত সর্বাস্থ্যরক্ষার একটি উত্তম উপায়। তবে শরীররক্ষার ব্ৰতই কি হিন্দধম ? আমরা একটি জমিদার দেখিয়াছি। তিনি জাতিতে ব্রাহ্মণ এবং অত্যন্ত হিন্দ। তিনি অতি প্রত্যুষে গাত্ৰোখান করিয়া কি শীত কি বর্ষা প্রত্যহ প্ৰাতঃস্নান করেন এবং তখনই পজাহিকে বসিয়া বেলা আড়াই প্রহরী পৰ্যন্ত অনন্যমনে তাহাতে নিযক্ত থাকেন। পজাহিকের কিছমাত্র বিঘা হাঁটলে, মাথায় বজাঘাত হইল, মনে করেন। তার পর অপরাহে নিরামিষ শাকান্ন ভোজন করিয়া একাহারে থাকেন-ভোজনান্তে জমিদারী কায্যে বসেন। তখন কোন প্রজার সববনাশ করিবেন, কোন অনাথা বিধবাব সবসব কাড়িয়া লইবেন, কাহার ঋণ ফাঁকি দিবেন, মিথ্যা জাল করিয়া কাহাকে বিনাপরাধে জেলে দিতে হইবে, কোন মোকদ্দমার কি মিথ্যা প্রমাণ প্রস্তুত করিতে হইবে, ইহাতেই তাঁহার চিত্ত নিবিভ্ৰাট থাকে, এবং যত্ন পৰ্য্যাপ্ত হয়। আমবা জানি যে, এ ব্যক্তির পজা আহিকে, ক্রিয়া কমে দেবতা ব্ৰাহ্মণে আন্তরিক ভক্তি, সেখানে কপটতা কিছ নাই। জাল করিতে করিতেও হরিনাম করিয়া থাকেন। মনে করেন, এ সময় হরি-সমরণ করিলে এ জাল করা আমার অবশ্য সাৰ্থক হইবে। এ ব্যক্তি কি হিন্দ ? আর একটি হিন্দরে কথা বলি। তাঁহার অভক্ষ্য প্রায় কিছই নাই। যাহা অস্বাস্থািকব, তাহা ভিন্ন সকলই খান। এবং ব্রাহ্মণ হইয়া এক আধটা সারাপান পয্যন্ত করিয়া থাকেন। যে কোন জাতির অন্ন গ্রহণ করেন। যবন ও স্পেলচ্ছের সঙ্গে একত্র ভোজনে কোন আপত্তি করেন না। সন্ধ্যা আছিল্ক ক্রিয়া কম কিছই করেন না। কিন্তু কখন মিথ্যা কথা কহেন না। যদি মিথ্যা কথা কাহেন, তবে মহাভারতীয় কৃষ্ণোক্তি সমরণপৰিবাক যেখানে লোকহিতাৰ্থে মিথ্যা নিতান্ত প্রয়োজনীয়-অর্থাৎ যেখানে মিথ্যাই সত্য হয়, সেইখানেই মিথ্যা কথা কহিয়া থাকেন। নিম্পাকাম হইয়া দান ও পরিহিত সাধন করিয়া থাকেন। যথাসাধ্য ইন্দ্ৰিয় সংযম এবং অন্তরে ঈশ্বরকে ভক্তি করেন। কাহাকে বণাঞ্চনা করেন না, কখন পরসব কামনা করেন না। ইন্দ্রিয়াদি দেবতা আকাশ্যাদি ঈশ্বরের মাত্তি স্বরপ এবং শক্তি ও সৌন্দয্যের বিকাশ সাবরােপ বিবেচনা করিয়া, সে সকলের মানসিক উপাসনা করেন। এবং পরাণকথিত শ্ৰীকৃষ্ণে সব্ব গণসম্পন্ন ঈশ্বরের প্রকৃতি পৰ্য্যালোচনা করিয়া আপনাকে বৈষ্ণব বলিয়া পরিচিত করেন। হিন্দধৰ্ম্মানসারে গরজনে ভক্তি, পত্র কলাত্রাদির সন্নোহ প্রতিপালন, পশ্যর প্রতি দয়া করিয়া থাকেন। তিনি অক্রোধ ও ক্ষমাশীল। এ ব্যক্তি কি হিন্দ? এ দই ব্যক্তির মধ্যে কে হিন্দ ? ইহাদের মধ্যে কেহই কি

  • পন্ডিত শশধর তােকাঁচড়ামণি মহাশয় যে-হিন্দধৰ্ম্মম প্রচার করিতে নিযক্ত, তাহা আমাদের মতে কখনই টিকিবে না, এবং তাঁহার যত্ন সফল হইবে না। এইরপ বিশ্বাস আছে বলিয়া, আমরা তাঁহার কোন কথার প্রতিবাদ করিলাম না।

GG V.